Thursday, June 4, 2020

অপেক্ষার ভালোবাসা

আজ নিয়নের বিয়ে, সকলের মনেই আনন্দ শুধু নিয়ন যেনো কেমন। বিয়ে বেশি দুর কারো সাথেই না তারই খালাতো বোন ফারিয়ার সাথে।  পারিবারিক ভাবে বিয়ে হচ্ছে, নিয়নের মত ছিলোনা বিয়েতে কিন্তু পরিবারের সকলের ইচ্ছায় বিয়ে হচ্ছে। নিয়ন বাধা দিতেও পারবেনা।

যাই হোক, শেষ পর্যন্ত নিয়নের সাথে ফারিয়ার বিয়ে হয়ে যায়। ফারিয়াকে অপরুপ লাগছে দেখতে। নিয়ন দেখছে কিন্তু মনের ভেতরের জিদ টা মাথা চাড়া দিচ্ছে। আর জিদ হবেই বা না কেনো। নিয়ন অত্যন্ত মেধাবী একটা ছেলে সে জাপান থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে এসে দেশে অত্যাধুনিক একটা কোম্পানিতে সিনিয়র অফিসার হিসেবে জব করে। অথচ তাকে কিনা বিয়ে করতে হচ্ছে গ্রামের এক সাধারণ মেয়েকে, তার মা বাবা যে কি বুঝে এটাই নিয়ন বুঝেনা। মেয়েটির হাতে মেহেদির লাল রং দুই হাত লাল টুকটুক করছে, কেমন নিয়নের হাত ধরে বসে আছে, নিয়নের খুবই অস্বস্তি বোধ করছে কিন্তু কিছুই বলার নেই এখন, কারন ফারিয়া তার বিয়ে করা বউ।
                                   

বিয়ের পর্ব শেষ হলে কান্নাকাটি করতে করতে বউ বরের হাত ধরেই পাশের বাড়ি মানে বরের বাড়ি হেটে এসে উঠলো। নিয়নের রুমটিও সাজানো হয়েছে কাগজ কেটে কেটে, এক তলা ছাদের ঘর। ফারিয়া খাটের উপর বসে আছে ঘোমটা দিয়ে, নিয়ন এসে পাশে বসে কিন্তু ঘোমটা ও তুলেনা, মেয়েকে দেখেও না। রাত ১২ টা বেজে গেলে ফারিয়া বলে, ঘুমাবা না তুমি, আমার ঘুম পাচ্ছে। এ কথা শুনে নিয়নের মেজাজে যেনো আঘাত করলো জমানো রাগ। চড়া স্বরে বললো, তোমার ইচ্ছা হলে ঘুমাও আর নয় জেগে থাকো আমার ইচ্ছা হলে আমি ঘুমাবো। ফারিয়া কেপে উঠে অজানা ভয়ে। সে, আগে থেকেই নিয়নকে চিনতো কিন্তু কিছুই করার নেই। সে নিয়নের দিকে পিঠ ফিরিয়ে শুয়ে থাকে, একসময় ঘুমিয়ে যায় কিন্তু কেউ খেয়াল করলে দেখতো যে ফারিয়ার চোখের কোনা থেকে গড়িয়ে পড়া অশ্রু শুকিয়ে লেগে গিয়েছে মুখে।

ছুটি শেষ হলে নিয়ন ঢাকা চলে যাবে একা, কিন্তু নিয়নের বাবা বড়ই ভালো মানুষ তিনি বললেন বিয়ে দিয়েছি তো তোকে যাতে একা কষ্ট করতে না হয়। ঢাকা যা, এক সাথে থাক, বৌ মা সাথে থাকলে কষ্ট কম হবে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাই ফারিয়াকে নিয়ে যায় নিয়ন। গাড়িতে পাশাপাশি ছিট বাসের, ফারিয়া ঘুমিয়ে নিয়নের ঘাড়ে মাথা দেয়, নিয়ন যেনো ফারিয়ার কিছুই সহ্য করতে পারেনা, ইচ্ছা করলে এতটুকু অধিকার ফারিয়াকে দিতে পারতো। কিন্তু না, নিয়ন ফারিয়াকে বলে সোজা হয়ে বসো। ফারিয়া নিয়নের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুই বলেনা। 

মগবাজার দেলু রোডের একটা নিরব বাসা। তিনতলার উপরে, এটিই নিয়নদের। নিয়ন এর সাথে ফারিয়ার জীবনটা একরকম যান্ত্রিক। সে যে নিয়নের বিয়ে করা বৌ এটা শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্কেই প্রমাণ পায় আর কোনো ভাবেই না। 
সেদিন নিয়ন অফিস থেকে এসে গোসলে যায়। নিয়নের নাম্বারে একটা ফোন আসে,, 
ফারিয়া ফোন ধরে বলে, "হেলো", 
ওপাশ থেকে একটা মেয়ে কন্ঠস্বর বলে উঠে, "আন্টি নিয়ন কই"
ফারিয়া থতমত খেয়ে বলে, "ও তো গোসলে গেছে"
রিপ্লে আসে, "ও আসলে বলিয়েন উষা ফোন দিয়েছিলো"
"ওকে" বলে ফোন রাখতে রাখতে ফারিয়া শুনে ওপাশ থেকে কথা বলে চলছে, আন্টি কি ঢাকায় আসলো নাকি কুত্তাটা কারো সাথে রিলেশন করছে। 
ফারিয়ার বুকে একটা শেল বাধার মতো লাগে, সে নিয়নের বিয়ে করা বউ, অথচ তার কথা কি কেউ যানেনা, আর নাই বা জানলো সে আজ অবধি স্ত্রী হিসেবে ভালোবাসার অধিকার পায়নি নিয়নের কাছ থেকে অথচ এমন কে আছে যে কুত্তা বলার অধিকার পেয়ে যায়।
গোসল শেষ করে বেরিয়ে আসতেই ফারিয়া বললো, "শুনছো, উষা নামে কেউ একজন ফোন করেছিলো, ও তোমাকে বকাও দিয়েছে।"
নিয়ন ফারিয়ার মুখে কষিয়ে এক থাপ্পড় মারলো, তোমাকে না বলেছি আমার ব্যাপারে নাক গলাবানা। মেয়েদের এতো বাড়াবাড়ি আমার পছন্দ না।
অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও নিয়ন আজ আর ভাত খেলোনা। না খেয়েই বেরিয়ে গেলো। আর খাবেই বা কেনো। তার আজ দেখা করার কথা ওয়েস্টিন হোটেলে উষার সাথে। উষা হলো তার অফিস কলিগ বয়স নিয়নের সেইম। নিয়ন মাঝে মাঝে ভাবে কেনো যে তার ফারিয়ার সাথে বিয়ে হলো, একটা গ্রাম্য মেয়ে মাত্র ইন্টার পাশ। যদিও ফারিয়া সুন্দরী অনেক কিন্তু কোনোদিন কি পারবে উষার মতো সাজগোজ করতে। আধুনিক সমাজে ফারিয়ার মতো মেয়ে চলেনা, উষার মতো একটা বউ হলে কতই না সুন্দর হতো।
                                                       
উষা ওয়েস্টিনে আসে, একটা জিনস প্যান্ট আর খয়েরি লাল সাথে কালো চেকের একটা শার্ট পরে, শ্যাম্পু করা চুলগুলো উড়ছে, নিয়নের দেখেই চোখ ঘুরে যায়। উষা আসতেই নিয়ন সাথে করে নিয়ে আসা রজনীগন্ধার তোড়টা তাকে দেয়, উষা একটা হাসি দিয়ে বলে আন্টি কবে এসেছে নিয়ন। নিয়ন মনে মনে প্রশান্তি লাভ করে যে ফারিয়া তার বউ এটা উষা বুঝতে পারেনাই। উষার সাজগোজে মনে হচ্ছে হলিউড অভিনেত্রী, নিয়ন তার কথা বলার মুড, ঢঙ সব কিছুতেই মুগ্ধ। সেদিন উষা আর নিয়ন ওয়েস্টিনে ২৫০০ টাকা বিল করে, নিয়ন হাসিমুখে বিল পরিশোধ করে।

এদিকে নিয়ন না খেয়ে চলে যাওয়ার পর ফারিয়ার দুচোখ ফেটে নামে অশ্রুজল। নিয়নের সামনে কান্না করা তার নিষেধ, সে কিছুটা ধার্মিক প্রকৃতির মেয়ে, ইন্টার পর্যন্ত সে তেমন কারো সাথেই মিশেনাই আর প্রেম তো অনেক দুর। আর বিয়ের পর এমন এক জন তার বর যে কিনা তাকে কোনোভাবেই ভালোবাসেনা। শুধুমাত্র কাগজ পত্রে লিখা বউ তাই খাবার দাবার আর পোশাক পরিচ্ছদ দেয় বলেই মনে হয়। শপিং কেমন করে সে সৌভাগ্য ফারিয়ার হয়নি, কারন ফারিয়ার মতো একটা গ্রাম্য মেয়ে তার বউ এটা লোকে জেনে ফেলবে, সেই ভয়ে নিয়ন নিজেই তার ইচ্ছা মত জামা কাপড় কিনে আনে। ফারিয়ার সেগুলো যে পছন্দ হয়না তা নয়, কিন্তু তারও ইচ্ছা হয় নিয়নের সাথে একটু যেয়ে একটা লাল শাড়ি কিনে আনবে, আবার নিয়নকে পছন্দ করে একটা পাঞ্জাবী কিনে দেবে। তার পর দুজনে সেই শাড়ি আর পাঞ্জাবী পরে ব্যালকনিতে বসে বসে গল্প করবে। কিন্তু না সপ্ন সপ্নই থেকে যায়। নিয়ন তো অস্পৃশ্য, ফারিয়া তাকে কিভাবে কাছে পাবে।

সেদিন রাতে ফারিয়ার বমি হয়, নিয়ন খুব বকাবকি করে তোমাকে বলেছিলাম পিল খেতে খাওনি কেনো, যদি কিছু হয়ে যায় তোমার খবর আছে। ফারিয়া ইচ্ছা করেই খায়নি কারন তার তো আর ভালোবাসা নেই, যদি একটা বেবি হয় তবে তাকে নিয়ে অন্তত সময় গুলো কেটে যাবে এটাই ফারিয়ার ইচ্ছা। 

পরদিন নিয়ন অফিসে গেলে, ফারিয়া বাসার নিচে নেমে যায়। বাসার সামনেই ডাক্তার ফারজানা আক্তারের বাসা কাম মিনি ক্লিনিক। তিনি আবার নারী ও শিশু বিষয়ক চিকিৎসক ছিলেন ঢাকা মেডিক্যালের। এখন অবসরে, তিনি একটা মা ও শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র খুলেছেন।  ওখান থেকে ফারিয়া প্রেগনেন্সি চেক করিয়ে আনে। ডাক্তার ফারজানা আক্তার ফারিয়ার পেটে বেবি আছে এটা নিশ্চিত করে খুব খুশি হলেন। ফারিয়ার চোখে অশ্রুজল দেখে কাছে টেনে নিলেন, বললেন বোন আমি সারাদিন শত শত বাচ্চা আর মা'দের সেবা করি, কিন্তু আমার যে মা হওয়ার সৌভাগ্য হয়নাই আর কখনোই হবেনা। 
ফারিয়া ফিরে আসে, আসার সময় বাসার নিচে মুসলিম সুইটস এর দোকান। ফারিয়া এক কেজি মিষ্টি কিনে নেয়। নিয়ন বাবা হতে চলছে আর ফারিয়া মা হতে চলছে এর চেয়ে আর ভালোলাগার কি আছে তার কাছে। 
নিয়ন অফিস থেকে আসবার সময় হয়ে আসতেই ফারিয়া কাপড় পাল্টে একটা শাড়ি পরে নেয়, এই শাড়িটা বিয়ের পর পর নিয়ন দিয়েছিলো। তার পর লাল টুকটুক একটা লিপস্টিক ঠোটে দেয় কানের দুল পরে, চেন পরে গলায়, পায় আলতা দেয়। এগুলো সবই বিয়ের সময়কার। কারন সাজগোজের কিছুই নিয়ন কিনে দেয়না তার কথা হলো গ্রামের মেয়ে তুমি সাজগোজের বোঝো কি। কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে দুই হাত দিয়ে দরজা আগলে ধরে ফারিয়া, নিয়ন বলে কি হইছে, ফারিয়া ঘরে ঢুকে যায় এক হাতে প্রেগিনেন্সি টেস্টের রিপোর্ট এনে নিয়ন কে দেয় আরেক হাতে মিষ্টি দেয়। কিন্তু না বিধি বাম, টেস্টের রিপোর্ট দেখে নিয়ন রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে যায়, বলে আমি মানা করেছিলাম, আমার উপরে অধিকার আনার প্রচেষ্টা,, তুমি যতই চেষ্টা করো নিয়ন কখনোই তোমাকে অধিকার দেবেনা।
ফারিয়া বলে, আমি তো তোমার বউ, আর আমার পেটে তোমারই বেবি।
নিয়ন বলে কখনোই আমি সেটা হতে দেবোনা, কালকেই চলো ডাক্তারের কাছে যাই বাচ্চা ফেলে দিতে হবে। 
ফারিয়া বলে, "আমাকে কোনো অধিকার তুমি না দাও সমস্যা নেই, ভালো না বাসলেও সমস্যা নেই। আমার বাচ্চা হলে আমি গ্রামে চলে যাবো, তোমার পথ আটকাবোনা তুমি যাকে ইচ্ছা তাকে নিয়ে থেকো। কিন্তু এই বাচ্চা নষ্ট করতে দিবোনা। এ আমার সন্তান।"
নিয়নের মুখে হাসি ফুটে, ফারিয়া স্ব-ইচ্ছায় চলে গেলেই তো সে বেচে যায়, তাই বলে, "হ্যা যেদিন চলে যাও, সেদিন এক কেজি মিষ্টি কিনে দিয়ে যেয়ো।"
ফারিয়ার চোখে অকারণেই জল আসে সবসময় কারন, যার কাছে হৃদয়ের ভালোবাসার মূল্য নেই, চোখের জল তার কাছে কোনোই মূল্য রাখেনা। 
------------------------------
ওদিকে নিয়নের প্রমোশন হয়, আয় রোজগার বেড়েছে অনেক। নিয়ন একটা গাড়ি কেনে যদিও সেকেন্ড হ্যান্ড কিন্তু নতুনের মতোই। ফারিয়া গাড়ি দেখে খুব খুশি হয়,, মাঝে মাঝে গাড়িটার গায়ে হাত বুলায়, এত চকচকে একটা ট্যাক্সি। বন্ধ গাড়িতে উঠে বসে থাকে মাঝে মাঝে, নিয়ন ওকে কখনোই গাড়িতে বাইরে নিয়ে যায়না, কারন তার বন্ধুরা দেখে ফেলতে পারে। ফারিয়া গাড়িটার সামনে দাড়ায় আর নিজের ফুলে উঠা পেটে হাত দিয়ে টোকা দিয়ে বলে বাবু দেখো এইটা তোমার বাবার গাড়ি। এই গাড়িতে উঠে আমরা তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো। যদিও ফারিয়া এটা শিউর যে নিয়ন তাদেরকে তুলবেনা, তার পরেও ফারিয়া এভাবেই নিজের বাচ্চার সাথে কথা বলে পেটে হাত বুলিয়ে তার ধারণা তাহলে বাচ্চা সু-ধারণা নিয়ে পৃথিবীতে আসবে।

এ গাড়িতে ফারিয়ার উঠার সৌভাগ্য না হলেও, এখন নিয়নের নিয়মিত ডিউটি হলো অফিসে যাওয়ার সময় উষাকে নিয়ে যাওয়া আর ফেরার সময় উষাকে তার বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসা। উষা সেদিন নিয়নকে একটা নোটবুক কিনে দিয়েছে সাথে এক তোড়া গোলাপফুল। নোটবুকের প্রথম পেজেই সুন্দর করে লিখে দিয়েছে, "Neon, I Love You. You are my life_ Usha" নিয়ন এটা দেখে চরম পুলকিত। উষাকে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে যাবে বলে পরিকল্পনা করতে থাকে নিয়ন। 
ওদিকে, ফারিয়ার অবস্থা খুবই খারাপ বাচ্চা হওয়ার সময় হয়ে আসছে। নিয়নের মা গ্রাম থেকে একটা ছোটো মেয়েকে পাঠিয়েছে সবসময় ফারিয়ার সাথে থাকার জন্য। ফারিয়ার মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় নিয়নের মাকে সব বলতে, কারন তিনি খুবই আন্তরিক। কিন্তু নিয়ন ভয় দেখায় যে যদি ফারিয়া কিছু বলে তবে খুবই খারাপ হবে ব্যাপারটা। সেদিন খুব অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় ডা. ফারজানা আক্তারের মা ও শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে যায়, সাথে গ্রাম থেকে আসা মেয়েটি বলে আপা ভাইয়াকে কি আসতে বলবো। 
ফারিয়া ফোন দেয়, নিয়ন সব শুনে বলে, "আমার অফিসে কাজ আছে, তুমি ওখানে ভর্তি হও। আমি আসতে পারবোনা এখন। অফিসের কাজে জরুরী কক্সবাজার যাচ্ছি।"
ডা. ফারজানা আক্তার ফারিয়াকে জিজ্ঞাসা করেন, "বোন তোমার হাজব্যান্ড কোথায়, তোমাকে সিজার করা লাগবে।" 
ফারিয়া বলে, "আপা, টাকা পয়সা আমার সাথে আছে, উনি আসতে পারবেন না অফিসের কাজে কক্সবাজারে যাচ্ছেন। আপনি যা করার করেন, আমার বেবিটা যেনো ভালো থাকে।"
সে অনুযায়ী কাজ হয়,সিজার করা হয় ফারিয়ার, মেয়ে বেবি হয় তার। এর মাঝেই বুদ্ধিমান মহিলা ড. ফারজানা আক্তার তিনি সব বুঝে যান। তিনিও কষ্ট পান। ওদিকে বেবিটা এত সুন্দর হয়েছে যে তার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছেনা ফারিয়া। সে নার্সকে বলে তার আর তার বেবির একটা ছবি তুলে দিতে। নার্স ছবি তুলে দিলে সেটা নিয়নকে সে মেসেঞ্জারে পাঠায়, আর বলে তুমি মেয়ের বাবা হয়েছো।

ড. ফারজানা আক্তার অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ। ফারিয়া আর তার বেবিকে রিলিজ দেওয়ার সময় বলেন, "আজ তোমাদের রিলিজ দিবো, কিন্তু তোমার হাজব্যান্ড আসবেনা।" 
ফারিয়া অশ্রু আটকাতে পারেনা, সে ফারজানা ম্যাম কে জড়িয়ে ধরে আর বলে, "আমার সে সৌভাগ্য নেই ম্যাম। এই বাচ্চা হয়েছে, এখন আমাকে চলে যেতে হবে ওর বাবাকে ছেড়ে। তিনি আমাকে পছন্দ করেন না। আমাকে বউ হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করেন।" লাল গোলাপের ভালোবাসা
ডা. ফারজানা ফারিয়ার পিঠে হাত রেখে বলেন, "আমি নিঃসন্তান, তুমি আমার বোনের মতো, তুমি না করবানা, তুমি আমার বাসায় চলো। "
ফারিয়া বলে, "ম্যাম আপনাকে আমি বড় আপার মতই দেখি কিন্তু ওর বাবা আসুক, দেখি উনি কি বলেন।" 
ড. ফারজানা বলেন, "ঠিক আছে, ও যদি কথা না শুনে তুমি আমাকে বলিও আমার হাজব্যান্ড উকিল, বুঝাবো তাকে।" 
                                                               
