Wednesday, April 22, 2020

ভালোবাসার ডাকপিয়ন আর নীল শাড়ি পরা পরি

সেই দিন গুলোর মধ্যে একটি যেদিন BRTC দোতলা বাসে উঠে পছন্দসই জানালার পাশে বসার পরে নামে ঝুম বৃষ্টি। জানালার কাচ ইঞ্চি খানেক ফাকা করে ওখানে মাথা বাধিয়ে বৃষ্টির ছাট লাগাতে লাগাতে ভার্সিটির দিকে যাওয়া। সেদিন মনেই হয় যে যদি শহরটা জ্যাম বেধে স্তদ্ধ হয়ে যেতো অথবা সারাদিন বাস চলতে থাকতো। আর তার সাথে চলতো বৃষ্টি অঝোর ধারায়। 
যাই হোক এমন রোমান্টিক আবহাওয়ার মাঝেই, বেরসিক ভাবে বেজে উঠলো ফোনের ভাইব্রেটর। ফোন তুলেই দেখি আমার কাজিন নীলিমা। ও চাকরি করে হোটেল রাজমনি ঈসা খাঁ'এ রিসিপশনিষ্ট হিসেবে। আমি ওকে খুব পছন্দ ও করি, আমার থেকে বয়সে ১ বছরের বড় তার পরেও সম্পর্ক বন্ধুর মতো। 
যাই হোক ফোন ধরেই বললাম আপু তুমি, কি মনে করে ফোন দিলা, কেমন আছো। ও খুব উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো শিমু জানিস আমি একটা ছেলেকে বিয়ে করতে যাচ্ছি তুই আসতে পারবি বিকালে। আমার পুরো নাম শিমুল, আপু আমাকে আদর করে শিমু বলে। আমি কখনোই এত উচ্ছাস ওর কন্ঠে শুনিনি আগে। আমি, বললাম তুমি বলেছো যখন নিশ্চই আসবো। ও বললো আচ্ছা তুই বিকালে পেট্রোবাংলা অফিসের সামনে চলে আসিস। আমি ওখানেই থাকবো। আমি বুঝলাম যে নিশ্চই সাক্ষী দিতে হবে।
ফোন রেখে দিতেই,, আবার কল এলো। দেখি খালা ফোন দিয়েছেন, উনি হলেন নীলিমার মা। 
ফোন রিসিভ করে বললাম আন্টি আসসালামু আলাইকুম। উনি উত্তর দিয়েই বললেন, "খবর শুনেছিস, নীলিমা বিয়ে করতে যাচ্ছে একটা গাধাকে। গাধাটার নাকি যমুনা ফিউচার পার্কে একটা শো রুম আছে। জামা কাপড়ের। আর কোনো কিছুই নেই। চাকরি বাকরি করেনা, ওগুলোর ইচ্ছাও নেই, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি থেকে রসায়নে মাস্টার্স কমপ্লিট, অথচ কিছুই করেনা, এই লিখাপড়া দিয়ে কি হবে যদি চাকরিই না করে। আর ওর বাবাটাও একটা ভবঘুরে। তুই ই বল এমন ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দেয়া যায়, বেকার চালচুল নেই৷ অকম্মার ঢেকি"
আমি বললাম "জি খালা, আমি তো শুনেছি, আমার এতে কিছুই করার নেই।"
উনি বললেন, "তোকে কিছু করতেই হবে, ওই অকম্মা ছেলেটাকে একটা উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে, ওর ঠিকানা বের কর, আর আমার মেয়েটার সামনে তো কিছুই করা যাবেনা, আক্কাসকে নিয়ে যা, আর নীলিমার সাথে কথা বল, ছেলেটার ঠিকানা নীলিমার কাছ থেকে তুই ভুল ভাল বলে বের করবি, আক্কাসকে দিয়ে ওকে কি ভাবে ধরে জেলের ভাত খাওয়াতে হয় আমি জানি।"
আমি বুঝলাম যে আজ আর ভার্সিটি যাওয়া হবেনা। বাস কেবল নদ্দা থেকে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত গিয়েছিলো। ওখানেই নেমে গেলাম। নেমে খালার বাসা মগবাজারে যেয়ে আক্কাসকে সাথে নিলাম। আমার খালু বেচে নেই। খালু ইমতিয়াজ উদ্দিন সাহেব ছিলেন বড় ব্যাবসায়ী, ঢাকার সবাই তাকে প্রায় চিনে। খালার বাসার সব কাজ কর্ম আর খালার সাথে খালুর সেই সব ব্যাবসা এই আক্কাস দেখাশোনা করে। তবে আক্কাসকে শুধুমাত্র কাজের লোক বলা ভুল। ওর বেতন ১০ হাজার টাকা। ও মূলত সকল কাজের কাজী, বন্দুক, গাড়ি সব চালাতে পারে। ঢাকা শহরে সকল যায়গায় ওর হাত আছে। খালাকে ও বড় বোন বলে মেনে নিয়েছে।
যাই হোক আমি আক্কাসকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। নীলিমাকে ফোন দিয়ে বললাম আপু তুই তো আমাকে বিশ্বাস করিস তাইনা। 
ও বললো, "পাগল নাকি তুই, নিশ্চই কাকে বিয়ে করবো ওকে দেখার জন্য আমার আম্মু তোকে নিয়োগ করেছে?"
