Wednesday, May 27, 2020

অসমাপ্তের সমাপ্ত গল্প- The Finished Story of an unfinished Goal

সামিয়ার আজ অফিসটা বড় খালি খালি লাগছে কেমন যেনো একবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে চোখে আকুলতা নিয়ে। সম্বিত ফিরে পেলো মোক্তার সাহেবের কথায় উনি আবার খুব হাস্যরসিক মানুষ আর অফিসের সকলের সাথেই খুব আন্তরিক। উনি বললেন কি ব্যাপার মামুনি নিল সাহেব আসেননি বুঝি। সামিয়া হেসে বললো না স্যার তেমন কিছু না কিন্তু নিলয় আজকে আসেনি কেনো।

মুক্তার সাহেব হলেন অফিসের ম্যানেজার, উনি বললেন আজ নিলয়ের খুব জ্বর তাই ছুটি নিয়েছে। সামিয়ার মুখটা কালো হয়ে গেলো শুনে। ও তাড়াতাড়ি কাজে মনযোগ দিলো আজকের মধ্যে আলফা গ্রুপের ফাইল গুলো দেখে দিতে হবে। সামিয়া নিলয় এরা দুজনেই মুলত প্রথমসারির একটা প্রাইভেট বিজনেস এন্যালাইসিস কোম্পানিতে জব করে। সামিয়া আর নিলয় একই ডেস্কে কাজ করে ওরা রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট সেকশনে। ওদের কাজও অনেক। তবে কাজ যতই হোক সামিয়া আর নিলয় কাজের ফাকে ফাকে নিজেদের গল্প ও শেয়ার করে নিয়েছে। আর অফিসে কেউ কারো ব্যাপারে নাক গলায় না। আর সামিয়া আর নিলয়ের ডেস্কে কাজের প্রচুর চাপ কিন্তু তারা খুবই আন্তরিক আর অন্যান্য দের থেকে ভালো পারফরম্যান্স দেখানোয় কোম্পানির মালিক সোবহান সাহেব আর ম্যানেজার মোক্তার সাহেব তাদেরকে আলাদা চোখেই দেখেন। মোক্তার সাহেব সম্পর্কে সোবহান  সাহেবের বড় চাচা তিনি অফিসের সকলকেই প্রায় তুমি করে বলেন।

সামিয়া নিজে থেকেই বড় হয়েছে বলতে গেলে এক চাচার ঘরে পালিত হয়েছে ছোটোবেলায়। কারন ক্লাস ফাইভে থাকার সময় সামিয়ার বাবা মা সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন তার পর চাচা সকল সম্পত্ত্বি নিজেই ভোগ দখল করেছেন বিনিময় হিসেবে SSC পর্যন্ত সামিয়াকে দেখভাল করেছেন এ কথা তো সকলেই জানে। কিন্তু তিনি এমন ভাব দেখান যে সামিয়ার বাবা মা কিছুই রেখে জাননি। তিনিই কোলে পিঠে করে বড় করেছেন, অবশ্য সামিয়াও মেনে নিয়েছে। ও লেখাপড়ায় ভালো ছিলো। শহরের বড় কলেজে বৃত্তিসহ চান্স হয়ে যায়। HSC এর পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপ এ অনার্স মাষ্টার্স করেছে। আর নিলয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর IBA থেকে পড়াশোনা শেষ করে এই অফিসে চাকরি পেয়েছে। আর চাকরি পাওয়ার পরে দুজন এক সেকশনে হওয়ায় আর নিলয়ের উদাসিন স্বভাবের জন্য সামিয়ার সাথে ভালো সম্পর্ক। কেউ কারো সাথে প্রেম করে এমনটা নয়, কিন্তু অন্যেরা তাই মনে করে। 

তো সেদিন সামিয়া একা হাতেই বলতে গেলে দুজনের কাজ সামলে নেয়। বিকাল ৫ টায় অফিস থেকে বের হয়। ওদের অফিস ইসিবি মোড়ে। সামিয়ার বাসা কুড়িলে আর নিলয়ের বাসা নদ্দায়। সামিয়া আর নিলয় প্রতিদিন এক সাথেই বাসায় ফিরে আসে। সামিয়া নেমে যায় কুড়িলে আর নিলয় নামে নদ্দায়। আজকে কুড়িল পর্যন্ত এসে সামিয়া কি মনে করে নামলোনা। সে নদ্দা এসে নামে। নিলয়ের বাসা সে চিনে। বাসার নিচে এসে নিলয় কে ফোন দেয়।
হেল্লো নিল কই তুমি বাসায়?
"হ্যা সামিয়া বাসায় আজ খুব জ্বর তাই অফিসে যাইনি, কেমন আছো তুমি?"
সামিয়া-"আমি নিচে দাড়িয়ে আছি বাসার তোমাকে দেখতে আসছি"
নিলয় সাথে সাথে বিছানা থেকে উঠে পড়ে ব্যাস্ত হাতে বিছানাটা গুছায়, কারন যা এলোমেলো করে রেখেছে পুরো ইজ্জতের বারোটা বাজা সারা।
যাই হোক তার পরে, সামিয়াকে নিয়ে আসে রুমে। সামিয়া এসে হাত মুখ ধুয়ে বিছানার এক পাশে বসে। নিলয়ের কপালে হাত দিয়ে দেখে কপাল পুড়ছে তাপে। সামিয়া বলে কি তুমি তো আমাকে জানাতে পারতে সকালে।
নিলয় বলে, "তোমার তো অফিস ছিলো, আর তোমাকে জানালে তুমি কি মনে করতে ভেবেই জানাইনি।"
সামিয়া বলে, "নিল তুমি আসলেই যেনো কেমন, আমাকে জানালে কি এমন হতো,, আচ্ছা কি খাইছো সকাল থেকে তুমি?"
নিলয় বলে, আজ তো আর রান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছেনা আর শরীর খুব খারাপ তাই বাইরেও যাইনি, বিস্কুট ছিলো মুড়ি ছিলো তাই খাইছি।
সামিয়া বলে শুয়ে পড় আমি দেখছি, কি করা যায়।
নিলয় বলে, "কেনো তুমি আর কি করবা, যাও বাসায় চলে যাও তুমিও অফিস করে ক্লান্ত, কিছু করতে হবেনা।"
সামিয়া বলে,, "চুপ থাকো, আমাকে উপদেশ দিতে হবেনা।"
নিলয় জানে এর পরে আর কোনো কথাই ও শুনবেনা তাই চুপ চাপ থাকে। 
সামিয়া বাসন কোসন ধুয়ে আলু ভর্তা ভাত চাপিয়ে দেয়, সাথে ডিম ভাজি। হাফ ঘন্টার মধ্যেই সব কমপ্লিট। করে বিছানার পাশে সব ঢেকে রেখে দরজা ভেতর থেকে লক করে বেরিয়ে যায় টেনে দিয়ে। কারন ততক্ষণে নিলয় ঘুমিয়ে গেছে।