ওদিকে নিয়নের কি আর সময় আছে ফারিয়ার খবর নেয়ার। সে এখন আছে দুনিয়ার স্বর্গে। প্রজাপতির মতো উড়ছে উষাকে নিয়ে। কক্সবাজারে এসে উষাকে নিয়ে একটা হোটেলে উঠেছে যদিও তারা, দুই রুম নিয়েছে, কারন কাবিন নামা ছাড়া এসব হোটেলে এক সাথে থাকতে দেবেনা, আর থাকতে দিলে সবাই মনে করে পতিতা মেয়ে।। তাই নিয়নের পছন্দ নয় ভালোবাসার মেয়েকে পতিতা হতে দিতে। 
রাতের বেলা হোটেলের লজে বসে উষা নিয়নকে বলে, "কি যুগে বাস করি, যেখানে মুখে এত আধুনিকতা আউড়ায় আবার কাবিন নামা না হলে একরুমে থাকলে পতিতা বলে,, এদের কাছে ভালোবাসার মূল্য নেই।"
নিয়ন বলে, "ঠিকই বলেছো, বাংলাদেশের মানুষ আধুনিকতাই বুঝেনা।"
পরদিন ওরা ফিরে আসে, নিয়ন ডিসিশন নিয়ে ফেলেছে এবার বাসায় গিয়ে একটা হেস্ত নেস্ত করে ফারিয়াকে চলে যেতে বাধ্য করবে। ঐ বৌ আর বাচ্চা ওর দরকার নেই, ওরা চলে গেলেই সে বেচে যায়। তার পরেই সে উষাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে, বিয়ে করে ঘরে তুলবে। 

বাসায় ফিরলে ফারিয়া খুব খুশি হয়, বাচ্চাটার মুখে তাকালে মনে হয় আরশে থাকা রব্বুল আল-আমিন সকল স্নেহ মায়া ভরে দিয়েছেন। কিন্তু অহংকার আর জিদের চাদর যে আরো কঠিন এটা না সরা পর্যন্ত কেউ স্নেহ মায়া কিভাবে বোধ করবে। তাই নিয়নের মন নরম হলোনা। সে বললো, অনেক সুন্দর হইছে তোমার বাচ্চা, কিন্তু তুমি অনেক আগে একটা কথা বলেছিলে মনে আছে.........
[ফারিয়া,,, মনে মনে ভাবে এবার বোধ হয় বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বলবে সে কথা মনে রাখার দরকার নেই]
....... কিন্তু না, ফারিয়ার ধারণা ভুল ছিলো, নিয়ন বলে, তোমার কাবিন নামায় লিখা সকল টাকাই দিয়ে দিবো। নিয়ম কানুন যা যা আছে মেনেই ডিভোর্স দিবো৷ টাকার কোনো সমস্যা নেই আমার। 

ফারিয়া বিছানায় লুটিয়ে পড়ে, টাকা দিয়ে কি করবে সে। তার সকল সপ্নই যে ভুল ছিলো তাহলে। সেদিন গভীর রাতে, সে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পরে উঠে, অযু করে, বেবিটার মুখে ঠোটে চুমু খায়, তার কলিজার টুকরা বাবুটা ঘুমাচ্ছে গাল হা করে।
তার পরে, নামাজের পাটিতে বসে, দু-রাকাত নামাজ পড়ে, আল্লাহর কাছে অশ্রুভেজা নয়নে মুনাজাত করে, যে মুনাজাতের কথা কারো কানে পৌঁছায় না। সে আল্লাহকে বলে, "আল্লাহ, এ আমার সন্তান, আল্লাহ কেউ নেই আমার কথা শুনার, আর আমি কাউকে বলবোও না,"............ আরো অনেক কিছুই বলার ছিলো সে কিছুই বলতে পারেনা,,, দুই হাত উপরে তুলেই রাখে কিন্তু ঠোটের ভেতর দিয়ে কোনো কথাই তার বের হয়না,,, শুধু বিয়ের পরের তিনটি বছরের কষ্টগুলো একে একে তার মনে পড়ে আর দুই চোখে নেমে আসে অশ্রুর বন্যা। তার এই মনে আসায় ছিলোনা কোনো বিচারের দাবী, ছিলো শুধুমাত্র একটু ভালোবাসা পাওয়ার আকুতি। যদিও সে হাত তুলে কিছুই বলতে পারেনাই কিন্তু আল্লাহ তো মানুষের অন্তরের খোজ রাখেন। ফারিয়ার অশ্রুভেজা এই প্রার্থণা যাতে ছিলোনা কোনো অবৈধ ভালোবাসার চাওয়া, ছিলো শুধু মাত্রই না পাওয়া ভালোবাসার চাওয়া যা সে অধিকার থাকলেও কখনোই পাইনি। 

ফজরের নামাজ পড়ে বাচ্চাকে দুধ খাইয়ে বাচ্চা কোলে নিয়ে শুয়ে থাকে ফারিয়া, আর নিয়নকে বলে তুমি কাগজপত্র ঠিক করো সমস্যা নেই। নিয়ন খুশিমনে অফিসে যায়, উষাকে হাই বলে, কিন্তু আজকে উষা যেনো একটু কেমন কেমন হয়ে গেছে। উষা বলে নিয়ন তোমাকে আমার কিছু বলার আছে অফিসের পরে একযায়গা বসবো। নিয়ন ভাবে আজ মনে হয় উষা তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে। আর সে এটাও ভেবে নেয় যে উষা বিয়ের প্রস্তাবনা না করলেও নিয়ন নিজেই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে।
অফিসের সময়টা যেনো মোটে কাটতেই চায়না। তার পরে, অফিস শেষ হতেই নিয়ন উষাকে নিয়ে আসে হাতিরঝিলে। এক পাশে বসে, উষা বলে নিয়ন তোমাকে অনেকদিন ধরেই আমার একটা কথা বলার ছিলো, কিন্তু বলতে পারিনি কারন তোমাকে অনেক ভালোলাগতো তাই। তবে বলতেই যখন হবে তখন বলেই দেই, আমার তোমার সাথে রিলেশন রাখা আর পসিবল না। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আমার বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে।
নিয়ন,,, চমকে উঠে আর বলে সমস্যা নেই, আমি আর তুমি এক সাথে বিয়ে করবো পালিয়ে। আমার ইনকাম তো কম নয় একেবারে।
উষা বলে, " না, তোমার সাথে পালালে তো আমাকে অনেক সুযোগ হাতছাড়া করতে হবে। কারন বাবার বন্ধু একজন শিল্পপতি তার ছেলের যে টাকা পয়সা আছে তাতে তোমার মতো ইনকামের দুই চারটা কাজের লোক ও তার থাকতে পারে বলে সম্ভাবনা আছে।
নিয়ন বলে, "তুমি এতো লোভি তো জানতাম না.......
উষা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, " কথা শেষ, দেখে নাও ঐ যে উনি আসছেন, উনার সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।"

নিয়ন, প্রবল রাগে টলতে টলতে উঠে এলো, গাড়ি চালাতে ভালো লাগছেনা তার আর, ইচ্ছা করছে আত্নহত্যা করতে। সে ভেবে নিলো সেটাই করবে। ভাবলো আজ, গাড়ি নিয়ে ট্রাকের নিচে চলে গেলে কেমন হয়, আবার ভাবছে রেল লাইনে যাই। অনেক ভেবে চিন্তে সে রেললাইনেই আত্নহত্যা করবে বলে ভাবলো।।
মগবাজার ক্রসিং এর পাশে গাড়ি রেখে সে লাইন ধরে হাটতে লাগলো ইচ্ছা যে, ট্রেন আসলেই সে লাইনে শুয়ে পড়বে।
এদিকে এক ফকির মহিলা খুব জ্বালাতন করছে তাকে, ক্ষুধা লাগছে ক্ষুধা লাগছে বলে চিল্লাচ্ছে, কোলে একটা ছোট্ট মেয়ে সম্ভবত ওর সন্তান। যাই হোক আজ আত্নহত্যা করতে হবে, তাই এই শুভদিনে ও আর ফকির মহিলাটিকে ফিরালোনা,, বললো আসো, বলে ক্রসিং এর ধারেই একটা ছোট্ট হোটেলে বসিয়ে হোটেল বয়কে বললো ভালো করে মুরগীর মাংস আর রুই মাছ দিয়ে ভাত দাও এদের। ওরা খাচ্ছে আর নিয়ন দেখছে, আর ভাবছে যে উষাকে নিয়ে এক বিকাল বসে ওয়েস্টিনে কেএফসি চিকেন দিয়ে ফ্রাইড রাইস খেয়ে বিল আসে হাজার টাকা। আরো কিছু খেলে এক বিকালেই শেষ হয়ে যায় ২/৩ হাজার টাকা। আর এই হোটেলে বিল আসলো মাত্র ১৯০ টাকা। আর তাতে এই ফকির মহিলা কত সন্তুষ্ট। এর মাঝে একটা ট্রেন চলে গেলো কিন্তু নিয়নের আত্নহত্যার কথা মনে থাকলোনা। ফকির মহিলা খাওয়া দাওয়া শেষ করে দোয়া করলো জোরে জোরে নিয়ন পাশে থেকে সব শুনতে পেলো। ফকির মহিলা দোয়া করছে,, "আল্লাহ যে আমাকে আর আমার বাচ্চাকে খাওয়ালো, তুমি তাকে ফুলের মতো ফুটফুটে একটা মেয়ে বাচ্চা দিয়ো...........।"

নিয়নের মনে কেমন যেনো একটা বাড়ি লাগলো, তার তো একটা মেয়ে হয়েছে, তার বউ কে কখনোই একটুও ভালোবাসেনি সে, কেমনে পারলো সে। কোথা থেকে রাজ্যের ভালোবাসা এসে নিয়নের মনকে আচ্ছন্ন করে ফেললো, সে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এসে, ফারিয়াকে বললো চলো বের হতে হবে। 
ফারিয়া ভাবলো, মনে হয় ডিভোর্স দিতে যাচ্ছে। সে অশ্রুসজল নয়নে শাড়ি পরে বের হলো কোলে বাচ্চা নিয়ে। আজ নিয়ন এসে ড্রাইভারের পাশের ছিটের দরজা খুলে ফারিয়াকে বললো উঠে বসো। 
ফারিয়া, কান্নাভেজা কন্ঠে বললো, "গাড়ির কি দরকার ছিলো, রিকশায় বা সিএনজিতে নিয়ে গেলেই পারতে।"
নিয়ন কিছুই বলেনা, গাড়িতে বসিয়ে এসি চালিয়ে দেয় ফারিয়ার শরীরে খুব ভালো লাগছে, গাড়ির ঠান্ডা আবহাওয়ায় আরাম পেয়ে বাচ্চাটাও ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু ফারিয়ার মনে বইছে ঝড়। 
কিন্তু গাড়ি চলতেছে তো চলতেছেই। ফারিয়ার সম্বিত ফিরে রাস্তার মাইলস্টোন এ লিখা দেখে, নারায়নগঞ্জ। চট্টগ্রামের পথে যাচ্ছে গাড়ি। ফারিয়া ভয় পেয়ে যায়, যে লোকটা তাকে কখনো গাড়িতে করেই নেয়না সে আজ তাকে নিয়ে কই যাচ্ছে। আর সেকি বিশ্বাসের যোগ্য। নাকি বাচ্চা সহ তার কোনো সর্বনাশ হতে যাচ্ছে।
সে নিজের বিপদ নিয়ে ভাবেনা, কিন্তু বাচ্চার কিছু হোক তা কখনোই চায়না। ফারিয়া কান্নাভেজা কন্ঠে বললো, "নিয়ন কোনোদিন কোনো অনুরোধ আমি করিনাই, শুধুমাত্র একটা কথা রাখবে তুমি।"
নিয়ন বলে, "হ্যা বলো"
ফারিয়া বলে, "আমাকে যা খুশি করো, কিন্তু আমার বাচ্চাটার কিছু হোক আমি চাইনা। আমাকে নামিয়ে দাও আমি দুচোখ যেদিকে যায় চলে যাবো কোনোদিন তোমার সামনে আসবোনা।"
নিয়ন আর সহ্য করতে পারেনা, আসলেই তো কি দিয়েছে সে ফারিয়াকে। কিছুই দেইনি। সামান্য তম ভালোবাসাও দেইনি এতদিন। অশ্রু আসে দু-চোখ জুড়ে, গাড়ি এক্সিডেন্ট হতে পারে ভেবে এক পাশে গাড়ি দ্রুত পার্ক করে, তার পর নেমে আসে, নেমে ফারিয়ার পাশের দরজা খুলে বলে, "ফারিয়া নেমে আসো তুমি।" ভয়ার্ত চোখে কিন্তু এক অজানা আশা নিয়ে ফারিয়া নেমে আসে, তার চোখে রাজ্যের ভয় আর নিসীম আকুতি, বাচ্চাটাকে বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেছে। ফারিয়া কিছু বলতে যায়,,,, কিন্তু আর পারেনা, নিয়ন বাচ্চা সহ ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে। ফারিয়া বুঝতে পারেনা কি হইছে কারন সে কোনোদিন তো আর ভালোবাসা পায়নি তাই কিভাবে বুঝবে যে তার কোনো কিছু বলার আছে কিনা আর। ফারিয়া মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে, আর নিয়ন তার মুখ টেনে ধরে ঠোটে, মুখে গালে চুমু খায়। বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিয়ে বাচ্চাটার গালে, মুখে, হাতে, পায়ের পাতায় চুমু খায়। 
নিয়ন ফারিয়াকে বলে, "তুমি কোথায় যাবা ফারিয়া, তুমি যে আমার বউ, আমার ভালোবাসা, এতোদিন তোমাকে চিনতে পারিনি, আগে তো বুঝিনি আমার মনে এতো ভালোবাসা লুকিয়ে আছে তোমার জন্য, কেনো খুঁজে পাইনি। "
ফারিয়াও নিয়নকে জড়িয়ে ধরলো কিন্তু দুই মানব মানবীর বুকের মাঝে একটা ফাকা যায়গা থেকে গেলো, যেখানে স্বজতনে আগলে ধরা আছে আরেকটি উপহার- ফারিয়া আর নিয়নের বেবি। 
ফারিয়া বললো, "আমি তো এই দিনের আশায় ছিলাম, যে একদিন তুমি আমাকে ভালোবাসবে।" 
তার পর ফারিয়াকে আবার গাড়িতে বসিয়ে দেয়, বাচ্চাটাকে ফারিয়ার কোলে বসিয়ে দিয়ে বলে আজ আমরা হানিমুনে যাচ্ছি যাবানা তুমি। 
ফারিয়ার চোখ থেকে মুছে গিয়েছে ভয়, সেখানে আর নেই কোনো দুশ্চিন্তা বরং ফুটে উঠেছে এক পরম নির্ভরতা। গাড়িতে উঠতেই বাচ্চাটা আবার ঘুমিয়ে পড়েছে, ওকে বুকের উপর শুইয়ে রেখে ফারিয়া আবার দুই হাত তুলেছে মহান রব্বের কাছে, আজও ফারিয়া কিছু বলতে পারলোনা, কারন সে কিছু বলতেই পারেনা৷ তবে আজও জল তো বিসর্জন করলো তার দুই চোখ। সেই জলে ছিলো কৃতজ্ঞতার প্রকাশ।

রাস্তার পাশে একটা বড় হাইওয়ে হোটেল দেখে গাড়ি পার্ক করলো নিয়ন। ফারিয়াকে নিয়ে হোটেলে উঠে এলো। ফারিয়াকে বললো কি খাবা তুমি ফারিয়া বললো তোমার যা ইচ্ছা তাই খাওয়াও। ওরা একটা ভি আই পি কেবিনে উঠে বসলো হোটেলের। এই রুমে ভি আই পি গেস্ট দের প্রাইভেসি দেওয়া হয় অনেক খাওয়ার সময় তাই খরচও বেশি। খাবার এলে ফারিয়া হাত ধুতে গেলো। নিয়ন ও হাত ধুলো, তার পরে ফারিয়াকে বললো তুমি খাবারে হাত দেবেনা। ফারিয়া জিজ্ঞাসুনেত্রে চাইলো নিয়নের দিকে, নিয়ন ভাত মেখে, সুন্দর করে ফারিয়াকে বললো হা করো তো, ফারিয়ার চোখে আবারো নামলো অশ্রু জল। আসলে এত দিনের অভুক্ত সে খাবারের জন্য নয় অবহেলায় থেকে থেকে ভালোবাসাহীন জীবনে সে এত ভালোবাসা পাবে ভাবেইনি কখনো। তাই অল্পতেই এত তুষ্টি। নিয়ন নিজ হাতে ফারিয়ার চোখের জল মুছে দিলো। বেবিটা চুকচুক করে দুধ খাচ্ছে চোখ বুজে যেনো কত নির্ভয় সে ফারিয়ার বুকে। আর ফারিয়াও নিয়নের তুলে দেওয়া ভাত হা করে নিচ্ছে আর তার চোখের ভাষায় এটাও ফুটে উঠছে যে নিয়নের কাছে সে কত নির্ভরশীলতার সাথে নিজেকে অর্পন করেছে। 
নিয়নের মনে আজ আর কোনো অতৃপ্তি নেই। সে আজ পরিপূর্ণ খাওয়ানো শেষ করে ফারিয়াকে নিয়ে এসে আবার গাড়িতে বসে, গাড়ি ছুটে চলে কক্সবাজারের দিকে।। এখন ফারিয়ার মনেও ঝড় নেই, সে ভালোবাসার নির্ভরতা খুঁজে পেয়েছে। বেবিটাও আর ঘুমায় নাই, ফারিয়ার চুল নিয়ে খেলছে আপনমনে। নিয়ন বাম হাত দিয়ে বাচ্চাটার মাথার ছোট্ট পাতলা পাটের আশের মতো বাচ্চা চুল টেনে দেয়, বাচ্চাটা হেসে উঠে শব্দ করে। ফারিয়া বেবির হা করে থাকা গালে নিজের নাক মিশিয়ে দিয়ে নিয়নের হাত সরিয়ে দেয় হাত দিয়ে বলে সামনে দেখো গাড়ি চালাও। নিয়ন হেসে হাত সরিয়ে নিয়ে রাস্তায় মনোযোগ দেয়। আজ আর তার মনে কোনো অশান্তি নেই, শুধুই প্রশান্তি, এ যে মহান আল্লাহরই মহিমা, তারই দান ভালোবাসা আর সন্তান দুটাই পেয়ে খুশি দুটি মানব মানবীর মন। 

লেখক দোয়া করেন সকল মানব মানবীর মন অশান্ত মহান রব্ব যেনো তাদের অন্তরকে এভাবেই শান্ত করে দেন। Read More

Writter: Md. Abidur Rahman, MBA, from IBA-DU.
check my facebook business page: https://zee.gl/tjxTARWv