আমি বললাম, "হ্যা, তাই, এখন বল আমি আগে থেকেই ব্যবস্থা করি"
নীলিমা ঠিকানা বললো আমাকে। আমি টুকে নিলাম মোবাইল নোটে।
আক্কাস বললো "মামা চলেন যাই। কোথায় আছে হতচ্ছাড়া টা। এই দেখেন পকেটে কি নিয়ে আসছি, এটা ওর পকেটে সিস্টেম করে ঢুকিয়ে দিবো। দিয়ে থানায় কল দিয়ে পুলিশে দিবো।"
আমি জিনিসটা দেখে ওকে ফেরত দিলাম, বললাম এটা কি, ও বললো, আরে মামা এখনো চিনেন না, এ হলো ইয়াবা।
আমি বললাম আচ্ছা শোনো, তুমি মাঝে মাঝে রুপনগরে যাও, কেনো। 
ও একটু হতভম্ব হয়ে বললো, "আপনি কেমনে যানেন। মামা আপাকে বলিয়েন না, উনি রাগ করবেন, প্লিজ।" একেবারে অনুনয়ে গলে পড়লো।
আমি সবজান্তার হাসি হাসলাম। আমি মুলতঃ তিন্নি নামক একটা মেয়েকে পড়াতে যাই, রুপনগর বাজারের পাশে। তিন্নির বাবা এই এলাকার এক নম্বর মস্তান, যত প্রকার চাদাবাজি হোক সবই তিনি করেন। তবে আমার এখানে প্রচুর সম্মান, উনি তার মেয়ের টিচার হিসেবে আমাকে দেখলে যেখানেই হোক না কেনো উঠে দাড়িয়ে সালাম দেন। একদিন তিন্নি আমাকে বললো, "ভাইয়া দেখেন, ঐ লোকটি আমার বড় আপু তানিশার সাথে প্রায়দিন গল্প করে, আব্বুকে বলেছি, আব্বু ঐ লোকটাকে এমন শিক্ষা দেবে যে কয়েক জনম মনে থাকবে।"
আমি দেখি সেই লোকটি আক্কাস। 
আমি আক্কাসকে বললাম, ওর নাম তো তানিশা তাইনা, আক্কাস আমার হাত ধরে বললো মামা, প্লিজ পায়ে পড়ি, এ কথা আপনার খালা যেনো না জানে। 
আমি বললাম, ঐ মেয়েকি তোমাকে পছন্দ করে, তোমাদের সমস্যা কোথায়?"