নিলয়ের ঘুম ভাঙ্গে সামিয়ার ফোনে, ততক্ষণে রাত ৮ টা বেজে গেছে ও ঘুম থেকে উঠেই চারিদিকে দেখে লজ্জা পেয়ে যায় যে এত্ত কাজ করলো মেয়েটা অথচ তাকে বসতেও বললোনা, খেয়ে গেলেও তো পারতো। আসলে তো ওর ই দোষ অসময়ে ঘুমিয়ে পড়লো কেনো।
যাই হোক ওদিক থেকে সামিয়া বলে চলছে, "নিল উঠে পড়ো খেয়ে নাও, দেখো ভালো লাগবে, আর শোনো অবশ্যই খাবে কিন্তু আমার দিব্বি।
অনেক উৎকন্ঠা কিন্তু আবেগের সাথে কথা গুলো বলছে, শুনতে মনের ভেতরে ভালো লাগছে নিলয়ের। ২৬ বছর বয়সি এত বড় মেয়ে এমন ভাবে বলছে যেনো কত দিনের চেনা তার, কত অধিকারের সাথে বলছে। নিলয় বললো, " ঠিক আছে সামিয়া খেয়ে নিবো, কিন্তু তুমি চলে গেলে কেনো আমাকে ডাকতে পারতা এক সাথেই খাওয়া দাওয়া করতাম।" 
সামিয়ার কন্ঠে উচ্ছাসের প্রকাশ যেনো কথাটা তার কাছে ভালো লেগেছে, ও বললো, "এবার খেয়ে নাও তো নিল" কাল তো শুক্রবার আবার এসে রান্না করে দিয়ে যাবো।" 
নিলয় বলে "আচ্ছা এসো" এ কথা বলে ফোন রেখে দেয়, ফোনের দুই প্রান্তে থাকা দুটি হৃদয়েই যেনো কাশফুলের পরশ বুলিয়ে গেলো কেউ প্রকাশ করলোনা কেউ বুঝতেও পারলোনা কিন্তু দুজনেরই ঠোটের কোনে ফুটে উঠলো হাসি।

নিলয় হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসলো, ভাত আলু ভর্তা ডিম ভাজি সব খাওয়ার সময়ই যেনো মনে হচ্ছিলো এতে আলাদা একটা সেন্ট আসছে সামিয়ার। সামিয়ার হাতের ছোঁয়া লেগে আছে বলে মনে হচ্ছে। যদিও এর কোনো বৈজ্ঞানিক সত্যতা নেই কিন্তু খেতেও বড় আবেগ মনে হচ্ছে নিলয়ের কাছে,,, তাহলে কি সে কোনো অজানা পথে পা বাড়াচ্ছে। অজান্তেই কেপে উঠলো মন, সামিয়া যদি এসব না ভাবে, তাহলে বড়ই খারাপ হবে, সামিয়া খুব ভালো মেয়ে সে অসময়ে যত্ন করছে আর নিলয় কি সব ভাবছে। মনটা বড্ড ছেলেমানুষী করছে মনকে বুঝালো সে।