Saturday, May 30, 2020

বৃষ্টিস্নাত জলপদ্ম

শীতের শেষদিকেই আজ নতুন রুমে এসে উঠেছে মাহিম। রুমটি মূলত চিলেকোঠা, অনেক পছন্দ হয়েছে মাহিমের। বাড়িটি দুই তলা, বাড়িটির নাম 'সোনেলা বৃষ্টি' দোতলার সিড়ি দিয়ে উঠে এসে ছাদ পেরিয়ে ছোট্ট ব্যলকনির মতো করে তার সাথেই চিলেকোঠার রুম। তার ব্যালকনি টি দক্ষিণ মুখি, নিচে সুন্দর ঘাট বাধা একটি পুকুর, পুকুর পাড়ে নানা বড় বড় গাছ গাছালির জন্য ছায়া। ব্যালকনির গা ঘেষে দাড়িয়ে আছে একটি বড় কদম গাছ, আর ছাদের আরেক ধার ঘেষে আছে আরেকটি বকুল গাছ। ব্যালকনিতে দাড়ালেই মৃদু বাতাসে মন জুড়িয়ে যায়। তার উপরে আবার ছাদ একটা বোনাস বলেই মনে হচ্ছে তার কাছে, ইচ্ছা হলে বিকেলে হাটা চলা করা যাবে, রাতে বসে আকাশ দেখা যাবে।  এখনকার যুগে জমিদারী স্টাইলে বাড়ি পাওয়া যায়না তার পরেও যশোর মিশনপাড়ার মাঝে এমন বাড়ি, যদিও বর্তমানের মতো কাঠখোট্টা স্টাইলের নয় কিন্তু অনন্য এক শিল্পিমনের পরিচয় পাওয়া যায় বাড়িটির আপাদমস্তকে।

যাই হোক বাড়িটির চিলেকোঠা মাহিম দেখেছিলো পাশের একটি ৫ তলা বিল্ডিং থেকে। তারপর থেকেই, এই চিলেকোঠা ভাড়া পাওয়ার জন্য অনেক কাঠখড় পুড়াতে হয়েছে তাকে, কারন বাড়িওয়ালা ভাড়া দিতে চান নাই কাউকেই। কিন্তু সে এমনই একটি চিলেকোঠা চায় সেটি অনেক কষ্টে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছে বাড়ি মালিক মাসুম সাহেব কে। 
দু একদিনের মাঝেই সে কিছু ফুল গাছ কিনে আনে, হাস্নাহেনা,, কামিনী,, গন্ধরাজ,, বেলি আর দুটি লাল গোলাপের গাছ। ব্যালকনিতে টবে লাগায়। তার পর সেখানে ঝুলিয়ে দেয় তার অতি আদরের ককাটেল পাখিটি। রুমের ভেতরের দেয়ালের চারিদিকে সেটে দেয় কস্টেপ দিয়ে তার ফটোগ্রাফি গুলো। সব মিলিয়ে রুমটা গোছানো শেষ ব্যালকনি সাজানো শেষ করে ফেলে দু তিন দিনের ভেতরেই। বাড়িওয়ালা এসে তাজ্জব বনে যায়, তিনিও বেশ শিল্পের কদর করেন তাই মাহিমের এমন সৃষ্টিশীল মনের পরিচয় পেয়ে বেশ মুগ্ধ হয়ে যান। 
---------------------------------------------------------

বসন্ত কাল পেরিয়ে চলে আসে বৃষ্টির সিজন। এখন প্রায় প্রতি বিকালেই আকাশ কালো করে আসে বৃষ্টি। কদম গাছটিতে ফুল এসেছে। বসন্তের সময় বকুল গাছটিতে অনেক ফুল ফুটেছিলো, ছাদে ঝরে পড়তো রাতে, প্রতিদিন সকালে মাহিম সেগুলো গুছিয়ে মালা বানিয়ে তার রুমে, ব্যালকনিতে ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে। বকুল ফুল এখন আর গাছে নেই কিন্তু ছাদে উঠলেই ফুলের সুবাস পাওয়া যায়। 

আজ সকাল থেকেই বৃষ্টি তাই মাহিম ক্লাসে যায়নি। ও যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছে অনু-জীববিদ্যা নিয়ে। রুমের সামনে ব্যালকনিতে বসে বৃষ্টি দেখেছে সারা বেলা তার পরে বৃষ্টি কমে এসেছে দুপুরে কিন্তু আকাশ মেঘলা আর ঠান্ডা শিতল বাতাসে ওর দু-চোখ জড়িয়ে এলো ঘুম। গভীর ঘুম হলো তার, সন্ধার আগে ঘুম থেকে উঠে গেঞ্জি আর একটি থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে বের হয়ে ব্যালকনিতে এসে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো, বকুল ফুলের মালা যেগুলো ব্যালকনিতে ছিলো একটিও নেই, পাখির খাচাটায় পাখি নেই। এমন চুরি কে করলো। সার্বক্ষণিক গেট অফ থাকে তার উপরে গেটম্যান থাকে আর এই বাড়ি দু-তিনমাসের মাঝে কেয়ারটেকার তফিজ আলি আর মালিক মাসুম সাহেব ছাড়া কাউকেই সে দেখেনি। কারন মাসুম সাহেবের স্ত্রী মারা গিয়েছেন যখন মাসুম সাহেবের ছোটো মেয়ে বৃষ্টি'র বয়স ৩ বছর, তার পর থেকে তিনি আর বিয়ে করেন নাই। তার দুই কন্যা, তারাও ঢাকা থাকে তাই কেই বা থাকে বাসায়। মাহিম এদিক ওদিক তাকিয়ে একটি উপন্যাস পায় হুমায়ুন আহমেদের নাম 'মন্দ্রসপ্তক' বইটির প্রথম পেজ উল্টাতেই বইটিতে সুন্দর করে স্টাইল করে লিখা 'S', মাহিম বুঝতে পারে যার এই বই তার নাম শুরু হয়েছে S দিয়ে আর সেই হয়তো চোর।

সেই রাতে ১০ টার পরে বাড়িমালিক বাসায় আসলে মাহিম অভিযোগ করে এই চুরির, আর বইটিও দেখায়। মাসুম সাহেব বইটি হাতে নিয়ে এদিক ওদিক দেখে বললেন আচ্ছা আমি দেখি কি করা যায়। পরদিন সকালে খুব মন খারাপ নিয়ে ঘুম থেকে উঠেই মাহিম দেখতে পায় ব্যালকনিতে একটি ছোট্ট টুলের উপরে বকুল ফুলের মালা গুলো আর পেপারওয়েট দিয়ে চাপা দেওয়া ছোট্ট একটি চিরকুট যাতে লিখা "স্যরি, পাখিটাকে ছেড়ে দিয়েছি, খুব ভালো পাখিটি। আর আপনার মালা গুলো ফেরত দিয়ে গেলাম_ S"
মাহিমের বুঝে আসলোনা কে এই S, তবে এটা বুঝতে পারলো যেই হোক সে আগে এখানে ছিলোনা। সে আরেকটি চিরকুট লিখলো "পাখিটি ছেড়ে দিয়ে ভালো করেন নি, আর মালা গুলি ফেরত দিয়ে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ, তাই আপনার জন্য দুটি মালা রাখলাম, আর 'S' এর মানেটা যানতে চাই_মাহিম" চিরকুট টা রেখে সে বিকালে বাড়ির সামনে নিচে বাইরে গিয়ে দাড়িয়ে ভাবলো আজ রাতে চিরকুটটা মনে হয় নিয়ে যাবে, কিন্তু এসেই দেখলো চিরকুট টা নেই। সে খুব অবাক হলো, কারন বাইরে গিয়েছে ১০ মিনিট দাড়িয়ে ছিলো রাস্তায় গেটের সামনে কিন্তু কেউ তো ঢুকেনাই বাড়ি তাইলে কি মালা চোর এই বাড়িতেই থাকে। 
যাই হোক পরের দিন সকালে উঠে আবার একটা চিরকুট, তাতে লিখা, "পাখি আকাশে উড়লেই ভালো লাগে তাই ছেড়ে দিয়েছি, আর বকুল মালা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনি কি করেন জানতে পারি কি? _ S
N.B: এই চিঠির জবাব টি ঠিক সন্ধা ৬ টা থেকে ৭ টার ভেতরে লিখে আপনার ব্যালকনির সামনে দিয়ে নিচের জানালা পর্যন্ত ঝুলিয়ে দেবেন।"
মাহিম খুব অবাক হয়ে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে চিঠিটা পড়ছে আর ভাবছে কে এই চোর যে এমন চিঠি লিখছে এই যুগে, হস্তাক্ষর স্পষ্ট মেয়েদের। মাহিম সারাদিন ভেবে ভেবে ৬ টা বাজার দশ মিনিট আগে লিখলো, "শুভেচ্ছা নিবেন,, আমি আপাতত PHD করছি JUST থেকে অনু-জীববিদ্যা নিয়ে। আর বলতে পারেন অকম্মা, প্রকৃতি দেখি, ছবি তুলি আর কবিতা লিখি খেয়াল খুশি মতো। কিন্তু আপনার নাম টা অন্তত বলতে পারতেন, আশা করি জানাবেন।" লিখে ঝুলিয়ে দিলো। 

চিঠি দেওয়া হয়ে গেছে দু তিন দিন হয়ে গেলেও আর জবাব মিললোনা চিঠির। সেদিন বিকালে আকাশ ঘিরে এলো মেঘ প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলো, মাহিম ব্যালকনিতে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিলো আর আনমনে ভাবছিলো কোনো খেয়াল সে রাখেনি কিছুর। হঠাৎ মুখে পানির ঝাপটা পাশ থেকে লাগায় সম্বিত ফিরে পায়। সে তাকিয়ে দেখে একটা ভেজা মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপ, থ্রিপিস পরা, ভিজে শরীরে লেগে গিয়েছে। তার পাশে এসে দাড়িয়ে আছে, দেখে মনে হয় এতক্ষণ ছাদে ভিজছিলো। মাহিম লজ্জা পেয়ে গেলো, বললো, "কে আপনি? আগে তো দেখিনি।"
মেয়েটি বললো, "আমি এতক্ষণ ছাদে বৃষ্টিতে ভিজছিলাম, ঘুরে বেড়ালাম, আপনাকে ডাকলাম কিন্তু কি এমন ভাবছিলেন যে কিছুই খেয়াল নেই।"
মাহিম বললো, "সেটা আপনাকে বলবো কেনো, আপনি কে আগে সেটা বলেন, আর এখানে কিভাবে এলেন।"
মেয়েটি বললো, "আপনি এখানে আমার রুম দখল করে নিয়েছেন আমার ছোটোবেলার অর্ধেক সময়ই এই রুমে কেটেছে, এবারই দেখলাম আপনি দখল দিয়েছেন, আবার আমাকেই উল্টা প্রশ্ন করছেন। কিন্তু আপনি রুমটা অনেক সাজিয়ে রেখেছেন তাই কিছু বলিনাই, নইলে আপনি যখনই আমার বাবার কাছে নালিশ করেছিলেন সেদিনই এই বাসা ছেড়ে দিতে হতো। আর আমি যশোর এখন থাকিনা তাই, থাকলে আপনাকে এই রুম দিতাম ই না।"
মাহিম আমতা আমতা করে বললো, "ও আপনিই তাইলে আমার মালা চুরি করেছিলেন......"
মেয়েটি মাহিমকে থামিয়ে দিয়ে বললো, "চুরি ক্যমনে হয়, আমার গাছ আমার ফুল, আপনি চুরি করে মালা বানিয়েছিলেন, তাও তো ভাগ্য ভালো আপনার আমি ফেরত দিয়েছিলাম।" 
মাহিম বললো, "স্যরি, আমি বুঝতে পারিনি, আপনি সব গুলোই নিয়ে যান সমস্যা নেই, কিন্তু আপনার নামটা কি।"
মেয়েটি বললো, "বাড়ির নামটা কি কখনো দেখেছেন, আর বৃষ্টি আমার ছোটোবোনের নাম"
মাহিম বললো, "ও তাইলে আপনার নাম সোনেলা নিশ্চই।"
মেয়েটি বললো, "হ্যা ঠিক তাই, ভিজবেন বৃষ্টিতে, আসুন ভিজি"
মাহিম বললো, "এখন..... আমি তো বৃষ্টি দেখতে পছন্দ করি, কিন্তু ভিজে তো দেখিনি কখনো।"
সোনেলা বললো, "আসুন ভিজেই দেখুন আজ কেমন লাগে।" 
মাহিম ছাদে এসে এক পাশের হাফ দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়ালো, আর দেখতে লাগলো, সোনেলা ছাদের মাঝে এসে ঘুরে ঘুরে বৃষ্টি সিক্ত হচ্ছে, ভেজা চুল কপাল পিঠ আর ঘাড়ে লেপ্টে আছে। সোনেলা মাঝ ছাদে বসে পড়লো দুই হাতে ছাদে জমা পানি নিয়ে খেলছে মেয়েটা, আর মাহিম অবাক চোখে দেখছে। সে সারাজীবন প্রকৃতি দেখেছে আর ভেবেছে কিন্তু প্রকৃতি যেই নারীকে সাজিয়ে সুন্দর হয় সেই নারীর এমন রুপ সে কখনোই দেখিনি। 
সোনেলা ডাকলো "কি হলো আপনার কি ভিজতে ইচ্ছে হচ্ছেনা, সাতার পারেন আপনি, চলুন না নিচে নেমে পুকুরে সাতার কাটি, বৃষ্টির সাথে সাতার কাটতে খুব ভালো লাগে কিন্তু, একা নামতে ভয় করে।"
মাহিম বললো, "চলুন", সে কিছুতেই আর নিয়ন্ত্রন পাচ্ছেনা, আজ যেনো তার সকল ইচ্ছা শক্তিই রহিত হয়ে গেছে এক অচেনা কোনো আকর্ষণে।
পুকুরে মেয়েটি সাতারের কথা বললেও সাতার সে পারেনা, পুকুরের ঘাট ধরে দুই পা দাপিয়ে সাতার কাটছে। মাহিম দুই পা পানিতে ডুবিয়ে বসে আছে, মেয়েটি বললো আপনি সাতার জানেন  , আসুন আমি আপনাকে দেখাই।
মাহিম বললো, " দেখান",
সোনেলা বললো, "আমার মতো এভাবে ঘাট ধরুন তার পরে আমার মতো পা নাড়ান জলে। "
মাহিম মেয়েটির পাশে এভাবেই ভাসতে লাগলো, মাহিম সাতার জানে ভালোভাবেই কিন্তু ওর পাশে ভাসতে ভালোই লাগছে, সোনেলা মাহিমের ডানে ভাসছে, মাহিম ডান দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। সোনেলা হঠাৎ এদিকে তাকালো, মাহিমের সাথে চোখে চোখ হলো মাহিম লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। সোনেলা হেসে বললো, "চলুন বসি বিশ্রাম নেই, উঠতে হবে।" বলে ঘাটে উঠে বসলো, আর দুই পা পানিতে দিয়ে মাঝ পুকুরে তাকিয়ে থাকলো।
মাহিম বললো, "কি দেখেন, উঠবেন না, ঠান্ডা লেগে যাবে।"
সোনেলা বললো, "ঐ দেখুন পুকুরের মাঝে ফুটেছে লাল পদ্ম, আমি ছোটকাল থেকে দেখে আসি ঐ পদ্ম পরিবারটিকে, আগে একটা নৌকা ছিলো এখানে বৈঠার নৌকা। সেটি নিয়ে আমি ফুল ছিড়তাম, এখন নৌকাও নেই তাই কেউ ফুল আনতেও পারেনা। বাবাকে বলবো, একটা নৌকা কিনে আনতে আবার।"
মাহিম ওর দিকে তাকিয়ে হাসলো, আর বললো, "পদ্মফুল নিবেন আপনি" বলেই পানিতে দুই হাত দিয়ে দ্রুত জল কেটে চলে গেলো মাঝ পুকুরে, সবচেয়ে বড় পদ্মফুলটি তুলে নিয়ে আসলো সোনেলার অবাক চোখের সামনে। এনে ঘাটে সোনেলার পাশের ঘাট ধরে সোনেলার হাতে দিয়ে বললো নিন।
সোনেলা, "ফুল নিলো তার পরে কোলের উপর রেখে দুই হাতে মাহিমের চুল ধরে বললো আপনি সাতার জানেন অথচ বললেন না যে, তবে ধন্যবাদ ফুল এনে দেয়ার জন্য। এখন থেকে যখনই চাইবো তখনই পানিতে নেমে আমার জন্য ফুল এনে দেবেন।"
মাহিম হেসে বললো, "আপনি বললেন যে এভাবে ধরে সাতার কাটতে হয় তাই আপনি যেভাবে আগ্রহ নিয়ে আমাকে শিখালেন, তাই আপনার পাশে তখন আপনার মতোই ভাসলাম। আর এটা আমার ছোটোবেলার শেখা সাতার তাই আপনাকে দেখালাম।"