আক্কাস বললো ওর বাবাই তো সমস্যা, উনি আমাকে দেখতেই পারেন না। অনেক বার ভেবেছি তোমার খালা তো আমার বড় বোনই হয় সম্পর্কে, উনার অনেক নাম ডাক আছে, আপার ছোট ভাই এ কথা বললে হয়তো রাজি হবে তানিশার বাবা। আমি আগের সব রংবাজি ছেড়ে দিয়েছি, আজকেই আপনার সাথে বের হলাম আপার কথায়। 

আমি বললাম, আচ্ছা চলো তাইলে একটা মিশনে যাই। খালার কাছে ফোন দিয়ে বললাম খালা কাজের জন্য ৫০ হাজার টাকা লাগবে লোক ম্যানেজ করতে। 
খালা বললো আচ্ছা, আক্কাসকে তুলে নিতে বল কার্ড দিয়ে, ওর কাছে কার্ড রাখা আছে আমার।
আমি আক্কাসকে বললাম আক্কাস মামা, ৬০০০০ টাকা তুলে নাও তো দেখি। 
আক্কাস আর কিছুই বলছেনা, তুলে নিয়ে আমার হাতে টাকা টা দিলো। আমি একটা উবার ভাড়া করে যমুনা ফিউচার পার্কে এলাম, নীলিমার বয়ফ্রেন্ড এর শো-রুমে, ওকে পরিচয় দিলাম এভাবে যে আমরা ওকে দেখতে আসছি, আমি নীলিমার সবচেয়ে কাছের ছোটো ভাই। 
দেখলাম একটা নিখাদ ভদ্র ছেলে। নাম সাজিদ, ওর বাবা মি. আশফাক আমিন, তিনি কোনো কাজ করেন না, শুধুমাত্র দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ান, ভদ্রলোকের প্রচুর টাকা। আমি আগেই জানতাম  সাজিদও শিক্ষিত, কিন্তু ব্যাবসা করছে কেনো জিজ্ঞাসা করতেই বললো, ভাইয়া টাকার তো সমস্যা নেই।৷ আমার ব্যবসা ভালো লাগে কেনো চাকরি করবো। আমি দেখলাম আসলেই অনেক বড় শো-রুম অন্তত কয়েক কোটি টাকার মালামাল, কর্মচারী ২০/২২ জন। আক্কাস শুধু খুতখুত করছে, কখন কাজ শেষ করবে, আমি ওকে ইশারায় মানা করলাম।
আমি বিভিন্ন ভাবে কথা বলে এটা শিউর হলাম যে সে নীলিমাকে আসলেই অনেক পছন্দ করে।
 তার পর আমি খুব দামী একটা শাড়ি নিলাম ১৭ হাজার টাকা দিয়ে, আক্কাসের জন্য এক টা দামি প্যান্ট আর শার্ট কিনলাম৷ তার পরে বেরিয়ে এলাম।
আক্কাস বললো মামা কাজ তো হলোনা।
আমি বললাম দেখো কি হয়, বলে বেরিয়ে এসে, একটা উবার নিয়ে রুপনগরে এলাম তিন্নি দের বাড়ি। আক্কাসের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে, তানিশা আমাদের দেখে আর সামনে আসছেনা। আমি তিন্নিকে বললাম তোমার বাবাকে ফোন দাও। 
ওর বাবা আসলো উনি এসে মাথা নিচু করে বসে থাকা আক্কাসকে দেখে রেগে গেলেন, বললেন এ এখানে কেনো। 
আমি বললাম, আংকেল ওর কথা বাদ দিন, পরে বলছি। আগে আপনি বলেন, ইমতিয়াজ সাহেব কে চিনতেন, রেবা গ্রুপের মালিক। 
তানিশার বাবা বললো, জি স্যার, উনাকে কে না চিনে। এতো বড় বিখ্যাত একটা মানুষ,  আহা হঠাৎ করেই মারা গিয়েছিলেন।
আমি বললাম, উনার এক মাত্র শ্যালক এর সাথে আপনার মেয়ে তানিশার বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছি। 
উনি বললেন সে তো খুব খুশির খবর, তা পাত্রের ছবি দেখান।
আমি বললাম,, এই হলো আমাদের পাত্র, আক্কাসকে দেখিয়ে বললাম। 
উনি চুপ চাপ কিছু বললেন না, তার পর উঠে দাড়ালেন, দেখি আক্কাস একদম ঘেমে লাল হয়ে গেছে। উনি উঠে দাড়িয়ে বললেন তানিশা এদিকে আয়তো।
তানিশা কাপতে কাপতে এসে বললো, বাবা বলো। ওর মাও এসে দাড়ালো পাশে।
আক্কাস কে দেখিয়ে বললেন, একে পছন্দ হয় তোর। 