পরের দিন, আবার সামিয়া এলো আজ সে অতিরিক্ত কাপড় চোপড় নিয়ে এসেছে। এসে জোর করেই নিলয়ের পরা কাপড় গুলো ধুয়ে নেড়ে দিলো তার পর রান্না করলো। রান্না শেষ করেই গোসল করে সাথে আনা অন্য সেট জামা কাপড় পরে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। নিলয়ের জ্বর আজ কম, সে জানে তার জ্বর কখনোই দুই দিনের বেশি যায়না। কাল থেকেই সে অফিসে যেতে পারবে। সামিয়াকে নিলয় বললো "আজ এক সাথে খেয়ে যাও"
 সামিয়া বললো, "না ইচ্ছে হচ্ছেনা।" 
কোনো অনুরোধেই শুনলোনা সে যখন বেরিয়ে যাবে, শেষ বারের মতো নিলয় বললো "সামিয়া আজ এক সাথে না খেয়ে গেলে এগুলো যেমন আছে তেমনই থাকবে।" বলে ডান হাত দিয়ে সামিয়ার বাম হাত টেনে ধরলো। নিলয়ের সারা শরীর সিরসির করে উঠলো কারন সে এভাবে আন্তরিক ভাবে কখনোই ওকে ধরেনাই। অফিসে কাজের ফাকে অনেক সময় ছোঁয়া লাগে কিন্তু এভাবে কখনোই ওর হাত ধরা হয়নাই। নিলয়ের মনে হলো সামিয়াও কেপে উঠলো, ও ফিরে তাকালো যেনো অসীম সাগরের মত এক জোড়া চোখ। ডান হাত ঘুরিয়ে নিজের হাত থেকে নিলয়ের হাত ছুটিয়ে নিয়ে নিজেই ধরলো নিলয়ের হাত বললো "আমি খেয়ে গেলে খুশি তুমি নিল।" 
নিলয় বললো, "খুশি কিনা জানিনা তবে আজ না খেয়ে গেলে আর তোমাকে আসতেও হবেনা আর আমি খাবোওনা এসব।" 
সামিয়া ওর ঠোটের উপর আংগুল রাখে আর বলে চলো খেয়ে নেই।

দুজনে খাওয়া দাওয়া শেষ করার পর থালা বাসন আবার ধুয়ে দিয়ে সামিয়া চলে গেলো। ওর পাল্টানো কাপড় গুলো ও নিলয়ের ভেজা জামা কাপড়ের পাশে ধুয়ে শুকাতে রেখে গেছে। সন্ধা হতে হতে নিলয়ের শরীর ঝরঝরে হয়ে গেলো। ব্যালকনিতে যেয়ে সামিয়ার কাপড় গুলোর সাথে মিশে দাড়ালো যেনো বড় ভালো লাগছে ওর। এক সময় দুই হাতে জামা কাপড় গুলো আঁকড়ে ধরলো সামিয়ার। নিলয় জানেনা কেনো এমন করছে ও। জামা কাপড় গুলো ইস্ত্রি করে সুন্দর করে ভাজ করে একটা শপিং ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো ও। অফিসে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবে। 

শনিবার সুস্থই ছিলো নিলয়, এর মাঝে সামিয়া আর আসেনাই তবে ফোনে কথা হয়েছে। রবিবারে অফিসে গেলো নিলয় অফিসে যেতেই শুনলো চেয়ারম্যান স্যার মানে সোবহান সাহেব ডেকেছেন। সামিয়ার কাপড় সুদ্ধু শপিং ব্যাগটা সামিয়ার চেয়ারে রেখে ও দেখা করতে গেলো সামিয়া তখনও আসেনাই। সোবহান সাহেবের রুমে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতেই আন্তরিকতার সাথে সোবহান সাহেব বললেন মোক্তার সাহেব বললেন আপনি অসুস্থ তাহলে আপনি না আসলেও পারতেন আমি তো আপনাকে কখনও আটকাতাম না। নিলয় বললো স্যার আসলে বাসায় থাকতে ভালোলাগেনা আপনাদের সাথে দেখা হচ্ছে এটাই ভালো লাগছে আমার। সোবহান সাহেব হাসি মুখে বললেন আচ্ছা যান তবে বেশি কাজ করার দরকার নেই। 

নিলয় ফিরে এসে তার চেয়ারে বসতেই দেখে সামিয়াও চলে এসেছে। সামিয়া বললো কেমন আছো। নিলয়ের ছোট্ট উত্তর, "ভালো আছি, তুমি কেমন।" সামিয়া বললো ভালো, খাওয়া দাওয়া করতে পারছো। নিলয় সম্মতি সুচক মাথা নাড়লো। টিফিনের সময় অফিস রুমে স্বাভাবিক কেউ খায়না, নিষেধ নেই কিন্তু অফিসের চত্ত্বরটা অনেক সুন্দর আর ওখানে ছাতা দিয়ে ছায়া করা নান্দনিক বেঞ্চ পাতা থাকায় সবাই ওখানেই গল্প করতে করতে খায়। টিফিন আওয়ার শুরু হলেই নিলয় ওয়াশরুমে যায়, আর সবাই বেরিয়ে গেলে অফিশরুম থেকে ও এসে আবার ডেস্কে বসে পড়ে কারন ও টিফিন আনেনাই। মূলত ও বাসায় আজ রান্নাও করেনাই ভালোলাগছিলো না তাই।