দুজনেই এর পরে উঠে গেলো উপরে, ততক্ষণে বৃষ্টি নেই তবে আকাশ জুড়ে আছে মেঘ। এমন মেঘেঢাকা কিন্তু বৃষ্টির পরের পরিবেশ ও মাহিমের ভালো লাগে, সোনেলা ঘরে চলে গেলো, মাহিম ও উপরে তার ঘরে এসে শরীর মুছে কাপড় নেড়ে দিয়ে ছাদে এসে দাড়ালো। তার চোখে ভাসতে লাগলো ঘন্টা খানেক আগের ঘটনা, তাকালো ছাদের মাঝে এ যায়গায় সোনেলা মেয়েটা হাত পা ছুড়ে বৃষ্টির পানির সাথে খেলছিলো মেয়েটি। তার সমগ্র অনুভূতি জুড়ে নিয়েছে মেয়েটি, সে কেনো এমন ভাবছে নিজেও জানেনা মাহিম। আজকের পুরো দিনটাই যেনো হয়ে গেছে সোনেলা ময় আর সে যেনো মাঝে মাঝেই দু কানে শুনতে পাচ্ছে সোনেলার উচ্ছল আর তার হাসির শব্দ। কি আশ্চর্য সৌন্দর্য নারীর ভাবছে মাহিম অবাক হয়ে, আগে মাহিম প্রকৃতির রুপ দেখছিলো কিন্তু যেই সোনেলা বাইরে এলো সেই প্রকৃতিই যেনো সোনেলাকে সাজিয়ে দিলো নৈসর্গিক ভাবে যেনো প্রকৃতিই মুগ্ধ চোখে সাজাচ্ছিলো নারীকে। মাহিম হারিয়ে গেলো বৃষ্টি ভেজা অচেনা কারো মাঝে।
--------------------------------------------
দুদিন পর, ভার্সিটিতে অনেক কাজ ছিলো, মাহিমের ফিরতে ফিরতে সন্ধা হয়ে গেলো। এসে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে ছাদে দাড়িয়ে ছিলো, পশ্চিমাকাশ তখনও লাল হয়ে আছে। মাহিমের মনে তখনও দুদিন আগের ঘটনা জটলা পাকিয়ে আছে। ঠোটের কোনে মৃদু হাসি চলে এলো তার, আকাশের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে গুন গুন করতে ভালোই লাগছিলো মাহিমের। 
সোনেলা ছাদে এসে মাহিমকে এ অবস্থায় দেখে তার পাশে এসে বলে হেল্লো শুভ সন্ধা, কেমন আছেন। কি গাচ্ছিলেন গুনগুন করে। 
মাহিম বলে, "তেমন কিছুই না, কিছুই গাচ্ছিলাম না, আকাশটা দেখছিলাম, সন্ধাটাকে উপভোগ করছিলাম মাত্র। আপনি কেমন আছেন"
সোনেলা বলে, "আমি ভালো আছি, সেদিন ফুল তুলে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। চা খাবেন আপনি?"
মাহিম বলে, "আচ্ছা খাওয়া যায়, আপনি বসুন আমার রুমে ইলেক্ট্রিক হিটার আছে চা বানিয়ে আনি।"
চা বানিয়ে নিয়ে এলো মাহিম, সোনেলা চায়ের কাপ নিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়ালো, চায়ের কাপে ঠোট দিয়ে একটু খেয়ে বললো ভালোই তো বানান দেখছি, তো রান্নাও তো নিজ হাতেই করেন মনে হয় তাইনা। আপনার বৌ কোথায় থাকেন?"
মাহিম হাসতে হাসতে বললো, তাই বুঝি, আমার বৌ আসবে কই থেকে এখনো বিয়েই তো করতে পারিনি, আর মা বাবা সেই মাধ্যমিক পড়ার সময়ই মারা গিয়েছেন। তারা বেচে থাকলে বিয়ে হয়ে যেতো। কিন্তু এখন একা ছেলের ঘটকালি আর করবে কে।
সোনেলা বললো, স্যরি, আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আপনার আর কে আছেন। 
মাহিম বললো, "ছোটো বোন আছে, অনার্স শেষ হলে, গত বছর তাকে বিয়ে দিয়েছি। আর যারা আছে তারা নামে মাত্র আত্নীয়, মুল শিকড় না থাকলে কি আর মামা খালু চাচা পরিচয় পাওয়া যায়।"
সোনেলা বললো, "ঠিক ই বলেছেন, থাক অসব আলোচনা, আপনার চা বানানোর হাত কিন্তু প্রশংসনীয়, আমাকে একদিন রান্না করে খাওয়াবেন কিন্তু।
মাহিম বললো, " ওতটা ভালোনা আমার রান্না, ব্যাচেলর মানুষ কোনোরকমে খাই, আপনার পছন্দ হবেনা। আপনি কি করেন সেটা তো কখনো শুনা হলোনা"
সোনেলা বললো, "সে যেমনই হোক আমি খাবো একদিন, আর শুনুন, আমি আপনার মতো এতো পড়ালিখা করিনা, কোনো রকমে প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে অনার্স করছি।"
মাহিম বললো, "খুব ভালো, প্রাইভেট ভার্সিটি মোটেই খারাপ নয়।"
সোনেলা বললো, "আপনার রুম টা একটু দেখতে ইচ্ছে করছে, ব্যালকনি টা এমন সুন্দর করে সাজিয়েছেন তো রুমটাও নিশ্চই সাজানো।"
মাহিম বললো, "কিছুটা আছে, চলুন।"
সোনেলা রুমে ঢুকে চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখে নিলো, তার পর বললো এই সব লাইন লিখে লিখে রেখেছেন অনেক সুন্দর, কিন্তু কার রচনা এগুলো।
মাহিম বললো, "আর বলবেন না, ওগুলো আমার এলোমেলো চিন্তার রচনা।" 
সোনেলা বললো, অনেক সুন্দর হইছে তো, আপনি তো সুন্দর ছবিও তুলেন, আমাকে কিছু ছবি তুলে দিবেন একসময়।
মাহিম বললো, "হ্যা দিবো, কবে তুলবেন আপনি?"
সোনেলা বললো, "কাল বিকালে তুলে দিবেন তাহলে"
মাহিম বললো, "ওকে তাই হবে"
সোনেলা চলে গেলো, পরদিন বিকালে সোনেলা ছাদে এলো একটি শ্যাওলা কালারের শাড়ি সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ পরে, কপালে সবুজে ঘেরা কালো রঙের টিপ। নাকে ছোট্ট একটা নাকফুল, পায়ে নুপুর, কানে একটি বড় সাইজের টপ, আর গলায় পাথরের একটি ডায়মন্ডের লকেট বসানো মালা। 
বিভিন্ন এক্সপ্রেশনে ছবি তুলা শেষ করে মাহিম। সোনেলা ধন্যবাদ দিয়ে চলে যায়। রাতের বেলা মাহিম ঘরে বসে বসে ছবি গুলো দেখছিলো, দেখতে দেখতে তার মনের ভেতর অনুভূতি গুলো কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে, সব হারিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটির গালে হালকা টোল আছে, হাসলে মনে হয় মুক্তো ঝরে, সৃষ্টিকর্তা কত সুন্দর করে এই মোহিনী রুপ দান করেছেন।

কয়েকদিন পর এক সকালে মাসুম সাহেব এসে, মাহিমকে বলেন বাবা কেমন চলছে দিনকাল। তোমার তো খবর নেয়া আমার হয়ে উঠেনা। কাল আমার বড় মেয়ের জন্মদিন, তাই তোমাকে দাওয়াত দিতে এলাম। আমার ছোটো মেয়েটাও আসছে। আর হাতে গোনা কয়েকজন আসবেন তুমিও এসো৷ আজ রাত সাড়ে এগারোটার ভেতরেই পৌঁছে যেয়ো নিচে। মাহিম বললো ঠিক আছে চাচা। মাহিম অনেক ভেবেও ঠিক করতে পারছেনা কি দেওয়া যায় উপহার সোনেলা কে। 

মাহিম ভাবে যে সোনেলা যেদিন এখানে মালা নিতে এসেছিলো উচ্ছল চোর বালিকা (ভাবতেই হাসি ফুটে উঠে মাহিমের ঠোটে) সে অনেক কিছুই চুরি করে ফেলেছে এর মাঝেই, এর মাঝে সবচেয়ে বেশি চুরি করেছে মাহিমের ভাবনা গুলোকে। মাহিম বিকালে লাইব্রেরী থেকে হুমায়ুন আহমেদের একটা বই কিনে আনে বইটির নাম "জলপদ্ম" এনে, বইয়ের কভার পেজের উল্টিয়ে লিখে 
"উপহার, সোনেলার জন্মদিনে _ মাহিম।" তার নিচে কয়েকটি 
লাইন,"যখন বৃষ্টির জল ধারার মতো তোমাকে সিক্ত করে তুলছিলো ঠিক যেনো ভেজা কদম ফুল, বকুলের ফুল থেকেও বেশি মোহিনী। ভাবনার করিডোরে তুমি সেই জলপদ্ম যার জন্য পার হওয়া যায় সাগর সম জল। সিক্ত দেহে তোমায় দেখে হারায় অনুভুতি, তোমার হাসিতে উচ্ছলে হারায় চেতনা। অফুরন্ত তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে যায় বৃষ্টির মাঝে দাড়িয়ে।"
সেদিন রাতে বার্থডে পালনের সময়, মাহিমের দুচোখ বড়ই নির্লজ্জের মতো সোনেলার উপর থেকে সরছিলোনা। মাহিম গিফট টা সোনেলাকে দিয়ে একটু দুরে সরে দাড়িয়ে ছিলো, কিন্তু চোখ তার সোনেলার উপরেই ছিলো। অনেক সুন্দর লাগছিলো তাকে। আজ একটি লাল জরজেটের শাড়ি পরেছিলো, খোলাচুলে তার অর্ধেক মুখ ঢেকে গিয়েছিলো দেখে মাহিমের কাছে যেনো অপ্সরি বলে মনে হচ্ছিলো, সোনেলার বোন বৃষ্টিও অনেক সুন্দর কিন্তু সোনেলার সাথে দাড়ানোয় তাকে ম্রিয়মান বলেই মনে হচ্ছিলো। সোনেলার চোখে চোখ পড়ে যাওয়ায় লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নেয় মাহিম। তার এই ২৯ বছরের বয়সে এই প্রথম সে কোনো নারীকে এত মোহিনী রুপে দেখেছে চোখের আর দোষ কোথায়।

পরদিন বিকালে আবার সোনেলা ছাদে আসে, এসে মাহিমকে ডেকে নেয়, বলে অনেক সুন্দর লিখেছেন তো, আপনার উপহারটি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে, আপনি অনেক সুন্দর লিখেন তো। এক কাপ চা খাওয়াবেন, আপনি। 
মাহিম বলে, "হ্যা খাওয়াবো।" চা বানিয়ে নিয়ে আসে মাহিম, সোনেলা ছোট্ট শব্দ করে চা খায়, মাহিমের কাছে খুব ভালো লাগে সোনেলার চা খাওয়া দেখতে। সোনেলা বলে ওকি কি দেখছেন, চা তো ঠান্ডা হয়ে গেলো, চা খান। 
মাহিম থতমত খেয়ে বলে, জি আচ্ছা" সোনেলা আবারো হেসে ফেলে, মাহিমের চা গলায় যাচ্ছে কিন্তু চোখ উচ্ছল সোনেলার গালের টোলের উপর। মেয়েটা এত সুন্দর করে হাসে কেনো। 

তার পর কয়েকদিন আবার সোনেলার দেখা নেই। এর মধ্যে বৃষ্টি এসে একবার পরিচিত হয়ে গেছে মাহিমের সাথে। সে খুবই বিরক্ত ব্যালকনিতে গাছ পালা দেখে, তার মনে হয়েছে এসব অগোছালো।লোকেদের কাজ।
এক রাতে মাহিমের ফোনে sms আসে অচেনা নাম্বার থেকে, "ei apni ki ghumiye giyechen?" 
মাহিম লিখে, "ke apni?"
উত্তর আসে, "Ghum aschena, chad e asen dekhen ki sundor rupali josona"
মাহিম বাইরে এসে দেখে ছাদে সোনেলা দাড়িয়ে আছে, খোলা চুলে, লিলুয়া বাতাসে উড়ছে চুল, রুপালী জোসনায় ভরে গেছে ছাদ। তার ব্যালকনিতে ফোটা কামিনি ফুলের ঘ্রানে মউ মউ করছে চারিদিকে। মাহিম অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে আকাশের চাঁদের দিকে নয় রুপালি জোসনায় ছাদে নেমে আসা চাঁদের দিকে।
সোনেলা বলে, "এই যে হেল্লো, এদিকে আসুন, ছাদে শুয়ে চাঁদ দেখার মজাই অন্যরকম, তবে একা আমার ভয় করছিলো খুব,,  তাই আপনাকে ডাকলাম।"
মাহিম বলে, "আপনার বোনকে ডাকতে পারতেন।"
সোনেলা বলে, "আপনার ঘুম নষ্ট হলে, চলে যেতে পারেন।"
মাহিম বলে, "না নষ্ট হচ্ছেনা, বরং ভালো লাগছে অনেক বলে ছাদে চিত হয়ে শুয়ে পড়ে মাথার নিচে হাত দিয়ে"
সোনেলাও মাথার নিচে হাত দিয়ে মাহিমের পাশে শুয়ে পড়ে। তার পর বলে আচ্ছা একটা গান শুনাবেন আপনি, একদম কোমল সুরে বললো সোনেলা।
মাহিম বললো, আমার গলা বড়ই বেসুরো, আপনার ভালো লাগবেনা।
সোনেলা বললো, "সেটা আমার ব্যাপার আপনি শুনান প্লিজ। আমি শুনবো আপনার গান।" 
মাহিম উঠে বসলো বললো, "আচ্ছা শুনেন"
""এই রুপালি গিটার ফেলে
একদিন চলে যাব দুরে, বহুদূরে
সেদিন অশ্রু তুমি রেখো
গোপন করে।।
মনে রেখো তুমি
কত রাত কত দিন
শুনিয়েছি গান আমি, ক্লান্তিবিহীন
অধরে তোমার ফোঁটাতে হাসি
চলে গেছি শুধু
সুর থেকে কত সুরে.............।।
 গানটি শেষ হলে সোনেলা বললো, "অসাধারণ গান তো আপনি, আমি মুগ্ধ, সত্যি আমি প্রতিদিন আপনার গান শুনতে আসবো, আপনি না করবেন না।"
মাহিম বললো, "আপনি একটা গান গেয়ে শুনান প্লিজ"
সোনেলা বলে, "গান আমি গাইতে পারিনা ভালো, কিন্তু এই জোসনা দেখে গাইতে ইচ্ছা হচ্ছে।"
সোনেলা গায়, 
"মায়াবী জোসনায় যদি পারতাম হেটে হেটে
ঐ বালুকাবেলায় হারাতে,
নীল মলাটের এই ডায়রিটাতে
যদি থাকতো লিখা,,,,,,,,,"
মাহিম বলে এটা কার লিখা গান আগেতো শুনিনি।
সোনেলা হেসে বলে, "এটা এই সোনেলার লিখা"
মাহিম কিছু বলতে যাচ্ছিলো, এমন সময় বৃষ্টি ছাদে এসে বললো, "আপু ঘুমাবানা, অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে ১২ টা বেজে গেছে।"
মাহিম বললো, "শুভ রাত্রি, ভালো থাকবেন।"
মাহিম ঘরে যেয়ে সোনেলার নাম্বারে মেসেজ করলো, "Apni onek sundor gaite paren."
প্রতুত্তর আসলো, "Thanks, ami kal rate abar asbo apni asben to."
মাহিম লিখলো, "apni asle ami asbo nishcoi. Ar apnar sathe katano somoy gulo khub valo lage amar. Apnar opekkhay thakbo."
সোনেলা উত্তর দিলো, "amaro valo lage, ghumiye jan, shuvo rattri."

পরদিন সকালে দরজায় খট খট শব্দ, মাহিম চোখ মেলে দেখলো কেবল ৮ টা বাজে এতো সকালে কে এলো। আজ ছুটির দিন তাই ওর ভার্সিটি অফ, তাই মাহিম ঘুমাচ্ছিলো, মাহিমই সবার আগে ঘুম থেকে উঠে। মাহিম দরজা খুলেই দেখে বৃষ্টি দাড়িয়ে আছে।
 মাহিম বললো, "কি হইছে আপু, এতো সকালে আপনি।"
বৃষ্টি বলে, "আপনি যা সব করছেন এগুলো ঠিক হচ্ছেনা, আপনি কি করছেন একবার ভেবেছেন। ছোটোলোক ছোটোলোকের মত থাকবেন, বড় বাড়ি দেখে আর লোভ সারেনা তাইনা"
মাহিম বলে, "আপু আমি বুঝছিনা কি হইছে একটু খুলে বলেন আর আমাকে এতো গালি দিচ্ছেন কেনো?"
বৃষ্টি বলে, "গাল দিবোনা, আমার আপু বোকা বলে তাকে পটানোর চেষ্টা করছেন, আর ভাবছেন ওকে পটিয়ে বিয়ে করলেই এই বড় বাড়িতে উঠতে পারবেন, ওসব হবেনা আমি সব বুঝি। ছোটোলোক দের আচরন এমনই হয়। আর যদি কখনো দেখি আমার আপুর সাথে কথা বলছেন তাহলে আপনার খবর আছে। বাবাকে বলে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো।"
মাহিম মাথা নিচু করে সব শুনে, আর ভাবে, "কিছুই তো হয়নাই তাই এতো কথা, সে তো সোনেলা কে চিনতোই না। সোনেলাই আসলো এক বৃষ্টির দিনে। আর এ কথা সত্য যে সোনেলা তার মনে অনেক যায়গা করে নিয়েছে কিন্তু কখনোই মাহিম এ কথা প্রকাশ করেনাই আর মাহিমের যে ভালোবাসা সোনেলার প্রতি হয়েছে তাতে বিন্দুমাত্রও সম্পদের লোভ নেই। কারন সে পিএইসডি করতেছে, আগের রেজাল্ট ও সব ভালো, কমপ্লিট হয়ে গেলেই সে কোনো ভালো বেতনের চাকরি পাবে কোনো না কোনো ভার্সিটিতে। কিন্তু এ কথা বৃষ্টিকে বোঝাবে কে।"

বৃষ্টি চিল্লাপাল্লা করে চলে যেতেই, মাহিম তার ব্যাগ গুছিয়ে নিলো, তেমন কিছুই ছিলোনা, বেড থাকলো পড়ে, চাদরটিও নিলোনা। শুধুমাত্র নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, বই খাতা, সার্টিফিকেট, আর গবেষনার জিনিসপত্র, টাকা নিয়ে দুটি ট্রলি ভর্তি করে বের হয়ে এসে কেয়ারটেকার কে দিয়ে বৃষ্টিকে ডাকলো, বললো, আমি এই মুহূর্তে চলে যাচ্ছি চাচার জন্য চুক্তি অনুযায়ী আরো ছয় মাসের অগ্রিম ভাড়ার টাকা এটা দিয়ে দিয়েন। আর আমি স্যরি। অনেক চেষ্টা করেও মাহিম অশ্রু লুকাতে পারলোনা, কারন এই প্রথম সে অনেক বড় ধরনের কষ্ট পেয়েছে ব্যাবহারে। বৃষ্টিও একটু থতমত খেয়ে গেলো, যে ভুল করেনি তো সে। 


সোনেলার একটু দেরি করে ঘুম ভাংগে। সারাদিন আর ছাদে আসা হয়না, রাতে ছাদে এসে মাহিমকে মেসেজ করে কিন্তু উত্তর নেই। কিছুক্ষণ পর দেখে রুমে তালা খোলা কিন্তু কেউ নেই। তার রুমে ঢুকে আলো জ্বালায় সোনেলা, দেখে বিছানা পাতা, ক্যামেরাটা ঝুলানো, কবিতার একটা খাতা আর ডায়েরি পড়ে আছে। সেই সাথে ছোট্ট একটি চিরকুট, "আজ রাতে ছাদে আসবো বলে কথা দিয়েছিলাম, কিন্তু আর আসা হবেনা তাই স্যরি। আর আমি চলে গেলাম আপনাদের বাসা থেকে, জানি আপনি রুমে আসবেন, তাই চিরকুট টি রেখে গেলাম, আর যা যা রেখে এসেছি সেগুলো আপনাকে গিফট।"

সোনেলা বুঝেনা কি হইছে, কিন্তু হঠাৎ তার মনে হয়, যেনো বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো তার। কেনো চলে গেলো মাহিম, আজ খুব কষ্ট লাগলো তার। কেনো হাসি খুশি মানুষটা চলে গেলো। সোনেলার বয়স ২৩ বছর কেউ তার জীবনে দু মুহুর্ত আনন্দ দিতে পারেনি, সে বড়লোক বাবার সন্তান তাই দুঃখ কষ্ট তার নেই কিন্তু তার পরেও আরেকটি ব্যাপার থাকে তা হলো ভালো লাগা, গত ১ মাসে মাহিম তার সব ভালো লাগা গুলো পুরন করে দিয়েছে তার সাথে বসে বৃষ্টিতে ভিজেছে যা কেউ করেনাই, তার সাথে রাতে বসে দেখেছে আকাশ কিন্তু আর কেউ তো আসেনি। সোনেলা আরো ভাবে যে সেই বা এই অপরিচিত মানুষের জন্য এতো ভাবছে কেনো, কে সে। কিন্তু না অজানা কারনে সোনেলার দু-চোখে নামে অশ্রুজল। সোনেলার ইচ্ছা হতে লাগলো মাহিমকে ডেকে বলতে কেনো সে চলে গেলো, সোনেলা কি কষ্ট দিয়েছে তাকে। মাহিমকে কাছে না পেয়ে মাহিমের বিছানায় লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগলো সোনেলা। 