তানিশা কিছু না বলে ওর মাকে জড়িয়ে ধরলো। 
আংকেল বললেন, মা, তানিশা তুই আমাকে কিছু না বলে লুকিয়ে ওর সাথে দেখা করিস, আমি এতে খুব কষ্ট পেয়েছি৷ তবে তোর স্যার প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন আমি সানন্দে গ্রহণ করলাম। 
আক্কাস কে বললাম, মামা তোমার কোনো আপত্তি আছে। 
আক্কাস কিছুই বলছেনা, ও হতভম্ব হয়ে গেছে।
আমি তানিশার জন্য আনা শাড়িটা তানিশার হাতে দিলাম দিয়ে বললাম এটা তোমার জন্য বিয়ের আগেই আমার পক্ষ থেকে উপহার। ওর চোখ দিয়েও পানি ঝরছে। আমি ওকে বললাম, আমাদের সাথে একটু যেতে পারবা। ও বললো হ্যা পারবো। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখি তানিশার পাশা পাশি তিন্নিও রেডি হয়ে এসে আমার হাত ধরে বললো ভাইয়া আমাকেও নিয়ে চলেন না সাথে। আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম আচ্ছা চলো।

আমি আর সময় নিলাম না। বেরিয়ে এলাম, আংকেল বললো, স্যার যান। কালকেই আমরা যাবো আপনার খালার সাথে দেখা করতে।
আমি বাইরে এসে, তিনজনকে নিয়ে একটা উবারে উঠে কাওরান বাজার চলে এলাম, আসতে আসতে ৩ টা বেজে গেলো। ইতিমধ্যে নীলিমা একবার ফোন দিয়েছিলো আমার কাছে, আমি বললাম সব ঠিক আছে আসো৷ 
ওরা ৪ টার দিকে পেট্রোবাংলা অফিসের সামনে এলো। আমি, আক্কাস আর তানিশা ইতিমধ্যে চা নাস্তা করেছি। আক্কাস আমার হাত ধরে বলেছিলো মামা আপনি আমাদের জন্য যা করলেন, আসেন আমরা অন্তত খাওয়া দাওয়া করি।
আমি বললাম না, খাওয়া দাওয়া করবোনা এখন একবারে বিকালে করবো, একটা অনুষ্ঠান আছে তার পরে। আর তোমার জন্য যা করলাম তা এমনি এমনি করিনি। দেখি তুমি এর জন্য আমাকে কি দিতে পারো। 
নীলিমা আর সাজিদ আমাদের কে নিয়ে কাছাকাছি এক কাজি অফিসে নিয়ে গেলো। সাজিদ বললো ওর কিছু বন্ধু আছে যারা সাক্ষী দিবে, আর নীলিমা বললো শিমু তুই সাক্ষী দিবিনা, আমি বললাম নিশ্চই দিবো। তানিশা বললো ভাইয়া, আমি আর তিন্নি ও সাক্ষী হবো। তবে আমি একা একজন ছেলে, তানিশা আর তিন্নি দুজন যেহেতু মেয়ে তাই আরো একজন ছেলে লাগবে। আমি বললাম তাহলে সাজিদ ভাইয়ের বন্ধুরা আসুক। দেরি হয় হোক।
পাশের থেকে আক্কাস আমার হাত ধরে বললো, মামা আমি সাক্ষী দিবো৷ 
আমি বললাম সেকি আক্কাস তোমার না অন্য কাজ ছিলো। আক্কাস বললো,, থাক সে কাজ, আমি ওটা ফেলে দেবো বাইরে। 
বিয়ে হয়ে গেলো নীলিমা আর সাজিদের, সন্ধা হয়ে গেলো, সাজিদ আর নীলিমা প্রচুর টাকা নিয়ে এসেছিলো খরচ বাবদ। দেনমোহর ধরা হয়েছিলো মাত্র ২ লাখ টাকা। সাজিদ ১লাখ ৫০ হাজার টাকা দিলো নগদ, আমি নীলিমাকে বললাম আপু তুই কত এনেছিস বিয়ের খরচ বাবদ ও বললো ৬০ হাজার। 
আমি বললাম দাও আমাকে। 
ও কোনো কথা না বলে দিয়ে দিলো। আমি সাজিদের টাকার সাথে এই টাকার ৫০ হাজার যোগ করে ২ লাখ বানিয়ে নীলিমাকে দিয়ে বললাম এটা তোমার দেনমোহর পরিশোধ। 
আর বাকি টাকা আর সকালে তুলা খালার টাকা থেকে বিয়ের খরচ মিটিয়ে বাইরে বেরিয়ে সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করে নিলাম। আমি সাজিদকে বললাম, ভাইয়া তোমার বাবা কোথায়, তিনি কি রাজি হতেন না?