এদিকে সামিয়া নিলয়কে ওয়াশরুমে যেতে দেখে বাইরে যেয়ে বসে একটা ফাকা বেঞ্চে,, ওর ইচ্ছা নিলয় বেরিয়ে এলে এদিকে ইশারা করে আসতে বলবে। কিন্তু নিলয় না আসায় সামিয়া আবার অফিসরুমে ঢুকে দেখে নিলয় ওর ডেস্কে বসে আছে। সামিয়া কাছে এসে বলে টিফিন কই নিল?" 
নিলয় বলে খেতে ইচ্ছা করছেনা তো তাই আনিনি। 
সামিয়া এক মুহুর্ত চুপ করে থেকে বাসা থেকে আনা রুটি আর মুরগির মাংস থেকে, রুটি ছিড়ে মাংস নিয়ে নিলয়ের মুখের সামনে ধরে বলে হা করো তাড়াতাড়ি। নিলয়ের না না বলতে বলতেই মুখে ঠেলে দেয় রুটি মাংস। জোর করে খাইয়ে তার পর পানির বোতল বের করে পানি খাইয়ে হাত ধুয়ে নিয়ে ভেজা হাত দিয়ে নিলয়ের মুখ মুছে দেয় সামিয়া।
ওদিকে রুমে বসে এই ঘটনার সাক্ষি হয়ে যান একমাত্র তৃতীয় ব্যক্তি মোক্তার সাহেব। উনাকে এরা দুজনের কেউ খেয়াল করেনাই। মোক্তার সাহেবের চোখের কোনে কখন জল এসে গেছে তা উনিও জানেন না। এই ৬০ বছরের জীবনে উনি এখনো আবেগ অনুভব করেন একদম বাচ্চাদের মতো। 
★★★★★★★★★★★★★★ ★★★★★★
দিন যায় রাত আসে এভাবেই চলতে থাকে অফিসের কার্যক্রম। এদিকে শেরপুরের এক বিখ্যাত ধনকুবের আলহাজ্ব ইলিয়াস হোসেন তার নেপিয়ার গ্রুপের জন্য কিছু বিজনেস স্পেশালিস্টের পরামর্শ চাইলেন এই অফিসে কারন তার বিজনেস গত বছর থেকে লস প্রজেক্ট হয়ে আছে, অফিস থেকে ইলিয়াস সাহেবের ব্যাবসা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য মোক্তার সাহেব নিলয় আর সামিয়াকে নির্বাচন করলেন। তারা উভয়েই তিনদিন ব্যাবসার সকল কিছু পর্যবেক্ষণ করে আসবে এসে সিদ্ধান্ত জানাবে।
মোক্তার সাহেব অফিস থেকে থাকা খাওয়া আর যাতায়াতের সকল ব্যাবস্থা করে দিলেন যদিও সকল খরচ ইলিয়াস সাহেব দিয়ে দিবেন ওরা গেলেই। 
ওরা ওদিনই ছোট্ট শহর শেরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলো ভাড়া করা ট্যাক্সিতে। তবে প্রচুর বৃষ্টি শুরু হলো যাত্রা শুরু করতে করতেই। আর রাস্তা এতোই খারাপ সেই সাথে বৃষ্টি হওয়ায় মারাত্নক জ্যাম। সন্ধা ৭.৩০ এ রওনা হকেও টঙ্গী ছাড়াতেই ১০ টা পার হয়ে গেলো। তার পরেও রাস্তায় জ্যাম গাড়ি থেমে থেমে যাচ্ছে। ওদিকে জানালার কাচের উপর দিয়ে জল নামছে সবেগে। জানালার কাচে মাথা রেখে তাই অনুভব করছে সামিয়া। আর নিলয় বসে বসে দেখছে, খুব ভালো লাগছে তার রাস্তার সোডিয়াম লাইটের আলোয় সামিয়ার মুখ সে ভালোভাবে দেখতে না পারলেও অবয়বটা বুঝতে পারছে। কিছুক্ষন পরে সামিয়া বললো নিল আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, বলেই নিলয়ের পায়ের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো সামিয়া। নিলয় চুপ করে দেখলো, আস্তে করে সামিয়াকে ধরে রাখলো যাতে পড়ে না যায়। খুব ভালো লাগছে ওর সামিয়াকে ফিল করতে। মনে হচ্ছে যেনো জড়িয়ে বুকের মাঝে আকড়ে ধরে কিন্তু সাহস হচ্ছেনা আবার সেই সাথে অজানা বাধা অনুভব করছে।

তবে দেখতে তো আর কেউ বাধা দিচ্ছেনা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে লেপ্টে আছে নিলয়ের পায়ে। ঘুমের মধ্যেই সামিয়া কাত হয়ে নিলয়ের পিঠের পেছনে হাত দিয়ে আকড়ে ধরলো ঘুরে। নিলয় সামিয়ার চুল লম্বা চুল গুলো যাতে গাড়ির মেঝেতে না চলে যায় তাই গুছিয়ে হাতে ধরে সামিয়ার পিটের উপর দুই হাত দিয়ে ধরে রাখলো যাতে ঝাকিতে ও গড়িয়ে পড়ে না যায়।। সারা রাত এভাবেই কেটে গেলো। রাত তিনটা বেজে গেলো পৌঁছাতে। শেরপুর নিউমার্কেট চত্ত্বরে পুলিশ বক্সের পাশে গাড়ি রেখে ঐ রাতে কেউ নামলোনা। ওখানেই থাকলো। সকাল হতেই ইলিয়াস সাহেবের লোকেরা এসে হোটেল 'আয়সার ইন' এ ওদের জন্য দুটি ভি আইপি AC রুমের চাবি দিয়ে গেলো। নিউমার্কেট থেকে একটু আগেই হোটেলটি। 
ওরা সকালে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হতেই শাহজাহান হোটেলের ভুনা খিচুড়ি চলে এলো। নেপিয়ার গ্রুপের কর্তারা মূলত ওদের বেশ যত্ন আত্তি করছে। শেরপুর শহরে অনেক ঘুরার যায়গা আছে সুযোগ হলে ঘুরাফিরার ইচ্ছা আছে।