তার পর সে নিচে নেমে এসে বাবাকে বললো, কি হইছে মাহিমের কেনো সে চলে গেলো। মাসুম সাহেব বললেন, জানিনা বৃষ্টির কাছে চুক্তির ছয় মাসের ভাড়া রেখে আজ সকালে নাকি চলে গেছে। সোনেলার দুচোখে জল আর বাধ মানলোনা, সে দ্রুত চোখে হাত দিয়ে চলে গেলো পাশের রুমে। মাসুম সাহেব বড় তাজ্জব হলেন।
মেয়ের পেছন পেছন যেয়ে বললেন কি হইছে মা, ওকি কোনো সমস্যা করেছে।
সোনেলা বললো, "আমি জানিনা বাবা, আমি জানিনা। আমি কেনো কান্না করি তাও জানিনা, আমার বড্ড খারাপ লাগছে, কিন্তু কারন জানিনা, তুমি যাও আমাকে একা থাকতে দাও।"
পরদিন সকাল থেকে সোনেলা আর ভালোভাবে খাওয়া দাওয়া করেনা চোখের নিচে কালি পড়ে, সোনেলাও খুবা তাজ্জব হয়ে যায় যে দুদিনের পরিচয়ে পাগল লোকটা কি তাকেও পাগল বানিয়ে দিয়ে গেলো। এক মাস পার হয়ে গেলো সোনেলা মোটেই ভুলতে পারছেনা মুহুর্ত গুলো, আসলে এই ২৩ বছরের জীবনে কেউই তার জীবনেও আসেনি, কারন সে সবসময় সকলের থেকে স্টাটাস বজিয়ে চলার জন্য কেই বা মিশবে। কিন্তু নিজের বাড়িতে এসে কেউ যখন তার অনুভুতি গুলোকে মূল্যায়ন করলো সে অজান্তেই যে মন দিয়ে ফেলেছে সেটা আগে বুঝিনি, মাহিম চলে যাওয়ার পরেই বুঝেছে।

এদিকে মাসুম সাহেব মেয়েকে নিয়ে টেনশনে পড়ে গেলেন ইয়ার ফাইনালের ছুটিতে এসে মেয়ে এমন অসুস্থ হয়ে পড়লো। বৃষ্টিকে ডেকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন কি হয়েছে সে কিছু জানে কিনা। বৃষ্টি সব খুলে বললো। মাসুম সাহেব বললেন তুমি আগে বলোনি কেনো আমাকে, তোমরা দুজনেই আমার সব। তোমাদের জন্য তো আমি সব উৎসর্গ করে দিতে পারি।
পরদিন মাসুম সাহেব ভার্সিটিতে গেলেন, কিন্তু মাহিমের দেখা পান না। কারন তার থিসিসের কাজ কর্ম সে এক ফাকে আসে আর দিয়ে চলে যায় মাসুম সাহেব যখন যান তখন সে আর থাকেনা। এদিকে বৃষ্টিও বোনের শরীর দেখে টেনশনে পড়ে যায়, তার ও নিজের উপরে খুব রাগ হয়। একদিন মাসুম সাহেবকে যেতে মানা করে সেই যায় সকাল থেকে ডিপার্টমেন্ট এর সামনে দাড়িয়ে থেকে সে মাহিমকে পায়। মাহিম ওকে দেখেই, "না দেখার মতো করে চলে যায় ভেতরে।"
বৃষ্টি অবাক হয়, মাহিম বের হতেই দু হাতে পথ আগলে দাড়ায়, "এইযে মাহিম ভাইয়া, কই যাচ্ছেন?"
মাহিম কথা শুনে খুব তাজ্জব হয়, "বলে আবার কিছু বলবেন স্যরি, আমার ডিপার্টমেন্ট এটা প্লিজ কিছু বলবেন না।"
বৃষ্টি হেসে দেয়, "বলে সেদিনের ব্যাবহারের জন্য স্যরি, আপনি আমাদের বাসায় চলুন"
মাহিম বলে বাইরে আসুন, আর, আমি যাচ্ছিনা আপনাদের বাসায় আর। আমি সকল টাকা পয়সাও পরিশোধ করে এসেছি। আপনি যেতে পারেন। ভালো থাকবেন। মাহিম কথা গুলো বলে জোরের সাথে কিন্তু চোখের জল লুকাতে পারেনা।
বৃষ্টি হা হয়ে যায়,সে বাসায় ফিরে যায়। সোনেলা ঘুমিয়ে আছে, ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আবার অপরাধবোধ জেগে উঠে ওর মাঝে, যে ওর জন্যই হাসি খুশি মা মরা বোনটার আজ এই অবস্থা। ও দৃড় প্রতিজ্ঞ হয় সে মাহিমকে নিয়ে আসবেই কারন বোনকে তো সেও ভালোবাসে। সে তার মোবাইল দিয়ে সোনেলার ফটো তুলে, তার পরে আবার পরদিন ভার্সিটিতে যায় মাহিমের। আবার মাহিমকে জোর করে দাড় করিয়ে বলে, দেখুন ভাইয়া, এই ছবি গুলো দেখেন আপনি আমার বোনের এই অবস্থার জন্য দায়ী৷ আপনি যদি আমার আপুকে সুস্থ না করতে পারেন তবে আপুর এই অবস্থার জন্য আপনি দায়ী হবেন আর আমিও কোনোদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা। প্লিজ। অনুনয় ঝরে পড়লো কন্ঠে।
মাহিম সোনেলার ছবি দেখে নিজেকে হারিয়ে ফেলে আবার। সে বুঝে যায় যে মেয়েটি শুধু তারই ভাবনা চুরি করেনাই নিজের ভাবনাও হারিয়ে ফেলেছে। মাহিম আর সহ্য করতে পারেনা। 
মাহিম আর বৃষ্টি যখন ফিরে আসে, সোনেলা তখনও ঘুমায়। মাহিম তার ফেলে রাখা চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে বসে, সোনেলা উঠলে বৃষ্টি বলে আপু মাহিম ভাইয়ের ক্যামেরাটা একটু আনতো, তোর ছবি গুলো দেখি। সোনেলা বলে তুই যা, আমার ভালোলাগেনা।
বৃষ্টি জোর করেই ওকে পাঠায় মাহিমের ফেলে যাওয়া ক্যামেরা আনতে। সোনেলা এসে দরজা খুলেই দেখেমাহিম। সোনেলা চিৎকার করে দরজায় লুটিয়ে পড়ে, মাহিম তাড়াতাড়ি ধরে ফেলে বিছানায় শুইয়ে দেয়, চোখে মুখে জল ছিটায়।
সোনেলা চোখ খুলেই দু হাত তুলে মাহিম কে ডাকা, মাহিম কে বুকের মাঝে আকড়ে ধরে সোনেলা। তার ছোট্ট বুকের মাঝে যে অনেক ঝড় বইছে, মাহিম অনুভব করতে পারে পাগলীটা কাপছে।"
সোনেলা বলে, "তুমি আমাকে এমন ভাবে ফেলে চলে গিয়েছিলে কেনো, জানো আমার এই বুকে কেউ আজ পর্যন্ত দাগ কাটেনি আর তুমি পুরো বুকটাই চুরি করে ফেলেছো।"
মাহিম বলে, "এই চলে যাওয়াতেই তো বুঝলাম তুমি আমার কতটা নিয়ে নিয়েছো। আমার সারাজীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া তুমি।"
সোনেলার দুচোখে অশ্রু মাহিম দু হাতের আংগুল দিয়ে মুছে দেয়, নাকে নাক মিশায়, সোনেলার কম্পমান ঠোটে নিজের ঠোট রেখে বলে, "এই পাগলী তুমি আর কান্না করোনা বুকে লাগছে।"
সোনেলা আরো জোরে চেপে ধরে বলে আমাকে এভাবে রাখবে তো সারাজীবন।
মাহিম বলে সোনেলাকে আরো নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে আর দুজনের মন ভরে ওঠে ঐশ্বরিক ভালোবাসায়, এ যে হারানো ভালোবাসা, কামিনীর গন্ধে চারিদিকে সুশোভিত হয়ে আসছে আর দুই নরনারীর অন্তরের সুবাস তারা দুজনেই পাচ্ছে। বাতাস যেনো পরশ বুলিয়ে দিলো, মাহিম সোনেলাকে বুকের উপর শুইয়ে রেখে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে, আর সোনেলা কথা বলেই চলছে, সে কথা যে ফুরাবার নয়.........।

লেখক সোনেলা আর মাহিমকে দোয়া করেন, এমন সকল অন্তরের ভালোবাসা যে লেখকও উপলদ্ধি করেন।

writter: Md. Abidur Rahman, Institute of Business Administration (IBA) , Dhaka University. 

Wednesday, May 27, 2020

অসমাপ্তের সমাপ্ত গল্প- The Finished Story of an unfinished Goal

সামিয়ার আজ অফিসটা বড় খালি খালি লাগছে কেমন যেনো একবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে চোখে আকুলতা নিয়ে। সম্বিত ফিরে পেলো মোক্তার সাহেবের কথায় উনি আবার খুব হাস্যরসিক মানুষ আর অফিসের সকলের সাথেই খুব আন্তরিক। উনি বললেন কি ব্যাপার মামুনি নিল সাহেব আসেননি বুঝি। সামিয়া হেসে বললো না স্যার তেমন কিছু না কিন্তু নিলয় আজকে আসেনি কেনো।

মুক্তার সাহেব হলেন অফিসের ম্যানেজার, উনি বললেন আজ নিলয়ের খুব জ্বর তাই ছুটি নিয়েছে। সামিয়ার মুখটা কালো হয়ে গেলো শুনে। ও তাড়াতাড়ি কাজে মনযোগ দিলো আজকের মধ্যে আলফা গ্রুপের ফাইল গুলো দেখে দিতে হবে। সামিয়া নিলয় এরা দুজনেই মুলত প্রথমসারির একটা প্রাইভেট বিজনেস এন্যালাইসিস কোম্পানিতে জব করে। সামিয়া আর নিলয় একই ডেস্কে কাজ করে ওরা রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট সেকশনে। ওদের কাজও অনেক। তবে কাজ যতই হোক সামিয়া আর নিলয় কাজের ফাকে ফাকে নিজেদের গল্প ও শেয়ার করে নিয়েছে। আর অফিসে কেউ কারো ব্যাপারে নাক গলায় না। আর সামিয়া আর নিলয়ের ডেস্কে কাজের প্রচুর চাপ কিন্তু তারা খুবই আন্তরিক আর অন্যান্য দের থেকে ভালো পারফরম্যান্স দেখানোয় কোম্পানির মালিক সোবহান সাহেব আর ম্যানেজার মোক্তার সাহেব তাদেরকে আলাদা চোখেই দেখেন। মোক্তার সাহেব সম্পর্কে সোবহান  সাহেবের বড় চাচা তিনি অফিসের সকলকেই প্রায় তুমি করে বলেন।

সামিয়া নিজে থেকেই বড় হয়েছে বলতে গেলে এক চাচার ঘরে পালিত হয়েছে ছোটোবেলায়। কারন ক্লাস ফাইভে থাকার সময় সামিয়ার বাবা মা সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন তার পর চাচা সকল সম্পত্ত্বি নিজেই ভোগ দখল করেছেন বিনিময় হিসেবে SSC পর্যন্ত সামিয়াকে দেখভাল করেছেন এ কথা তো সকলেই জানে। কিন্তু তিনি এমন ভাব দেখান যে সামিয়ার বাবা মা কিছুই রেখে জাননি। তিনিই কোলে পিঠে করে বড় করেছেন, অবশ্য সামিয়াও মেনে নিয়েছে। ও লেখাপড়ায় ভালো ছিলো। শহরের বড় কলেজে বৃত্তিসহ চান্স হয়ে যায়। HSC এর পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপ এ অনার্স মাষ্টার্স করেছে। আর নিলয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর IBA থেকে পড়াশোনা শেষ করে এই অফিসে চাকরি পেয়েছে। আর চাকরি পাওয়ার পরে দুজন এক সেকশনে হওয়ায় আর নিলয়ের উদাসিন স্বভাবের জন্য সামিয়ার সাথে ভালো সম্পর্ক। কেউ কারো সাথে প্রেম করে এমনটা নয়, কিন্তু অন্যেরা তাই মনে করে। 

তো সেদিন সামিয়া একা হাতেই বলতে গেলে দুজনের কাজ সামলে নেয়। বিকাল ৫ টায় অফিস থেকে বের হয়। ওদের অফিস ইসিবি মোড়ে। সামিয়ার বাসা কুড়িলে আর নিলয়ের বাসা নদ্দায়। সামিয়া আর নিলয় প্রতিদিন এক সাথেই বাসায় ফিরে আসে। সামিয়া নেমে যায় কুড়িলে আর নিলয় নামে নদ্দায়। আজকে কুড়িল পর্যন্ত এসে সামিয়া কি মনে করে নামলোনা। সে নদ্দা এসে নামে। নিলয়ের বাসা সে চিনে। বাসার নিচে এসে নিলয় কে ফোন দেয়।
হেল্লো নিল কই তুমি বাসায়?
"হ্যা সামিয়া বাসায় আজ খুব জ্বর তাই অফিসে যাইনি, কেমন আছো তুমি?"
সামিয়া-"আমি নিচে দাড়িয়ে আছি বাসার তোমাকে দেখতে আসছি"
নিলয় সাথে সাথে বিছানা থেকে উঠে পড়ে ব্যাস্ত হাতে বিছানাটা গুছায়, কারন যা এলোমেলো করে রেখেছে পুরো ইজ্জতের বারোটা বাজা সারা।
যাই হোক তার পরে, সামিয়াকে নিয়ে আসে রুমে। সামিয়া এসে হাত মুখ ধুয়ে বিছানার এক পাশে বসে। নিলয়ের কপালে হাত দিয়ে দেখে কপাল পুড়ছে তাপে। সামিয়া বলে কি তুমি তো আমাকে জানাতে পারতে সকালে।
নিলয় বলে, "তোমার তো অফিস ছিলো, আর তোমাকে জানালে তুমি কি মনে করতে ভেবেই জানাইনি।"
সামিয়া বলে, "নিল তুমি আসলেই যেনো কেমন, আমাকে জানালে কি এমন হতো,, আচ্ছা কি খাইছো সকাল থেকে তুমি?"
নিলয় বলে, আজ তো আর রান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছেনা আর শরীর খুব খারাপ তাই বাইরেও যাইনি, বিস্কুট ছিলো মুড়ি ছিলো তাই খাইছি।
সামিয়া বলে শুয়ে পড় আমি দেখছি, কি করা যায়।
নিলয় বলে, "কেনো তুমি আর কি করবা, যাও বাসায় চলে যাও তুমিও অফিস করে ক্লান্ত, কিছু করতে হবেনা।"
সামিয়া বলে,, "চুপ থাকো, আমাকে উপদেশ দিতে হবেনা।"
নিলয় জানে এর পরে আর কোনো কথাই ও শুনবেনা তাই চুপ চাপ থাকে। 
সামিয়া বাসন কোসন ধুয়ে আলু ভর্তা ভাত চাপিয়ে দেয়, সাথে ডিম ভাজি। হাফ ঘন্টার মধ্যেই সব কমপ্লিট। করে বিছানার পাশে সব ঢেকে রেখে দরজা ভেতর থেকে লক করে বেরিয়ে যায় টেনে দিয়ে। কারন ততক্ষণে নিলয় ঘুমিয়ে গেছে।

নিলয়ের ঘুম ভাঙ্গে সামিয়ার ফোনে, ততক্ষণে রাত ৮ টা বেজে গেছে ও ঘুম থেকে উঠেই চারিদিকে দেখে লজ্জা পেয়ে যায় যে এত্ত কাজ করলো মেয়েটা অথচ তাকে বসতেও বললোনা, খেয়ে গেলেও তো পারতো। আসলে তো ওর ই দোষ অসময়ে ঘুমিয়ে পড়লো কেনো।
যাই হোক ওদিক থেকে সামিয়া বলে চলছে, "নিল উঠে পড়ো খেয়ে নাও, দেখো ভালো লাগবে, আর শোনো অবশ্যই খাবে কিন্তু আমার দিব্বি।
অনেক উৎকন্ঠা কিন্তু আবেগের সাথে কথা গুলো বলছে, শুনতে মনের ভেতরে ভালো লাগছে নিলয়ের। ২৬ বছর বয়সি এত বড় মেয়ে এমন ভাবে বলছে যেনো কত দিনের চেনা তার, কত অধিকারের সাথে বলছে। নিলয় বললো, " ঠিক আছে সামিয়া খেয়ে নিবো, কিন্তু তুমি চলে গেলে কেনো আমাকে ডাকতে পারতা এক সাথেই খাওয়া দাওয়া করতাম।" 
সামিয়ার কন্ঠে উচ্ছাসের প্রকাশ যেনো কথাটা তার কাছে ভালো লেগেছে, ও বললো, "এবার খেয়ে নাও তো নিল" কাল তো শুক্রবার আবার এসে রান্না করে দিয়ে যাবো।" 
নিলয় বলে "আচ্ছা এসো" এ কথা বলে ফোন রেখে দেয়, ফোনের দুই প্রান্তে থাকা দুটি হৃদয়েই যেনো কাশফুলের পরশ বুলিয়ে গেলো কেউ প্রকাশ করলোনা কেউ বুঝতেও পারলোনা কিন্তু দুজনেরই ঠোটের কোনে ফুটে উঠলো হাসি।

নিলয় হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসলো, ভাত আলু ভর্তা ডিম ভাজি সব খাওয়ার সময়ই যেনো মনে হচ্ছিলো এতে আলাদা একটা সেন্ট আসছে সামিয়ার। সামিয়ার হাতের ছোঁয়া লেগে আছে বলে মনে হচ্ছে। যদিও এর কোনো বৈজ্ঞানিক সত্যতা নেই কিন্তু খেতেও বড় আবেগ মনে হচ্ছে নিলয়ের কাছে,,, তাহলে কি সে কোনো অজানা পথে পা বাড়াচ্ছে। অজান্তেই কেপে উঠলো মন, সামিয়া যদি এসব না ভাবে, তাহলে বড়ই খারাপ হবে, সামিয়া খুব ভালো মেয়ে সে অসময়ে যত্ন করছে আর নিলয় কি সব ভাবছে। মনটা বড্ড ছেলেমানুষী করছে মনকে বুঝালো সে।

পরের দিন, আবার সামিয়া এলো আজ সে অতিরিক্ত কাপড় চোপড় নিয়ে এসেছে। এসে জোর করেই নিলয়ের পরা কাপড় গুলো ধুয়ে নেড়ে দিলো তার পর রান্না করলো। রান্না শেষ করেই গোসল করে সাথে আনা অন্য সেট জামা কাপড় পরে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। নিলয়ের জ্বর আজ কম, সে জানে তার জ্বর কখনোই দুই দিনের বেশি যায়না। কাল থেকেই সে অফিসে যেতে পারবে। সামিয়াকে নিলয় বললো "আজ এক সাথে খেয়ে যাও"
 সামিয়া বললো, "না ইচ্ছে হচ্ছেনা।" 
কোনো অনুরোধেই শুনলোনা সে যখন বেরিয়ে যাবে, শেষ বারের মতো নিলয় বললো "সামিয়া আজ এক সাথে না খেয়ে গেলে এগুলো যেমন আছে তেমনই থাকবে।" বলে ডান হাত দিয়ে সামিয়ার বাম হাত টেনে ধরলো। নিলয়ের সারা শরীর সিরসির করে উঠলো কারন সে এভাবে আন্তরিক ভাবে কখনোই ওকে ধরেনাই। অফিসে কাজের ফাকে অনেক সময় ছোঁয়া লাগে কিন্তু এভাবে কখনোই ওর হাত ধরা হয়নাই। নিলয়ের মনে হলো সামিয়াও কেপে উঠলো, ও ফিরে তাকালো যেনো অসীম সাগরের মত এক জোড়া চোখ। ডান হাত ঘুরিয়ে নিজের হাত থেকে নিলয়ের হাত ছুটিয়ে নিয়ে নিজেই ধরলো নিলয়ের হাত বললো "আমি খেয়ে গেলে খুশি তুমি নিল।" 
নিলয় বললো, "খুশি কিনা জানিনা তবে আজ না খেয়ে গেলে আর তোমাকে আসতেও হবেনা আর আমি খাবোওনা এসব।" 
সামিয়া ওর ঠোটের উপর আংগুল রাখে আর বলে চলো খেয়ে নেই।