প্রতিদিন সকাল ৯টায় অফিসে যায় আর ওদের অডিট কার্যক্রম চলে দুপুর ৫টা পর্যন্ত। এই অফিস থেকেই দুপুরে নাস্তা দেয় তার পর অফিস থেকে বের হয়ে ওরা হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তার পর সামিয়া বলে নিল চলো একটু ঘুরে দেখি শহরটা। নিলয় বলে চলো, সামিয়া আজ পরেছে একটা লাল ফুলের প্রিন্ট ওয়ালা সাদা শাড়ি আর নিলয় পরেছে জিনস প্যান্ট আর সাদা শার্ট। ওরা আইসার ইন থেকে হাটতে হাটতে নিউমার্কেটের সামনে এসে দুই কাপ চা খেয়ে একটা ইঞ্জিনের রিক্সা ভাড়া করলো প্রতি ঘন্টা ১৫০ টাকা চুক্তিতে, ও শেরপুর শহর ঘুরিয়ে দেখাবে। ছেলেটার বয়স কম নাম জিজ্ঞাসা করতেই বললো ভুলু মিয়া। বেশ হাসি খুশি, ও বললো স্যার, "ম্যাডামকে মানিয়েছে ভালোই আপনার সাথে,"  নিলয় কিছু বলতে গেলো, কিন্তু সামিয়া বললো থাক ও বলছে বলুক। ওরা ঘুরতে ফিরতে ভুলু মিয়ার গল্প শুনছে। ও এক এক যায়গায় রিক্সা থামায় আর বলে এখানে এটা বিখ্যাত এই এর ইতিহাস, দেখলাম ভালোই জানে। রঘুনাথ বাজারে সত্যবতী সিনেমা হলের পাশে মাশরুম এর চপ, চকবাজারের রুপকথা হলের সামনের চা, খোয়াড়পাড়, শ্রিবরদি বাজার রোডের লিখন হলের সামনের মিষ্টি পান। তেরোবাজার মোড় থেকে হামিদ ভাইয়ের লাড্ডু, চারু সুইটস এর সব মালাই চাপ খেয়ে ওরা রাত ১০ টার দিকে হোটেলে ফিরে এলো। 

সামিয়া খুবই ক্লান্ত। ওরা যার যার রুমে ঢুকে গেলো, গোসল করে ফ্রেশ হয়ে সামিয়া বেরিয়ে এসে নিলয়ের দরজায় নক করলো, নিলয় দরজা খুলে দিলে ভেতরে এসে বললো কিছু ভাল্লাগছেনা নতুন যায়গা একা একা। নিলয় বললো তাইলে টিভি দেখো দাড়াও নিচে থেকে কিছু কিনে আনি৷ ও নিচে গিয়ে চিপস কিনে নিয়ে এলো সাথে মিরিন্ডা আর কিছু চকলেট-কিটক্যাট এইসব।

ওরা গল্প করতে লাগলো, নিলয়ের কেমন ঘোর ঘোর লাগছিলো কারন সামিয়ার গোসল করে আসার পর থেকে ওর চুলের শ্যাম্পুর একটা সুবাস পাচ্ছিলো ও। আর সামিয়া ওর গায়ের কাছাকাছি বসায় সেন্টটা আরো ভালোভাবে ফিল করছিলো। একসময় সামিয়া বালিসে হেলান দিয়ে বসলো নিলয়ের দিকে পা দিয়ে। সামিয়া কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়লো, নিলয় ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো গালটা একটু ফাকা হয়ে আছে, চুলগুলো মুখে এসে পড়েছে কেমন যেনো খুব বাচ্চা বাচ্চা লাগছে মেয়েটাকে। নিলয় ওর পায়ের দিকে ছিলো, আর ঘুমের ভেতরে দুই পা প্রসারিত করে নিলয়ের কোলের উপর তুলে দিলো। নিলয় দু হাত দিয়ে পা দুখানি ওর কোলে রেখে নিজে চিত হয়ে শুয়ে পড়লো। দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লো গভীর ঘুমে, ঘুমিয়ে নিলয় সপ্ন দেখলো ও আর সামিয়া শুয়ে আছে কোথাও পাশা পাশি, ওদের চারিদিকে স্বর্ণলতার বেয়ে উঠেছে। কিছু জংলী ফুল ফুটেছে ওদের দুজনের উপরে স্বর্ণলতিকার সাথে।

সকাল বেলা সামিয়ার ঘুম থেকে উঠলো আগে, অনেক ক্লান্তি থাকায় কেউ রাতে নড়েনি, সামিয়া দেখলো ওর পায়ের কাছে ঘুমিয়ে আছে নিলয়, নিলয়ের পেটের উপর ওর দুই পা। সামিয়ার মুখে ফুটে উঠলো একটু হাসি, সে হাসি যেনো ভালোলাগার। কেউ সে হাসির সাক্ষি থাকলোনা। ও নিলয় কে জাগিয়ে তুললো, নিলয় উঠেই বললো স্যরি, কোনো সমস্যা হয়নাইতো তোমার। 
সামিয়া বললো সমস্যা তো তোমার হইছে আমার পায়ের দিকে শুইলে কেনো, আর আমাকে তো জাগিয়ে দিতে পারতে তোমার পেটের উপর আমি পা তুলে শুয়ে ছিলাম নিল স্যরি। 
নিলয় বললো আমি কিছু মনে করিনি সামিয়া, বরং তোমাকে দেখতে খুব ভালো লাগছিলো। 
সামিয়া ফিক করে হেসে দিলো, বললো কি যে বলো, ভালো লাগবে কেনো, আমি দেখতে মোটেই সুন্দর না। 
নিলয় বললো, না আমার চোখে খুব ভালো লাগছিলো আর  মনে হচ্ছিলো....... 
সামিয়া বললো কি মনে হচ্ছিলো? 
নিলয় বললো, তুমি রাগ করবে বললে, থাক স্যরি। 
সামিয়া বললো "না হবেনা, তোমাকে বলতেই হবে, আমার দিব্বি।"
নিলয় মাথা নিচু করে লজ্জাবনত চোখে বললো, আমার খুব মনে হচ্ছিলো যে তোমার দুই গালে দুটা চুমু দেই। 
সামিয়া অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো, আর মনে মনে বললো দিতে ইচ্ছা হচ্ছিলো দিতে, আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম কিছুই তো বলতাম না। কিন্তু লেখক এটা বুঝে গেলেন যে সামিয়া যদি এদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখতো তবে নিলয় সামিয়ার ঠোটের কোনে হাসির ঝিলিক দেখতে পেতো।।

যাই হোক, একে একে তিনদিন কাজ ও শেষ হলো আর সেই সাথে বিদায়ের পালা শেরপুর থেকে।  নেপিয়ার গ্রুপের সকল হিসাব পাতি দেখে ওরা বুঝতে পারলো যে কোম্পানির ম্যানেজারের দুই নম্বর কার্যক্রম ই কোম্পানির লসের জন্য দায়ী। নেপিয়ার কোম্পানির চেয়ারম্যান ইলিয়াস সাহেবের সাথে গোপনে বৈঠক করে ওরা ওদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলো। ইলিয়াস সাহেব খুবই কঠোর মানুষ। উনি খুবই খুশি হলেন কাজের প্রতি। ওদের চুক্তির টাকা বুঝিয়ে দেয়ার পরে আরো কিছু সম্মানি দিলেন হিসেবের বাইরে। 

ওরা এবার বাসে টিকিট কাটলো শেরপুর নিউমার্কেট থেকে পরদিন সকাল সাড়ে ৬ টায় বাস, AC -Delux. এর। সেদিন ওদের মাথায় চাপ কম,, সন্ধায় শেরপুরের বিখ্যাত অনুরাধার দই খেয়ে ওরা ফিরে এলো মাইসাহেবা মসজিদের সামনে। এখান থেকে ঘুরে ফিরে ওরা কিছু শপিং করলো। শপিং বলতে গেলে একে অপরকে করে দেওয়াই হলো। নিলয় শেরপুর থেকে কিছু গারো উপজাতিদের তৈরি গিফট আইটেম শো পিস কিনে দিলো সামিয়াকে, সেই সাথে একটা নীল রং এর শাড়ি। আর সামিয়া কিনলো একটা সাদা পাঞ্জাবী আর একটা বাঁশের বাঁশি। কিনে নিলয় কে দিলো। কেনা কাটা শেষ হলে ওরা একটা রিকশায় উঠে ফিরে এলো হোটেলে, রিক্সায় উঠে নিলয়ের হাতের আংগুলের ভেতরে আংগুল ঢুকিয়ে বসে থাকলো সামিয়া। আকাশে আজ মেঘ নেই, চাদ উঠেছে চকচকে সামিয়া উপর দিকে তাকিয়ে আছে। নিলয় বললো সামিয়া পড়ে যাবা তো। সামিয়া উদাস সুরে বললো, কেনো নিল তুমি আমাকে ধরে রাখতে পারবানা। নিলয় কিছু না বলে দুই হাত দিয়ে সামিয়ার দুই হাত মুঠোর মধ্যে শক্ত করে ধরে কোলে টেনে নিলো, সামিয়া কিছুই বললোনা।