দুজনে খাওয়া দাওয়া শেষ করার পর থালা বাসন আবার ধুয়ে দিয়ে সামিয়া চলে গেলো। ওর পাল্টানো কাপড় গুলো ও নিলয়ের ভেজা জামা কাপড়ের পাশে ধুয়ে শুকাতে রেখে গেছে। সন্ধা হতে হতে নিলয়ের শরীর ঝরঝরে হয়ে গেলো। ব্যালকনিতে যেয়ে সামিয়ার কাপড় গুলোর সাথে মিশে দাড়ালো যেনো বড় ভালো লাগছে ওর। এক সময় দুই হাতে জামা কাপড় গুলো আঁকড়ে ধরলো সামিয়ার। নিলয় জানেনা কেনো এমন করছে ও। জামা কাপড় গুলো ইস্ত্রি করে সুন্দর করে ভাজ করে একটা শপিং ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো ও। অফিসে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবে। 

শনিবার সুস্থই ছিলো নিলয়, এর মাঝে সামিয়া আর আসেনাই তবে ফোনে কথা হয়েছে। রবিবারে অফিসে গেলো নিলয় অফিসে যেতেই শুনলো চেয়ারম্যান স্যার মানে সোবহান সাহেব ডেকেছেন। সামিয়ার কাপড় সুদ্ধু শপিং ব্যাগটা সামিয়ার চেয়ারে রেখে ও দেখা করতে গেলো সামিয়া তখনও আসেনাই। সোবহান সাহেবের রুমে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতেই আন্তরিকতার সাথে সোবহান সাহেব বললেন মোক্তার সাহেব বললেন আপনি অসুস্থ তাহলে আপনি না আসলেও পারতেন আমি তো আপনাকে কখনও আটকাতাম না। নিলয় বললো স্যার আসলে বাসায় থাকতে ভালোলাগেনা আপনাদের সাথে দেখা হচ্ছে এটাই ভালো লাগছে আমার। সোবহান সাহেব হাসি মুখে বললেন আচ্ছা যান তবে বেশি কাজ করার দরকার নেই। 

নিলয় ফিরে এসে তার চেয়ারে বসতেই দেখে সামিয়াও চলে এসেছে। সামিয়া বললো কেমন আছো। নিলয়ের ছোট্ট উত্তর, "ভালো আছি, তুমি কেমন।" সামিয়া বললো ভালো, খাওয়া দাওয়া করতে পারছো। নিলয় সম্মতি সুচক মাথা নাড়লো। টিফিনের সময় অফিস রুমে স্বাভাবিক কেউ খায়না, নিষেধ নেই কিন্তু অফিসের চত্ত্বরটা অনেক সুন্দর আর ওখানে ছাতা দিয়ে ছায়া করা নান্দনিক বেঞ্চ পাতা থাকায় সবাই ওখানেই গল্প করতে করতে খায়। টিফিন আওয়ার শুরু হলেই নিলয় ওয়াশরুমে যায়, আর সবাই বেরিয়ে গেলে অফিশরুম থেকে ও এসে আবার ডেস্কে বসে পড়ে কারন ও টিফিন আনেনাই। মূলত ও বাসায় আজ রান্নাও করেনাই ভালোলাগছিলো না তাই।

এদিকে সামিয়া নিলয়কে ওয়াশরুমে যেতে দেখে বাইরে যেয়ে বসে একটা ফাকা বেঞ্চে,, ওর ইচ্ছা নিলয় বেরিয়ে এলে এদিকে ইশারা করে আসতে বলবে। কিন্তু নিলয় না আসায় সামিয়া আবার অফিসরুমে ঢুকে দেখে নিলয় ওর ডেস্কে বসে আছে। সামিয়া কাছে এসে বলে টিফিন কই নিল?" 
নিলয় বলে খেতে ইচ্ছা করছেনা তো তাই আনিনি। 
সামিয়া এক মুহুর্ত চুপ করে থেকে বাসা থেকে আনা রুটি আর মুরগির মাংস থেকে, রুটি ছিড়ে মাংস নিয়ে নিলয়ের মুখের সামনে ধরে বলে হা করো তাড়াতাড়ি। নিলয়ের না না বলতে বলতেই মুখে ঠেলে দেয় রুটি মাংস। জোর করে খাইয়ে তার পর পানির বোতল বের করে পানি খাইয়ে হাত ধুয়ে নিয়ে ভেজা হাত দিয়ে নিলয়ের মুখ মুছে দেয় সামিয়া।
ওদিকে রুমে বসে এই ঘটনার সাক্ষি হয়ে যান একমাত্র তৃতীয় ব্যক্তি মোক্তার সাহেব। উনাকে এরা দুজনের কেউ খেয়াল করেনাই। মোক্তার সাহেবের চোখের কোনে কখন জল এসে গেছে তা উনিও জানেন না। এই ৬০ বছরের জীবনে উনি এখনো আবেগ অনুভব করেন একদম বাচ্চাদের মতো। 
★★★★★★★★★★★★★★ ★★★★★★
দিন যায় রাত আসে এভাবেই চলতে থাকে অফিসের কার্যক্রম। এদিকে শেরপুরের এক বিখ্যাত ধনকুবের আলহাজ্ব ইলিয়াস হোসেন তার নেপিয়ার গ্রুপের জন্য কিছু বিজনেস স্পেশালিস্টের পরামর্শ চাইলেন এই অফিসে কারন তার বিজনেস গত বছর থেকে লস প্রজেক্ট হয়ে আছে, অফিস থেকে ইলিয়াস সাহেবের ব্যাবসা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য মোক্তার সাহেব নিলয় আর সামিয়াকে নির্বাচন করলেন। তারা উভয়েই তিনদিন ব্যাবসার সকল কিছু পর্যবেক্ষণ করে আসবে এসে সিদ্ধান্ত জানাবে।
মোক্তার সাহেব অফিস থেকে থাকা খাওয়া আর যাতায়াতের সকল ব্যাবস্থা করে দিলেন যদিও সকল খরচ ইলিয়াস সাহেব দিয়ে দিবেন ওরা গেলেই। 
ওরা ওদিনই ছোট্ট শহর শেরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলো ভাড়া করা ট্যাক্সিতে। তবে প্রচুর বৃষ্টি শুরু হলো যাত্রা শুরু করতে করতেই। আর রাস্তা এতোই খারাপ সেই সাথে বৃষ্টি হওয়ায় মারাত্নক জ্যাম। সন্ধা ৭.৩০ এ রওনা হকেও টঙ্গী ছাড়াতেই ১০ টা পার হয়ে গেলো। তার পরেও রাস্তায় জ্যাম গাড়ি থেমে থেমে যাচ্ছে। ওদিকে জানালার কাচের উপর দিয়ে জল নামছে সবেগে। জানালার কাচে মাথা রেখে তাই অনুভব করছে সামিয়া। আর নিলয় বসে বসে দেখছে, খুব ভালো লাগছে তার রাস্তার সোডিয়াম লাইটের আলোয় সামিয়ার মুখ সে ভালোভাবে দেখতে না পারলেও অবয়বটা বুঝতে পারছে। কিছুক্ষন পরে সামিয়া বললো নিল আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, বলেই নিলয়ের পায়ের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো সামিয়া। নিলয় চুপ করে দেখলো, আস্তে করে সামিয়াকে ধরে রাখলো যাতে পড়ে না যায়। খুব ভালো লাগছে ওর সামিয়াকে ফিল করতে। মনে হচ্ছে যেনো জড়িয়ে বুকের মাঝে আকড়ে ধরে কিন্তু সাহস হচ্ছেনা আবার সেই সাথে অজানা বাধা অনুভব করছে।

তবে দেখতে তো আর কেউ বাধা দিচ্ছেনা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে লেপ্টে আছে নিলয়ের পায়ে। ঘুমের মধ্যেই সামিয়া কাত হয়ে নিলয়ের পিঠের পেছনে হাত দিয়ে আকড়ে ধরলো ঘুরে। নিলয় সামিয়ার চুল লম্বা চুল গুলো যাতে গাড়ির মেঝেতে না চলে যায় তাই গুছিয়ে হাতে ধরে সামিয়ার পিটের উপর দুই হাত দিয়ে ধরে রাখলো যাতে ঝাকিতে ও গড়িয়ে পড়ে না যায়।। সারা রাত এভাবেই কেটে গেলো। রাত তিনটা বেজে গেলো পৌঁছাতে। শেরপুর নিউমার্কেট চত্ত্বরে পুলিশ বক্সের পাশে গাড়ি রেখে ঐ রাতে কেউ নামলোনা। ওখানেই থাকলো। সকাল হতেই ইলিয়াস সাহেবের লোকেরা এসে হোটেল 'আয়সার ইন' এ ওদের জন্য দুটি ভি আইপি AC রুমের চাবি দিয়ে গেলো। নিউমার্কেট থেকে একটু আগেই হোটেলটি। 
ওরা সকালে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হতেই শাহজাহান হোটেলের ভুনা খিচুড়ি চলে এলো। নেপিয়ার গ্রুপের কর্তারা মূলত ওদের বেশ যত্ন আত্তি করছে। শেরপুর শহরে অনেক ঘুরার যায়গা আছে সুযোগ হলে ঘুরাফিরার ইচ্ছা আছে।

প্রতিদিন সকাল ৯টায় অফিসে যায় আর ওদের অডিট কার্যক্রম চলে দুপুর ৫টা পর্যন্ত। এই অফিস থেকেই দুপুরে নাস্তা দেয় তার পর অফিস থেকে বের হয়ে ওরা হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তার পর সামিয়া বলে নিল চলো একটু ঘুরে দেখি শহরটা। নিলয় বলে চলো, সামিয়া আজ পরেছে একটা লাল ফুলের প্রিন্ট ওয়ালা সাদা শাড়ি আর নিলয় পরেছে জিনস প্যান্ট আর সাদা শার্ট। ওরা আইসার ইন থেকে হাটতে হাটতে নিউমার্কেটের সামনে এসে দুই কাপ চা খেয়ে একটা ইঞ্জিনের রিক্সা ভাড়া করলো প্রতি ঘন্টা ১৫০ টাকা চুক্তিতে, ও শেরপুর শহর ঘুরিয়ে দেখাবে। ছেলেটার বয়স কম নাম জিজ্ঞাসা করতেই বললো ভুলু মিয়া। বেশ হাসি খুশি, ও বললো স্যার, "ম্যাডামকে মানিয়েছে ভালোই আপনার সাথে,"  নিলয় কিছু বলতে গেলো, কিন্তু সামিয়া বললো থাক ও বলছে বলুক। ওরা ঘুরতে ফিরতে ভুলু মিয়ার গল্প শুনছে। ও এক এক যায়গায় রিক্সা থামায় আর বলে এখানে এটা বিখ্যাত এই এর ইতিহাস, দেখলাম ভালোই জানে। রঘুনাথ বাজারে সত্যবতী সিনেমা হলের পাশে মাশরুম এর চপ, চকবাজারের রুপকথা হলের সামনের চা, খোয়াড়পাড়, শ্রিবরদি বাজার রোডের লিখন হলের সামনের মিষ্টি পান। তেরোবাজার মোড় থেকে হামিদ ভাইয়ের লাড্ডু, চারু সুইটস এর সব মালাই চাপ খেয়ে ওরা রাত ১০ টার দিকে হোটেলে ফিরে এলো। 

সামিয়া খুবই ক্লান্ত। ওরা যার যার রুমে ঢুকে গেলো, গোসল করে ফ্রেশ হয়ে সামিয়া বেরিয়ে এসে নিলয়ের দরজায় নক করলো, নিলয় দরজা খুলে দিলে ভেতরে এসে বললো কিছু ভাল্লাগছেনা নতুন যায়গা একা একা। নিলয় বললো তাইলে টিভি দেখো দাড়াও নিচে থেকে কিছু কিনে আনি৷ ও নিচে গিয়ে চিপস কিনে নিয়ে এলো সাথে মিরিন্ডা আর কিছু চকলেট-কিটক্যাট এইসব।

ওরা গল্প করতে লাগলো, নিলয়ের কেমন ঘোর ঘোর লাগছিলো কারন সামিয়ার গোসল করে আসার পর থেকে ওর চুলের শ্যাম্পুর একটা সুবাস পাচ্ছিলো ও। আর সামিয়া ওর গায়ের কাছাকাছি বসায় সেন্টটা আরো ভালোভাবে ফিল করছিলো। একসময় সামিয়া বালিসে হেলান দিয়ে বসলো নিলয়ের দিকে পা দিয়ে। সামিয়া কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়লো, নিলয় ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো গালটা একটু ফাকা হয়ে আছে, চুলগুলো মুখে এসে পড়েছে কেমন যেনো খুব বাচ্চা বাচ্চা লাগছে মেয়েটাকে। নিলয় ওর পায়ের দিকে ছিলো, আর ঘুমের ভেতরে দুই পা প্রসারিত করে নিলয়ের কোলের উপর তুলে দিলো। নিলয় দু হাত দিয়ে পা দুখানি ওর কোলে রেখে নিজে চিত হয়ে শুয়ে পড়লো। দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লো গভীর ঘুমে, ঘুমিয়ে নিলয় সপ্ন দেখলো ও আর সামিয়া শুয়ে আছে কোথাও পাশা পাশি, ওদের চারিদিকে স্বর্ণলতার বেয়ে উঠেছে। কিছু জংলী ফুল ফুটেছে ওদের দুজনের উপরে স্বর্ণলতিকার সাথে।

সকাল বেলা সামিয়ার ঘুম থেকে উঠলো আগে, অনেক ক্লান্তি থাকায় কেউ রাতে নড়েনি, সামিয়া দেখলো ওর পায়ের কাছে ঘুমিয়ে আছে নিলয়, নিলয়ের পেটের উপর ওর দুই পা। সামিয়ার মুখে ফুটে উঠলো একটু হাসি, সে হাসি যেনো ভালোলাগার। কেউ সে হাসির সাক্ষি থাকলোনা। ও নিলয় কে জাগিয়ে তুললো, নিলয় উঠেই বললো স্যরি, কোনো সমস্যা হয়নাইতো তোমার। 
সামিয়া বললো সমস্যা তো তোমার হইছে আমার পায়ের দিকে শুইলে কেনো, আর আমাকে তো জাগিয়ে দিতে পারতে তোমার পেটের উপর আমি পা তুলে শুয়ে ছিলাম নিল স্যরি। 
নিলয় বললো আমি কিছু মনে করিনি সামিয়া, বরং তোমাকে দেখতে খুব ভালো লাগছিলো। 
সামিয়া ফিক করে হেসে দিলো, বললো কি যে বলো, ভালো লাগবে কেনো, আমি দেখতে মোটেই সুন্দর না। 
নিলয় বললো, না আমার চোখে খুব ভালো লাগছিলো আর  মনে হচ্ছিলো....... 
সামিয়া বললো কি মনে হচ্ছিলো? 
নিলয় বললো, তুমি রাগ করবে বললে, থাক স্যরি। 
সামিয়া বললো "না হবেনা, তোমাকে বলতেই হবে, আমার দিব্বি।"
নিলয় মাথা নিচু করে লজ্জাবনত চোখে বললো, আমার খুব মনে হচ্ছিলো যে তোমার দুই গালে দুটা চুমু দেই। 
সামিয়া অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো, আর মনে মনে বললো দিতে ইচ্ছা হচ্ছিলো দিতে, আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম কিছুই তো বলতাম না। কিন্তু লেখক এটা বুঝে গেলেন যে সামিয়া যদি এদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখতো তবে নিলয় সামিয়ার ঠোটের কোনে হাসির ঝিলিক দেখতে পেতো।।

যাই হোক, একে একে তিনদিন কাজ ও শেষ হলো আর সেই সাথে বিদায়ের পালা শেরপুর থেকে।  নেপিয়ার গ্রুপের সকল হিসাব পাতি দেখে ওরা বুঝতে পারলো যে কোম্পানির ম্যানেজারের দুই নম্বর কার্যক্রম ই কোম্পানির লসের জন্য দায়ী। নেপিয়ার কোম্পানির চেয়ারম্যান ইলিয়াস সাহেবের সাথে গোপনে বৈঠক করে ওরা ওদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলো। ইলিয়াস সাহেব খুবই কঠোর মানুষ। উনি খুবই খুশি হলেন কাজের প্রতি। ওদের চুক্তির টাকা বুঝিয়ে দেয়ার পরে আরো কিছু সম্মানি দিলেন হিসেবের বাইরে। 

ওরা এবার বাসে টিকিট কাটলো শেরপুর নিউমার্কেট থেকে পরদিন সকাল সাড়ে ৬ টায় বাস, AC -Delux. এর। সেদিন ওদের মাথায় চাপ কম,, সন্ধায় শেরপুরের বিখ্যাত অনুরাধার দই খেয়ে ওরা ফিরে এলো মাইসাহেবা মসজিদের সামনে। এখান থেকে ঘুরে ফিরে ওরা কিছু শপিং করলো। শপিং বলতে গেলে একে অপরকে করে দেওয়াই হলো। নিলয় শেরপুর থেকে কিছু গারো উপজাতিদের তৈরি গিফট আইটেম শো পিস কিনে দিলো সামিয়াকে, সেই সাথে একটা নীল রং এর শাড়ি। আর সামিয়া কিনলো একটা সাদা পাঞ্জাবী আর একটা বাঁশের বাঁশি। কিনে নিলয় কে দিলো। কেনা কাটা শেষ হলে ওরা একটা রিকশায় উঠে ফিরে এলো হোটেলে, রিক্সায় উঠে নিলয়ের হাতের আংগুলের ভেতরে আংগুল ঢুকিয়ে বসে থাকলো সামিয়া। আকাশে আজ মেঘ নেই, চাদ উঠেছে চকচকে সামিয়া উপর দিকে তাকিয়ে আছে। নিলয় বললো সামিয়া পড়ে যাবা তো। সামিয়া উদাস সুরে বললো, কেনো নিল তুমি আমাকে ধরে রাখতে পারবানা। নিলয় কিছু না বলে দুই হাত দিয়ে সামিয়ার দুই হাত মুঠোর মধ্যে শক্ত করে ধরে কোলে টেনে নিলো, সামিয়া কিছুই বললোনা।