পরের দিন সকাল ৬ টায় ওরা বাসে উঠলো, সাড়ে ছয়টায় বাস ছাড়লো। ১২ টার মধ্যে ঢাকা পৌছে গেলো বাস। ওরা ওদের অফিসে যেয়ে টাকা পয়সা বুঝিয়ে দিলো আর রিপোর্ট দিলো কাজের। সোবহান সাহেব খুব খুশি হয়ে দুজনকে বোনাস দিলেন। আর বললেন আজ আপনাদের ছুটি, ট্যুর করে এসেছেন বাসায় যেয়ে বিশ্রাম নেন। 
ওরা অফিস থেকে বের হয়ে বাসে উঠে, কুড়িল পৌঁছে সামিয়া নেমে যায় আর নিলয় নদ্দায় নামে। কিন্তু আজ আর বাসায় যেতে মন চাইছেনা নিলয়ের। কি মনে করে সামিয়াকে ফোন দেয় নিলয়,,, "হেলো সামিয়া কি করো তুমি"
সামিয়া বলে, "এইতো নিল বাসায় আসলাম, কি হইছে তোমার।"
নিলয় বলে, " তুমি আসতে পারবা আজকেই আমার বাসায় একটু।"
সামিয়া বলে, "হ্যা পারবো, তাহলে গোসল করে আসছি।"
নিলয় বলে, "আচ্ছা আসো।"
১ ঘন্টা পরে সামিয়া এসে দেখে নিলয় বাসায় না উঠে নিচে দাড়িয়ে আছে, সামিয়া আশ্চর্য হয়ে বলে "সেকি তুমি ফ্রেশ না হয়ে দাড়িয়ে আছো কেনো?"
নিলয় বলে কি করবো বলো, ভালোলাগছেনা, জানিনা কেমন যেনো লাগছে।
সামিয়া বলে, পাগল হয়ে যাচ্ছো দিন দিন, চলো উপরে যাই।
নিলয় রুমে এসে গোসল করতে বাথরুমে ঢুকলো, ওদিকে সামিয়া চুলায় রান্না বসিয়ে দিলো। নিলয় ফ্রেশ হয়ে এসে বসলো, সামিয়া একে একে ফ্রিজে রাখা মুরগির মাংস রান্না করলো আর ভাত রান্না করলো। তার পর দুজনেই খেতে বসলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সামিয়া বললো আমাকে পৌঁছে দিয়ে আসো এবার রাত হয়ে গেছে। নিলয় বললো চলো। 
সামিয়ার ফ্লাটে এসে লিফট থেকে নেমে সামিয়ার রুম পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসে নিলয় সামিয়াকে বলল এবার তাহলে যাই। সামিয়া বললো আচ্ছা যাও। আজ তো বৃহস্পতিবার মানে কাল পরশু অফিস এমনিতেই ছুটি। "ওকে" বললো নিলয় কিন্তু যাচ্ছেনা, সামিয়া বললো কি হলো যাবেনা ফিরে না-কি। নিলয় বললো হ্যা যাবো, কিন্তু না' নিলয় যাচ্ছেনা সামিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সামিয়া কি মনে করে কাছে আসলো নিলয়ের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গিয়ে দরজা আটকায় দিয়ে নিলয় কে দরজার সাথে সেটে ধরলো, তার পর মুখের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বললো সেদিন তোমার কি ইচ্ছা হচ্ছিলো নিল। নিল কিছুই বলছেনা। সামিয়া বুকের সাথে আঁকড়ে ধরলো নিলয়কে, আর নিলয়ের ঠোটে নিজের দুই ঠোট লেপ্টে ধরলো। অনেক্ষণ হয়ে গেলো নিলয়ও সামিয়ার পিঠে হাত রেখেছে বড্ড ভরশার ছোঁয়া সে হাতে। সামিয়ার ঠোট থেকে নিজের ঠোট ছাড়িয়ে সামিয়ার কপালে, দুই চোখে আর মাথায় চুমু খেলো নিলয়। তার পরে নিলয় সামিয়াকে বললো "আমরা কি এক বাসায় থাকতে পারি, আমার না খুব ইচ্ছা তোমার হাতে হাত রেখে চাঁদ দেখবো, দেখবো ঝুম বৃষ্টি, তোমাকে কোলে তুলে তোমার ঠোটে চুমু খাবো। আর তুমিও আমার গলা জড়িয়ে ধরে থাকবা। দুজনে হাতে হাত রেখে ঘুরবো বোটানিক্যাল এ। 
সামিয়া বললো হ্যা নিল আমরা পারি, আমি ও তোমার চোখে চোখ রেখে দেখতে চাই চাঁদ, তোমার বুকে মাথা রেখে কাটাতে চাই প্রতিটি মুহুর্ত। আমি তোমার হাত ধরে হারিয়ে যেতে চাই দুর অজানায়। প্রতিদিন খাইয়ে দিতে চাই তোমাকে নিল। বলে আবারো নিলয়ের মুখে চুমু খেলো সামিয়া। 

পরিসমাপ্তিঃ

মোক্তার সাহেব, সোবহান সাহেব আর সকল কলিগদের দাওয়াত করা করলো নিলয় তার এক বন্ধুর কমিউনিটি সেন্টার আব্দুল্লাহপুরে। পরদিন জুম্মা বাদ সবাই একে একে এলো, সোবহান সাহেব স্বপরিবারে এসেছেন, মোক্তার সাহেব এসেছেন আরো সবাই এসেছেন নানা ধরনের গিফট নিয়ে। অফিসের মেয়ে কলিগেরা গেলো সামিয়াকে নিয়ে আসতে। সামিয়ার সেই চাচা ও এসেছেন। কনে সামিয়াও চলে এসেছে। এদিকে নিলয়ের দেখা নেই, ২ টা পেরিয়ে ৩টা ৪ টা বেজে গেলো নিলয়ের দেখা নেই। ৪.১৫ নাগাদ মোক্তার সাহেবের ফোনে একটা অচেনা নাম্বারের কল আসলো উনি রিসিভ করতেই বললো আমি ভাটারা থানা থেকে বলছি। নিলয় নামে কেউ কি আপনার অফিসের এমপ্লয়ি আপনার কার্ড পাওয়া গেছে উনার মানিব্যাগ থেকে। মোক্তার সাহেব ভয়ে ভয়ে বললেন হ্যা কি হয়েছে ওর। ওপাশ থেকে বললেন নিলয় সাহেব সম্ভবত কোনো অনুষ্টানে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন সাথে ছিলেন উনার মামা, এয়ারপোর্ট রোডে পাশ থেকে লেন চেঞ্জ করে এক ট্রাক দুজনকে উনাদের গাড়ি সুদ্ধু চাপা দিয়েছে সাথে ড্রাইভার ও নিহত হয়েছে। 