পরের দিন সকাল ৬ টায় ওরা বাসে উঠলো, সাড়ে ছয়টায় বাস ছাড়লো। ১২ টার মধ্যে ঢাকা পৌছে গেলো বাস। ওরা ওদের অফিসে যেয়ে টাকা পয়সা বুঝিয়ে দিলো আর রিপোর্ট দিলো কাজের। সোবহান সাহেব খুব খুশি হয়ে দুজনকে বোনাস দিলেন। আর বললেন আজ আপনাদের ছুটি, ট্যুর করে এসেছেন বাসায় যেয়ে বিশ্রাম নেন। 
ওরা অফিস থেকে বের হয়ে বাসে উঠে, কুড়িল পৌঁছে সামিয়া নেমে যায় আর নিলয় নদ্দায় নামে। কিন্তু আজ আর বাসায় যেতে মন চাইছেনা নিলয়ের। কি মনে করে সামিয়াকে ফোন দেয় নিলয়,,, "হেলো সামিয়া কি করো তুমি"
সামিয়া বলে, "এইতো নিল বাসায় আসলাম, কি হইছে তোমার।"
নিলয় বলে, " তুমি আসতে পারবা আজকেই আমার বাসায় একটু।"
সামিয়া বলে, "হ্যা পারবো, তাহলে গোসল করে আসছি।"
নিলয় বলে, "আচ্ছা আসো।"
১ ঘন্টা পরে সামিয়া এসে দেখে নিলয় বাসায় না উঠে নিচে দাড়িয়ে আছে, সামিয়া আশ্চর্য হয়ে বলে "সেকি তুমি ফ্রেশ না হয়ে দাড়িয়ে আছো কেনো?"
নিলয় বলে কি করবো বলো, ভালোলাগছেনা, জানিনা কেমন যেনো লাগছে।
সামিয়া বলে, পাগল হয়ে যাচ্ছো দিন দিন, চলো উপরে যাই।
নিলয় রুমে এসে গোসল করতে বাথরুমে ঢুকলো, ওদিকে সামিয়া চুলায় রান্না বসিয়ে দিলো। নিলয় ফ্রেশ হয়ে এসে বসলো, সামিয়া একে একে ফ্রিজে রাখা মুরগির মাংস রান্না করলো আর ভাত রান্না করলো। তার পর দুজনেই খেতে বসলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সামিয়া বললো আমাকে পৌঁছে দিয়ে আসো এবার রাত হয়ে গেছে। নিলয় বললো চলো। 
সামিয়ার ফ্লাটে এসে লিফট থেকে নেমে সামিয়ার রুম পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসে নিলয় সামিয়াকে বলল এবার তাহলে যাই। সামিয়া বললো আচ্ছা যাও। আজ তো বৃহস্পতিবার মানে কাল পরশু অফিস এমনিতেই ছুটি। "ওকে" বললো নিলয় কিন্তু যাচ্ছেনা, সামিয়া বললো কি হলো যাবেনা ফিরে না-কি। নিলয় বললো হ্যা যাবো, কিন্তু না' নিলয় যাচ্ছেনা সামিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সামিয়া কি মনে করে কাছে আসলো নিলয়ের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গিয়ে দরজা আটকায় দিয়ে নিলয় কে দরজার সাথে সেটে ধরলো, তার পর মুখের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বললো সেদিন তোমার কি ইচ্ছা হচ্ছিলো নিল। নিল কিছুই বলছেনা। সামিয়া বুকের সাথে আঁকড়ে ধরলো নিলয়কে, আর নিলয়ের ঠোটে নিজের দুই ঠোট লেপ্টে ধরলো। অনেক্ষণ হয়ে গেলো নিলয়ও সামিয়ার পিঠে হাত রেখেছে বড্ড ভরশার ছোঁয়া সে হাতে। সামিয়ার ঠোট থেকে নিজের ঠোট ছাড়িয়ে সামিয়ার কপালে, দুই চোখে আর মাথায় চুমু খেলো নিলয়। তার পরে নিলয় সামিয়াকে বললো "আমরা কি এক বাসায় থাকতে পারি, আমার না খুব ইচ্ছা তোমার হাতে হাত রেখে চাঁদ দেখবো, দেখবো ঝুম বৃষ্টি, তোমাকে কোলে তুলে তোমার ঠোটে চুমু খাবো। আর তুমিও আমার গলা জড়িয়ে ধরে থাকবা। দুজনে হাতে হাত রেখে ঘুরবো বোটানিক্যাল এ। 
সামিয়া বললো হ্যা নিল আমরা পারি, আমি ও তোমার চোখে চোখ রেখে দেখতে চাই চাঁদ, তোমার বুকে মাথা রেখে কাটাতে চাই প্রতিটি মুহুর্ত। আমি তোমার হাত ধরে হারিয়ে যেতে চাই দুর অজানায়। প্রতিদিন খাইয়ে দিতে চাই তোমাকে নিল। বলে আবারো নিলয়ের মুখে চুমু খেলো সামিয়া। 

পরিসমাপ্তিঃ

মোক্তার সাহেব, সোবহান সাহেব আর সকল কলিগদের দাওয়াত করা করলো নিলয় তার এক বন্ধুর কমিউনিটি সেন্টার আব্দুল্লাহপুরে। পরদিন জুম্মা বাদ সবাই একে একে এলো, সোবহান সাহেব স্বপরিবারে এসেছেন, মোক্তার সাহেব এসেছেন আরো সবাই এসেছেন নানা ধরনের গিফট নিয়ে। অফিসের মেয়ে কলিগেরা গেলো সামিয়াকে নিয়ে আসতে। সামিয়ার সেই চাচা ও এসেছেন। কনে সামিয়াও চলে এসেছে। এদিকে নিলয়ের দেখা নেই, ২ টা পেরিয়ে ৩টা ৪ টা বেজে গেলো নিলয়ের দেখা নেই। ৪.১৫ নাগাদ মোক্তার সাহেবের ফোনে একটা অচেনা নাম্বারের কল আসলো উনি রিসিভ করতেই বললো আমি ভাটারা থানা থেকে বলছি। নিলয় নামে কেউ কি আপনার অফিসের এমপ্লয়ি আপনার কার্ড পাওয়া গেছে উনার মানিব্যাগ থেকে। মোক্তার সাহেব ভয়ে ভয়ে বললেন হ্যা কি হয়েছে ওর। ওপাশ থেকে বললেন নিলয় সাহেব সম্ভবত কোনো অনুষ্টানে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন সাথে ছিলেন উনার মামা, এয়ারপোর্ট রোডে পাশ থেকে লেন চেঞ্জ করে এক ট্রাক দুজনকে উনাদের গাড়ি সুদ্ধু চাপা দিয়েছে সাথে ড্রাইভার ও নিহত হয়েছে। 

মোক্তার সাহেব কিছু বললেন না, ফোন সোবহান সাহেবকে দিয়ে দিলেন। সোবহান সাহেব ক্ষমতাশালী মানুষ উনি নিজের পরিচয় দিয়ে পুলিশকে অনুরোধ করলেন এম্বুল্যান্স এ করে পাঠায় দেয়ার জন্য এই কমিউনিটি সেন্টারে। আর কাউকে কিছুই এ দুজন বললেন না, সামিয়া বার বার জিজ্ঞাসা করতে লাগলো নিলয়ের নাম্বারে ফোন যাচ্ছেনা কেনো। কখন আসবে ও, আপনারা কিছু বলছেন না কেনো। মোক্তার সাহেব বললেন মামুনি একটু অপেক্ষা করো আসছে নিলয়। কিছুক্ষণ পরে এম্বুল্যান্স এলো বের করা হলো একটি কফিন সবাই নিচে নেমে গেলো। কফিনের মুখ খুলতেই চারিদিকে একটা শোরগোল পড়ে গেলো, এম্বুল্যান্স এর ড্রাইভার বললো সমগ্র শরীর নষ্ট হয়ে গেছে শুধু মুখটাই ভালো আছে আর কিছুই দেখার মতো নেই। সামিয়া এক বার তাকিয়েই কফিনের উপর পড়ে গেলো মেয়ে কলিগেরা টেনে তুললো মুখে চোখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করা হলো অনেক, কিন্তু না জ্ঞান ফিরলোনা।

এম্বুল্যান্স এর সাথে আসা ডাক্তার বললেন, ওর জ্ঞান আর ফিরবেনা। সকলের অশ্রুজল মিশে গেলো, তিনটি লাশ - নিলয়ের মামা, নিলয় আর তার পাশে সামিয়ার লাশ পাশাপাশি রাখা হয়েছে, দুটি এসেছিলো আর একটি বেড়ে তিনটি হয়েছে। নিলয় দের নিহত ড্রাইভারকে আগেই ড্রাইভারের গ্রামের বাড়ি পাঠায় দেয়া হয়েছে।

সোবহান সাহেবের একক তত্ত্বাবধানে তিনজনের লাশ নিয়ে যাওয়া হলো নিলয়ের গ্রামে, নিলয়ের বাবা মা সহ অনেক আত্নীয় স্বজনের লাশ এখানে দাফন করা হয়েছে। নিলয়ের পাশে সামিয়ার লাশ দাফন করা হলো। মোক্তার সাহেব, সোবহান সাহেব সহ সকল কলিগ এবং গ্রাম বাসির চোখের জলে সিক্ত হলো নিলয়ের আর সামিয়ার লাশ। গ্রামের গৃহবধুরাও অশ্রু বিসর্জন করলেন, দুটি হৃদয় সামাজিক বন্ধন প্রতিষ্টিত না হলেও যে বন্ধন প্রতিষ্টিত হয়েছিলো তা ছিন্ন করতে পারিনি তাই নিলয়ের লাশ দেখেই সামিয়ার হার্ট ফেইল হয়ে গেছিলো। কবর দেয়া শেষ সবাই হাত তুলে দোয়া করলো, সোবহান সাহেব ওদের দুজনের কবর ঘিরে দিলেন নিজ খরচে। কিছুদিন পরে দুই কবর দেয়াল পেচিয়ে উঠলো স্বর্ণলতা। আরো ফুটলো নানা ধরনের জংলি ফুল। 
সবাই ভুলে গেলো একে একে,,,সামিয়া-নিলয়ের অফিসের ডেস্কে যারাই বসেছে তারাই শুনেছে তাদের গল্প। তারাও ভাবে তাদের কথা, বিয়ের কনে আর বর দুই কপোত কপোতির বিয়ের সাজে কফিন বন্ধি হওয়ার গল্প। বিবাহবার্ষিকী হয়েছে তাদের মৃত্যুবার্ষিকী। 

যারা কবর খুড়তে আসে তারা ঐ কবর দুটির দিকে তাকিয়ে অজান্তে ঝরায় অশ্রু। আরো দুজন আছেন মোক্তার সাহেব আর সোবহান সাহেব, প্রতি বছর আসেন এই কবরস্থানে সেই বিবাহবার্ষিকীতে, সাথে আসে আরো কিছু মানুষ যারা নিলয় আর সামিয়ার সাথে চাকরি করতো। যারা নতুন এমপ্লয়ি তারাও কেউ কেউ আসে গল্প শুনে দুই অতৃপ্ত মানব মানবীর সমাধি দেখতে। নিলয় আর সামিয়ার ভালোবাসার অশ্রু জল সিক্ত করে দিলো লেখককেও, লেখকের একান্ত কামনা আর কোনো সামিয়া-নিলের যেনো এমন ভাগ্য না হয়। নিল আর সামিয়ার বিবাহবার্ষিকী এভাবেই ফিরে ফিরে আসে আর পালিত হতে থাকে অশ্রুজলে।

★Writter: Md. Abidur Rahman, MBA (Regular programme)  From. Institute of Business Administration, Dhaka University

Wednesday, April 22, 2020

ভালোবাসার ডাকপিয়ন আর নীল শাড়ি পরা পরি

সেই দিন গুলোর মধ্যে একটি যেদিন BRTC দোতলা বাসে উঠে পছন্দসই জানালার পাশে বসার পরে নামে ঝুম বৃষ্টি। জানালার কাচ ইঞ্চি খানেক ফাকা করে ওখানে মাথা বাধিয়ে বৃষ্টির ছাট লাগাতে লাগাতে ভার্সিটির দিকে যাওয়া। সেদিন মনেই হয় যে যদি শহরটা জ্যাম বেধে স্তদ্ধ হয়ে যেতো অথবা সারাদিন বাস চলতে থাকতো। আর তার সাথে চলতো বৃষ্টি অঝোর ধারায়। 
যাই হোক এমন রোমান্টিক আবহাওয়ার মাঝেই, বেরসিক ভাবে বেজে উঠলো ফোনের ভাইব্রেটর। ফোন তুলেই দেখি আমার কাজিন নীলিমা। ও চাকরি করে হোটেল রাজমনি ঈসা খাঁ'এ রিসিপশনিষ্ট হিসেবে। আমি ওকে খুব পছন্দ ও করি, আমার থেকে বয়সে ১ বছরের বড় তার পরেও সম্পর্ক বন্ধুর মতো। 
যাই হোক ফোন ধরেই বললাম আপু তুমি, কি মনে করে ফোন দিলা, কেমন আছো। ও খুব উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো শিমু জানিস আমি একটা ছেলেকে বিয়ে করতে যাচ্ছি তুই আসতে পারবি বিকালে। আমার পুরো নাম শিমুল, আপু আমাকে আদর করে শিমু বলে। আমি কখনোই এত উচ্ছাস ওর কন্ঠে শুনিনি আগে। আমি, বললাম তুমি বলেছো যখন নিশ্চই আসবো। ও বললো আচ্ছা তুই বিকালে পেট্রোবাংলা অফিসের সামনে চলে আসিস। আমি ওখানেই থাকবো। আমি বুঝলাম যে নিশ্চই সাক্ষী দিতে হবে।
ফোন রেখে দিতেই,, আবার কল এলো। দেখি খালা ফোন দিয়েছেন, উনি হলেন নীলিমার মা। 
ফোন রিসিভ করে বললাম আন্টি আসসালামু আলাইকুম। উনি উত্তর দিয়েই বললেন, "খবর শুনেছিস, নীলিমা বিয়ে করতে যাচ্ছে একটা গাধাকে। গাধাটার নাকি যমুনা ফিউচার পার্কে একটা শো রুম আছে। জামা কাপড়ের। আর কোনো কিছুই নেই। চাকরি বাকরি করেনা, ওগুলোর ইচ্ছাও নেই, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি থেকে রসায়নে মাস্টার্স কমপ্লিট, অথচ কিছুই করেনা, এই লিখাপড়া দিয়ে কি হবে যদি চাকরিই না করে। আর ওর বাবাটাও একটা ভবঘুরে। তুই ই বল এমন ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দেয়া যায়, বেকার চালচুল নেই৷ অকম্মার ঢেকি"
আমি বললাম "জি খালা, আমি তো শুনেছি, আমার এতে কিছুই করার নেই।"
উনি বললেন, "তোকে কিছু করতেই হবে, ওই অকম্মা ছেলেটাকে একটা উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে, ওর ঠিকানা বের কর, আর আমার মেয়েটার সামনে তো কিছুই করা যাবেনা, আক্কাসকে নিয়ে যা, আর নীলিমার সাথে কথা বল, ছেলেটার ঠিকানা নীলিমার কাছ থেকে তুই ভুল ভাল বলে বের করবি, আক্কাসকে দিয়ে ওকে কি ভাবে ধরে জেলের ভাত খাওয়াতে হয় আমি জানি।"
আমি বুঝলাম যে আজ আর ভার্সিটি যাওয়া হবেনা। বাস কেবল নদ্দা থেকে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত গিয়েছিলো। ওখানেই নেমে গেলাম। নেমে খালার বাসা মগবাজারে যেয়ে আক্কাসকে সাথে নিলাম। আমার খালু বেচে নেই। খালু ইমতিয়াজ উদ্দিন সাহেব ছিলেন বড় ব্যাবসায়ী, ঢাকার সবাই তাকে প্রায় চিনে। খালার বাসার সব কাজ কর্ম আর খালার সাথে খালুর সেই সব ব্যাবসা এই আক্কাস দেখাশোনা করে। তবে আক্কাসকে শুধুমাত্র কাজের লোক বলা ভুল। ওর বেতন ১০ হাজার টাকা। ও মূলত সকল কাজের কাজী, বন্দুক, গাড়ি সব চালাতে পারে। ঢাকা শহরে সকল যায়গায় ওর হাত আছে। খালাকে ও বড় বোন বলে মেনে নিয়েছে।
যাই হোক আমি আক্কাসকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। নীলিমাকে ফোন দিয়ে বললাম আপু তুই তো আমাকে বিশ্বাস করিস তাইনা। 
ও বললো, "পাগল নাকি তুই, নিশ্চই কাকে বিয়ে করবো ওকে দেখার জন্য আমার আম্মু তোকে নিয়োগ করেছে?"
আমি বললাম, "হ্যা, তাই, এখন বল আমি আগে থেকেই ব্যবস্থা করি"
নীলিমা ঠিকানা বললো আমাকে। আমি টুকে নিলাম মোবাইল নোটে।
আক্কাস বললো "মামা চলেন যাই। কোথায় আছে হতচ্ছাড়া টা। এই দেখেন পকেটে কি নিয়ে আসছি, এটা ওর পকেটে সিস্টেম করে ঢুকিয়ে দিবো। দিয়ে থানায় কল দিয়ে পুলিশে দিবো।"
আমি জিনিসটা দেখে ওকে ফেরত দিলাম, বললাম এটা কি, ও বললো, আরে মামা এখনো চিনেন না, এ হলো ইয়াবা।
আমি বললাম আচ্ছা শোনো, তুমি মাঝে মাঝে রুপনগরে যাও, কেনো। 
ও একটু হতভম্ব হয়ে বললো, "আপনি কেমনে যানেন। মামা আপাকে বলিয়েন না, উনি রাগ করবেন, প্লিজ।" একেবারে অনুনয়ে গলে পড়লো।
আমি সবজান্তার হাসি হাসলাম। আমি মুলতঃ তিন্নি নামক একটা মেয়েকে পড়াতে যাই, রুপনগর বাজারের পাশে। তিন্নির বাবা এই এলাকার এক নম্বর মস্তান, যত প্রকার চাদাবাজি হোক সবই তিনি করেন। তবে আমার এখানে প্রচুর সম্মান, উনি তার মেয়ের টিচার হিসেবে আমাকে দেখলে যেখানেই হোক না কেনো উঠে দাড়িয়ে সালাম দেন। একদিন তিন্নি আমাকে বললো, "ভাইয়া দেখেন, ঐ লোকটি আমার বড় আপু তানিশার সাথে প্রায়দিন গল্প করে, আব্বুকে বলেছি, আব্বু ঐ লোকটাকে এমন শিক্ষা দেবে যে কয়েক জনম মনে থাকবে।"
আমি দেখি সেই লোকটি আক্কাস। 
আমি আক্কাসকে বললাম, ওর নাম তো তানিশা তাইনা, আক্কাস আমার হাত ধরে বললো মামা, প্লিজ পায়ে পড়ি, এ কথা আপনার খালা যেনো না জানে। 
আমি বললাম, ঐ মেয়েকি তোমাকে পছন্দ করে, তোমাদের সমস্যা কোথায়?"
আক্কাস বললো ওর বাবাই তো সমস্যা, উনি আমাকে দেখতেই পারেন না। অনেক বার ভেবেছি তোমার খালা তো আমার বড় বোনই হয় সম্পর্কে, উনার অনেক নাম ডাক আছে, আপার ছোট ভাই এ কথা বললে হয়তো রাজি হবে তানিশার বাবা। আমি আগের সব রংবাজি ছেড়ে দিয়েছি, আজকেই আপনার সাথে বের হলাম আপার কথায়। 

আমি বললাম, আচ্ছা চলো তাইলে একটা মিশনে যাই। খালার কাছে ফোন দিয়ে বললাম খালা কাজের জন্য ৫০ হাজার টাকা লাগবে লোক ম্যানেজ করতে। 
খালা বললো আচ্ছা, আক্কাসকে তুলে নিতে বল কার্ড দিয়ে, ওর কাছে কার্ড রাখা আছে আমার।
আমি আক্কাসকে বললাম আক্কাস মামা, ৬০০০০ টাকা তুলে নাও তো দেখি। 
আক্কাস আর কিছুই বলছেনা, তুলে নিয়ে আমার হাতে টাকা টা দিলো। আমি একটা উবার ভাড়া করে যমুনা ফিউচার পার্কে এলাম, নীলিমার বয়ফ্রেন্ড এর শো-রুমে, ওকে পরিচয় দিলাম এভাবে যে আমরা ওকে দেখতে আসছি, আমি নীলিমার সবচেয়ে কাছের ছোটো ভাই। 
দেখলাম একটা নিখাদ ভদ্র ছেলে। নাম সাজিদ, ওর বাবা মি. আশফাক আমিন, তিনি কোনো কাজ করেন না, শুধুমাত্র দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ান, ভদ্রলোকের প্রচুর টাকা। আমি আগেই জানতাম  সাজিদও শিক্ষিত, কিন্তু ব্যাবসা করছে কেনো জিজ্ঞাসা করতেই বললো, ভাইয়া টাকার তো সমস্যা নেই।৷ আমার ব্যবসা ভালো লাগে কেনো চাকরি করবো। আমি দেখলাম আসলেই অনেক বড় শো-রুম অন্তত কয়েক কোটি টাকার মালামাল, কর্মচারী ২০/২২ জন। আক্কাস শুধু খুতখুত করছে, কখন কাজ শেষ করবে, আমি ওকে ইশারায় মানা করলাম।
আমি বিভিন্ন ভাবে কথা বলে এটা শিউর হলাম যে সে নীলিমাকে আসলেই অনেক পছন্দ করে।
 তার পর আমি খুব দামী একটা শাড়ি নিলাম ১৭ হাজার টাকা দিয়ে, আক্কাসের জন্য এক টা দামি প্যান্ট আর শার্ট কিনলাম৷ তার পরে বেরিয়ে এলাম।
আক্কাস বললো মামা কাজ তো হলোনা।
আমি বললাম দেখো কি হয়, বলে বেরিয়ে এসে, একটা উবার নিয়ে রুপনগরে এলাম তিন্নি দের বাড়ি। আক্কাসের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে, তানিশা আমাদের দেখে আর সামনে আসছেনা। আমি তিন্নিকে বললাম তোমার বাবাকে ফোন দাও। 
ওর বাবা আসলো উনি এসে মাথা নিচু করে বসে থাকা আক্কাসকে দেখে রেগে গেলেন, বললেন এ এখানে কেনো। 
আমি বললাম, আংকেল ওর কথা বাদ দিন, পরে বলছি। আগে আপনি বলেন, ইমতিয়াজ সাহেব কে চিনতেন, রেবা গ্রুপের মালিক। 
তানিশার বাবা বললো, জি স্যার, উনাকে কে না চিনে। এতো বড় বিখ্যাত একটা মানুষ,  আহা হঠাৎ করেই মারা গিয়েছিলেন।
আমি বললাম, উনার এক মাত্র শ্যালক এর সাথে আপনার মেয়ে তানিশার বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছি। 
উনি বললেন সে তো খুব খুশির খবর, তা পাত্রের ছবি দেখান।
আমি বললাম,, এই হলো আমাদের পাত্র, আক্কাসকে দেখিয়ে বললাম। 
উনি চুপ চাপ কিছু বললেন না, তার পর উঠে দাড়ালেন, দেখি আক্কাস একদম ঘেমে লাল হয়ে গেছে। উনি উঠে দাড়িয়ে বললেন তানিশা এদিকে আয়তো।
তানিশা কাপতে কাপতে এসে বললো, বাবা বলো। ওর মাও এসে দাড়ালো পাশে।
আক্কাস কে দেখিয়ে বললেন, একে পছন্দ হয় তোর। 
তানিশা কিছু না বলে ওর মাকে জড়িয়ে ধরলো। 
আংকেল বললেন, মা, তানিশা তুই আমাকে কিছু না বলে লুকিয়ে ওর সাথে দেখা করিস, আমি এতে খুব কষ্ট পেয়েছি৷ তবে তোর স্যার প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন আমি সানন্দে গ্রহণ করলাম। 
আক্কাস কে বললাম, মামা তোমার কোনো আপত্তি আছে। 
আক্কাস কিছুই বলছেনা, ও হতভম্ব হয়ে গেছে।
আমি তানিশার জন্য আনা শাড়িটা তানিশার হাতে দিলাম দিয়ে বললাম এটা তোমার জন্য বিয়ের আগেই আমার পক্ষ থেকে উপহার। ওর চোখ দিয়েও পানি ঝরছে। আমি ওকে বললাম, আমাদের সাথে একটু যেতে পারবা। ও বললো হ্যা পারবো। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখি তানিশার পাশা পাশি তিন্নিও রেডি হয়ে এসে আমার হাত ধরে বললো ভাইয়া আমাকেও নিয়ে চলেন না সাথে। আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম আচ্ছা চলো।

আমি আর সময় নিলাম না। বেরিয়ে এলাম, আংকেল বললো, স্যার যান। কালকেই আমরা যাবো আপনার খালার সাথে দেখা করতে।
আমি বাইরে এসে, তিনজনকে নিয়ে একটা উবারে উঠে কাওরান বাজার চলে এলাম, আসতে আসতে ৩ টা বেজে গেলো। ইতিমধ্যে নীলিমা একবার ফোন দিয়েছিলো আমার কাছে, আমি বললাম সব ঠিক আছে আসো৷ 
ওরা ৪ টার দিকে পেট্রোবাংলা অফিসের সামনে এলো। আমি, আক্কাস আর তানিশা ইতিমধ্যে চা নাস্তা করেছি। আক্কাস আমার হাত ধরে বলেছিলো মামা আপনি আমাদের জন্য যা করলেন, আসেন আমরা অন্তত খাওয়া দাওয়া করি।
আমি বললাম না, খাওয়া দাওয়া করবোনা এখন একবারে বিকালে করবো, একটা অনুষ্ঠান আছে তার পরে। আর তোমার জন্য যা করলাম তা এমনি এমনি করিনি। দেখি তুমি এর জন্য আমাকে কি দিতে পারো। 
নীলিমা আর সাজিদ আমাদের কে নিয়ে কাছাকাছি এক কাজি অফিসে নিয়ে গেলো। সাজিদ বললো ওর কিছু বন্ধু আছে যারা সাক্ষী দিবে, আর নীলিমা বললো শিমু তুই সাক্ষী দিবিনা, আমি বললাম নিশ্চই দিবো। তানিশা বললো ভাইয়া, আমি আর তিন্নি ও সাক্ষী হবো। তবে আমি একা একজন ছেলে, তানিশা আর তিন্নি দুজন যেহেতু মেয়ে তাই আরো একজন ছেলে লাগবে। আমি বললাম তাহলে সাজিদ ভাইয়ের বন্ধুরা আসুক। দেরি হয় হোক।
পাশের থেকে আক্কাস আমার হাত ধরে বললো, মামা আমি সাক্ষী দিবো৷ 
আমি বললাম সেকি আক্কাস তোমার না অন্য কাজ ছিলো। আক্কাস বললো,, থাক সে কাজ, আমি ওটা ফেলে দেবো বাইরে। 
বিয়ে হয়ে গেলো নীলিমা আর সাজিদের, সন্ধা হয়ে গেলো, সাজিদ আর নীলিমা প্রচুর টাকা নিয়ে এসেছিলো খরচ বাবদ। দেনমোহর ধরা হয়েছিলো মাত্র ২ লাখ টাকা। সাজিদ ১লাখ ৫০ হাজার টাকা দিলো নগদ, আমি নীলিমাকে বললাম আপু তুই কত এনেছিস বিয়ের খরচ বাবদ ও বললো ৬০ হাজার। 
আমি বললাম দাও আমাকে। 
ও কোনো কথা না বলে দিয়ে দিলো। আমি সাজিদের টাকার সাথে এই টাকার ৫০ হাজার যোগ করে ২ লাখ বানিয়ে নীলিমাকে দিয়ে বললাম এটা তোমার দেনমোহর পরিশোধ। 
আর বাকি টাকা আর সকালে তুলা খালার টাকা থেকে বিয়ের খরচ মিটিয়ে বাইরে বেরিয়ে সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করে নিলাম। আমি সাজিদকে বললাম, ভাইয়া তোমার বাবা কোথায়, তিনি কি রাজি হতেন না?
সাজিদ বললো উনি রাজি, এইযে উনি অলরেডি দুটা ভিসা পাঠিয়ে দিয়েছেন আমেরিকা যাওয়ার জন্য। নীলিমাকে নিয়ে। ওখানেই যাবো প্রথম হানিমুনে। 
আমি বললাম তাহলে, আজ তোমরা যার যার বাসায় যাও, নীলিমা আপু তোমার তো আজকে সাজিদ ভাইয়ের বাসা, হাসতে হাসতে বললাম। আর আক্কাস মামা তুমি তানিশা আর তিন্নিকে পৌছে দিয়ে আসো। আমি খালার সাথে দেখা করে আসি। কিছু তো বুঝাতে হবে। তিন্নি যাওয়ার সময় আবার আমার পাশে এসে আমার হাত ধরে বললো ভাইয়া, সাবধানে থাকবেন। আমি হাত ছাড়িয়ে বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি খালার বাসায় আসলেই খালা বললো আক্কাস কই, ওকে থানায় ভরা হয়েছে তো। 
আমি হতাশ সুরে বললাম, জি খালা কাজ তো হয়ে গেছে কিন্তু ওরা তো আরো ১ সপ্তাহ আগেই বিয়ে করেছে। তুমি ভুল ইনফরমেশন দিয়েছো।
আমার কথা শুনেই খালা হাত পা ছড়িয়ে কান্না শুরু করলেন, "এই জন্যই মেয়েটা আমার পাল্টে গেছে, আমার কি হবে, শেষ পর্যন্ত ঐ হতচ্ছাড়াটা আমার জামাই। আমি কখনোই মেনে নিবো না। "
হাফ ঘন্টা পরে আমি চলে যাচ্ছিলাম, খালা বললেন শিমুল, এক কাজ কর, আমি ওকে মেনে তো নিবোনা, কিন্তু বিয়ে যখন হয়ে গেছে, ওই ছেলেটাকে থানা থেকে বের করে আন, আমার মেয়েটা একা একা রয়েছে। আর হ্যা একটা কথা,  আমার বাড়ি, নীলিমা আর ওই বদমাশটার জন্য অফ এটাও বলে দিস। ছাড়ানোর জন্য যা লাগে আক্কাসকে তুলে নিতে বলিস।

আমি বললাম খালা, এই মেয়েটি কেমন লাগে তোমার কাছে (তানিশার ছবি দেখিয়ে বললাম), খালা বললেন তোর জন্য। আমি বললাম না খালা আক্কাস মামুর জন্য৷ বেচারি তো তোমার সেবাই করে সারাদিন। খালা ভালো করে দেখে বললেন এমন সুন্দর একটা মেয়ে আক্কাসকে বিয়ে করবে, ও তো হিসেবে আমাদের কাজ কর্ম দেখা শোনা করে।
আমি বললাম তুমি আক্কাসকে যে ভাই বলো, এটা হলেই তো হয়ে যায়৷ তোমার কথায় রাজি সবাই হবে। খালুর নাম ডাক অনেক ছিলো, তোমারও কম নয়। খালা বললেন এমন সুন্দর মেয়েটা আসতে চাইলে, আক্কাসকে আমি আমার কাজিন হিসেবেই ভাই বানিয়ে দিবো, আর আমি সত্যিই তো আক্কাসকে আমার ভাইয়ের মতোই জানি। আমার মেয়ে তো চলেই গেলো, এই মেয়েটাকে বাড়ি রাখবো। 
আমি খালাকে বললাম, ঠিক আছে, খালা তাহলে কালকে ওদের আসার ব্যবস্থা করতেছি। 
আমি আক্কাস, আর তানিশাকে ফোন দিলাম। ওদেরকে বুঝায়ে বললাম যে কাল তোমরা এসে যেনো নীলিমার বিয়ের খবর কাউকে দিয়োনা, তাইলে খালা খুব রাগ করবে, আর ষড়যন্ত্রকারী ভাবতেও পারে রাগের বশত। ওরা বললো শুধু আমরাই জানি। তানিশা বললো তিন্নিকেও নিষেধ করে দিচ্ছি।
পরদিন তানিশারাও এলো, সাথে ওর বাবা, মা, তিন্নি। খালা একদম বড় বোনের মতো আক্কাসের ব্যাপারে দায়িত্ব নিয়ে কথা পাকাপাকি করতে লাগলেন।
আমার কিছু ভালো লাগছিলো না। আমি, একটা রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পরে দেখি তিন্নি আমার রুমের দরজায় এসে বলছে ভাইয়া আসবো। 
হ্যা আসো৷ দেখলাম নীল শাড়ি পরে আসায় ওকে খুব সুন্দর লাগছে। এসে বললো, ভাইয়া কেমন লাগছে আমাকে?'
আমি বললাম বিউটিফুল মেয়ে। 
ও বললো, আপনি একবার বলেছিলেন শাড়ি পরা মেয়ে আমার ভালো লাগে।
আমি বললাম, ও আচ্ছা তাই বুঝি৷ তুমি কি কিছু বলবা এখন?
তিন্নি বললো না ভাইয়া, এমনিতেই এলাম।
আমি বললাম এক কাজ করো খুব ঘুম আসছে আমার, পরে কথা বলবো। 
বলে পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষণের মাঝে ঘুমিয়েও পড়লাম, কিন্তু যতক্ষণ জেগে ছিলাম, ওর যাওয়ার আভাস আমি পাইনি।
কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম বুঝিনি, তবে ঘুম ভাংলো তিন্নির ডাকে, ও আমার হাতে ধাক্কা দিচ্ছিলো আর বলছিলো, ভাইয়া ওঠেন, আপনার খালা ডাকছে নিচে। 
আমি উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে নিচে এসে দাড়ালাম, তিন্নি আমার পেছন পেছন এসে পাশে দাড়ালো, আমি এগিয়ে যেয়ে খালার পাশের একমাত্র ফাকা যায়গাটায় বসে পড়লাম। ওদের বিয়ের ডেট ঠিক হয়ে গেলো।

এক সপ্তাহ পরে আক্কাসের বৌ হিসেবে তানিশা এই বাড়ি চলে এলো।
খালা তাকে বরণ করে নিলেন, আজ খুব কান্না করছেন খালা। তানিশা জিজ্ঞাসা করলো আমি আপনার ভাই বৌ, আপনার ছোট। আপনার কাছ থেকে ভালোবাসা চাই, কোনো অধিকার চাইনা। 
খালা বললেন, এমন বলোনা, আমার মেয়েটার কথা খুব মনে পড়ছে। 
তানিশা বললো, শিমুলকে বলেন ও কিছু করতে পারবে।
খালা বললেন কিভাবে বলি ওকে, আমি সাজিদকে জেলে পর্যন্ত পাঠিয়েছি। দেখি তাও শিমুলকে বলি।

খালা আমাকে ডেকে ১০০০০ টাকা হাতে দিয়ে বললেন, শিমুল নীলিমাকে খুব মনে পড়ছে। একটু ব্যাবস্থা কর। যাওয়ার সময় ওদের জন্য মিষ্টি নিয়ে যাস।
আমি আর কি করবো, নীলিমাকে নিয়ে আসলাম, সাজিদও এলো। ওরা এসেই খালাকে কদমবুসি করলো। খালা বললেন, "কি করে তোদেরকে ছেড়ে আমি থাকবো।" আক্কাস আর তানিশাও পাশে দাড়িয়ে আছে, ওদের চোখে ও পানি।
আমি বললাম, খালা আমরা স্যরি। খালা বললেন, কিসের জন্য।
আমি সব খুলে বললাম। খালা আমাকে বললেন থাক আর বলতে হবেনা, তুমি অনেক পেকে গেছো। তোমার ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
আমি বললাম, এখন সব দোষই তো আমার, ওকে ঠিক আছে। 
নীলিমা আপু, আমাকে বললেন, শিমু তুই কাল তোর দুলাভাইয়ের দোকানে আসিস কালকে। তোকে এক সেট জামা কাপড় দিবো।
আমি বললাম, না তোমাদের জামা কাপড় নিয়ে আমি কি করবো। আমার আছে। 
আপু বললো, তুই না আসলে আর কখনোই আমাকে আপু বলে ডাকবিনা। 
আমি বললাম, "জো হুকুম মহারানী" বলে হেসে বেরিয়ে এলাম।

পরিশিষ্টঃ
আমার, বাসায় এসে ঢুকতে ঢুকতে ১১ টা বেজে গেলো। খালা অবশ্য থেকে আসতে বলেছিলো কিন্তু আমার নিজের বিছানা ছাড়া ভালো ঘুম হয়না। ১১ টা ৩০ এর দিকে আবার কল বেজে উঠলো, একটা অচেনা নাম্বার, রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশের কন্ঠস্বরটি বললো, শিমুল তুমি কি আমাকে তোমার হাত দিয়ে ধরবে। আমি তোমার মুঠোর মধ্যে নিজের হাত দিতে চাই। তোমার বুকে মাথা রেখে তোমার মুখের উপর চুল গুলি ছড়িয়ে দিতে চাই। তোমার কোলে বসে তোমার বুকের ভেতরে ঢুকে যেতে চাই। আমাকে জড়িয়ে ধরে রাতের বেলা ঘুম পাড়িয়ে দেবে তুমি। অভিমান করবো তুমি আমার গাল টিপে দেবে। আমি মুখ ঘুরিয়ে নিবো, তুমি আমাকেই ঘুরিয়ে কোলে টেনে নেবে। আমার তপ্ত ঠোটে তুমি ঠোট রাখবে। আমি হারিয়ে যেতে চাই তোমার ভেতরে। কম্পমান আমার এই দেহটাকে তুমি শরীর দিয়ে আকড়ে ধরে রাখবে আর মন বেধে রেখো মনে। 

আমি বললাম, তুমি সত্যিই থাকবে তো।
ওপাশ থেকে বললো, "তুমি আমার চোখে তাকিয়ে দেখো এসে"
আমি বললাম, "আসবো দেখতে তোমার চোখ, তোমাকে আমি এখন থেকেই আমার মন পরি বানিয়ে নিলাম"
ও বললো কাল এসোনা বোটানিক্যাল গার্ডেনে, ন্যাশনাল জু এর পাশে। আমি থাকবো অপেক্ষায় তোমার। বলো কোন রং এর শাড়ি পরে আসবো।
আমি বললাম, নীল শাড়ি।
পরের দিন, হালকা আকাশী রং এর শার্ট আর জিনসের একটা প্যান্ট গায়ে চাপিয়ে, একটা পাঠাও বাইক নিয়ে চলে গেলাম বোটানিকাল গার্ডেনে। গেটের মুখ থেকে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ কিনে নিলাম। ভেতরে ঢুকেই দেখি, আমার নিশী রাতের পরিটি বসে আছে একা এদিকেই চেয়ে। আমি কাছে যেতেই বললো কেমন আছেন আপনি। 
আমি বললাম, এখন আবার আপনি হলাম ক্যামনে। ওর হাতটি ধরে মুঠোর মাঝে নিলাম, ও উঠে দাড়ালো। আমরা হাটা শুরু করলাম।
ও বললো, ফুল গুলি কাকে দিবে তুমি।
আমি বললাম ফুল তো আমি হাতে নিয়েই ঘুরি, বলে ওর পেছনে গিয়ে গুচ্ছটা খুলে, চুলের খোপায় গুজে দিলাম একটা গোলাপ, ও আমাকে হ্যাচকা টান দিয়ে সামনে এনে ঠোটে একটা চুমু দিয়ে অস্ফুটে বললো, ভালোবাসি তোমাকে। 

[পাঠক পাঠিকারা নিশ্চই বুঝে গেছেন, শিমুলের নিশী রাতের পরিটি কে। লেখক তাদের জন্য শুভ কামনা করছেন, ভালো থাকুক তারা]

Writer: Md. Abidur Rahman, MBA form Institute of Business Administration (IBA), Dhaka University.