মোক্তার সাহেব কিছু বললেন না, ফোন সোবহান সাহেবকে দিয়ে দিলেন। সোবহান সাহেব ক্ষমতাশালী মানুষ উনি নিজের পরিচয় দিয়ে পুলিশকে অনুরোধ করলেন এম্বুল্যান্স এ করে পাঠায় দেয়ার জন্য এই কমিউনিটি সেন্টারে। আর কাউকে কিছুই এ দুজন বললেন না, সামিয়া বার বার জিজ্ঞাসা করতে লাগলো নিলয়ের নাম্বারে ফোন যাচ্ছেনা কেনো। কখন আসবে ও, আপনারা কিছু বলছেন না কেনো। মোক্তার সাহেব বললেন মামুনি একটু অপেক্ষা করো আসছে নিলয়। কিছুক্ষণ পরে এম্বুল্যান্স এলো বের করা হলো একটি কফিন সবাই নিচে নেমে গেলো। কফিনের মুখ খুলতেই চারিদিকে একটা শোরগোল পড়ে গেলো, এম্বুল্যান্স এর ড্রাইভার বললো সমগ্র শরীর নষ্ট হয়ে গেছে শুধু মুখটাই ভালো আছে আর কিছুই দেখার মতো নেই। সামিয়া এক বার তাকিয়েই কফিনের উপর পড়ে গেলো মেয়ে কলিগেরা টেনে তুললো মুখে চোখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করা হলো অনেক, কিন্তু না জ্ঞান ফিরলোনা।

এম্বুল্যান্স এর সাথে আসা ডাক্তার বললেন, ওর জ্ঞান আর ফিরবেনা। সকলের অশ্রুজল মিশে গেলো, তিনটি লাশ - নিলয়ের মামা, নিলয় আর তার পাশে সামিয়ার লাশ পাশাপাশি রাখা হয়েছে, দুটি এসেছিলো আর একটি বেড়ে তিনটি হয়েছে। নিলয় দের নিহত ড্রাইভারকে আগেই ড্রাইভারের গ্রামের বাড়ি পাঠায় দেয়া হয়েছে।

সোবহান সাহেবের একক তত্ত্বাবধানে তিনজনের লাশ নিয়ে যাওয়া হলো নিলয়ের গ্রামে, নিলয়ের বাবা মা সহ অনেক আত্নীয় স্বজনের লাশ এখানে দাফন করা হয়েছে। নিলয়ের পাশে সামিয়ার লাশ দাফন করা হলো। মোক্তার সাহেব, সোবহান সাহেব সহ সকল কলিগ এবং গ্রাম বাসির চোখের জলে সিক্ত হলো নিলয়ের আর সামিয়ার লাশ। গ্রামের গৃহবধুরাও অশ্রু বিসর্জন করলেন, দুটি হৃদয় সামাজিক বন্ধন প্রতিষ্টিত না হলেও যে বন্ধন প্রতিষ্টিত হয়েছিলো তা ছিন্ন করতে পারিনি তাই নিলয়ের লাশ দেখেই সামিয়ার হার্ট ফেইল হয়ে গেছিলো। কবর দেয়া শেষ সবাই হাত তুলে দোয়া করলো, সোবহান সাহেব ওদের দুজনের কবর ঘিরে দিলেন নিজ খরচে। কিছুদিন পরে দুই কবর দেয়াল পেচিয়ে উঠলো স্বর্ণলতা। আরো ফুটলো নানা ধরনের জংলি ফুল। 
সবাই ভুলে গেলো একে একে,,,সামিয়া-নিলয়ের অফিসের ডেস্কে যারাই বসেছে তারাই শুনেছে তাদের গল্প। তারাও ভাবে তাদের কথা, বিয়ের কনে আর বর দুই কপোত কপোতির বিয়ের সাজে কফিন বন্ধি হওয়ার গল্প। বিবাহবার্ষিকী হয়েছে তাদের মৃত্যুবার্ষিকী। 

যারা কবর খুড়তে আসে তারা ঐ কবর দুটির দিকে তাকিয়ে অজান্তে ঝরায় অশ্রু। আরো দুজন আছেন মোক্তার সাহেব আর সোবহান সাহেব, প্রতি বছর আসেন এই কবরস্থানে সেই বিবাহবার্ষিকীতে, সাথে আসে আরো কিছু মানুষ যারা নিলয় আর সামিয়ার সাথে চাকরি করতো। যারা নতুন এমপ্লয়ি তারাও কেউ কেউ আসে গল্প শুনে দুই অতৃপ্ত মানব মানবীর সমাধি দেখতে। নিলয় আর সামিয়ার ভালোবাসার অশ্রু জল সিক্ত করে দিলো লেখককেও, লেখকের একান্ত কামনা আর কোনো সামিয়া-নিলের যেনো এমন ভাগ্য না হয়। নিল আর সামিয়ার বিবাহবার্ষিকী এভাবেই ফিরে ফিরে আসে আর পালিত হতে থাকে অশ্রুজলে।

★Writter: Md. Abidur Rahman, MBA (Regular programme)  From. Institute of Business Administration, Dhaka University

2 comments:

  1. গল্পটা অসাধারণ ছিল। বিচ্ছেদের ভালবাসা গুলো অনেক বেদনা বিধুর হয়.......

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার পেজে প্রথম কমেন্টকারী হিসেবে আপনাকে ধন্যবাদ। আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো আপনার জন্য।

      Delete