সাজিদ বললো উনি রাজি, এইযে উনি অলরেডি দুটা ভিসা পাঠিয়ে দিয়েছেন আমেরিকা যাওয়ার জন্য। নীলিমাকে নিয়ে। ওখানেই যাবো প্রথম হানিমুনে। 
আমি বললাম তাহলে, আজ তোমরা যার যার বাসায় যাও, নীলিমা আপু তোমার তো আজকে সাজিদ ভাইয়ের বাসা, হাসতে হাসতে বললাম। আর আক্কাস মামা তুমি তানিশা আর তিন্নিকে পৌছে দিয়ে আসো। আমি খালার সাথে দেখা করে আসি। কিছু তো বুঝাতে হবে। তিন্নি যাওয়ার সময় আবার আমার পাশে এসে আমার হাত ধরে বললো ভাইয়া, সাবধানে থাকবেন। আমি হাত ছাড়িয়ে বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি খালার বাসায় আসলেই খালা বললো আক্কাস কই, ওকে থানায় ভরা হয়েছে তো। 
আমি হতাশ সুরে বললাম, জি খালা কাজ তো হয়ে গেছে কিন্তু ওরা তো আরো ১ সপ্তাহ আগেই বিয়ে করেছে। তুমি ভুল ইনফরমেশন দিয়েছো।
আমার কথা শুনেই খালা হাত পা ছড়িয়ে কান্না শুরু করলেন, "এই জন্যই মেয়েটা আমার পাল্টে গেছে, আমার কি হবে, শেষ পর্যন্ত ঐ হতচ্ছাড়াটা আমার জামাই। আমি কখনোই মেনে নিবো না। "
হাফ ঘন্টা পরে আমি চলে যাচ্ছিলাম, খালা বললেন শিমুল, এক কাজ কর, আমি ওকে মেনে তো নিবোনা, কিন্তু বিয়ে যখন হয়ে গেছে, ওই ছেলেটাকে থানা থেকে বের করে আন, আমার মেয়েটা একা একা রয়েছে। আর হ্যা একটা কথা,  আমার বাড়ি, নীলিমা আর ওই বদমাশটার জন্য অফ এটাও বলে দিস। ছাড়ানোর জন্য যা লাগে আক্কাসকে তুলে নিতে বলিস।

আমি বললাম খালা, এই মেয়েটি কেমন লাগে তোমার কাছে (তানিশার ছবি দেখিয়ে বললাম), খালা বললেন তোর জন্য। আমি বললাম না খালা আক্কাস মামুর জন্য৷ বেচারি তো তোমার সেবাই করে সারাদিন। খালা ভালো করে দেখে বললেন এমন সুন্দর একটা মেয়ে আক্কাসকে বিয়ে করবে, ও তো হিসেবে আমাদের কাজ কর্ম দেখা শোনা করে।
আমি বললাম তুমি আক্কাসকে যে ভাই বলো, এটা হলেই তো হয়ে যায়৷ তোমার কথায় রাজি সবাই হবে। খালুর নাম ডাক অনেক ছিলো, তোমারও কম নয়। খালা বললেন এমন সুন্দর মেয়েটা আসতে চাইলে, আক্কাসকে আমি আমার কাজিন হিসেবেই ভাই বানিয়ে দিবো, আর আমি সত্যিই তো আক্কাসকে আমার ভাইয়ের মতোই জানি। আমার মেয়ে তো চলেই গেলো, এই মেয়েটাকে বাড়ি রাখবো। 
আমি খালাকে বললাম, ঠিক আছে, খালা তাহলে কালকে ওদের আসার ব্যবস্থা করতেছি। 
আমি আক্কাস, আর তানিশাকে ফোন দিলাম। ওদেরকে বুঝায়ে বললাম যে কাল তোমরা এসে যেনো নীলিমার বিয়ের খবর কাউকে দিয়োনা, তাইলে খালা খুব রাগ করবে, আর ষড়যন্ত্রকারী ভাবতেও পারে রাগের বশত। ওরা বললো শুধু আমরাই জানি। তানিশা বললো তিন্নিকেও নিষেধ করে দিচ্ছি।
পরদিন তানিশারাও এলো, সাথে ওর বাবা, মা, তিন্নি। খালা একদম বড় বোনের মতো আক্কাসের ব্যাপারে দায়িত্ব নিয়ে কথা পাকাপাকি করতে লাগলেন।
আমার কিছু ভালো লাগছিলো না। আমি, একটা রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পরে দেখি তিন্নি আমার রুমের দরজায় এসে বলছে ভাইয়া আসবো। 
হ্যা আসো৷ দেখলাম নীল শাড়ি পরে আসায় ওকে খুব সুন্দর লাগছে। এসে বললো, ভাইয়া কেমন লাগছে আমাকে?'
আমি বললাম বিউটিফুল মেয়ে। 
ও বললো, আপনি একবার বলেছিলেন শাড়ি পরা মেয়ে আমার ভালো লাগে।
আমি বললাম, ও আচ্ছা তাই বুঝি৷ তুমি কি কিছু বলবা এখন?
তিন্নি বললো না ভাইয়া, এমনিতেই এলাম।
আমি বললাম এক কাজ করো খুব ঘুম আসছে আমার, পরে কথা বলবো। 
বলে পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষণের মাঝে ঘুমিয়েও পড়লাম, কিন্তু যতক্ষণ জেগে ছিলাম, ওর যাওয়ার আভাস আমি পাইনি।
কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম বুঝিনি, তবে ঘুম ভাংলো তিন্নির ডাকে, ও আমার হাতে ধাক্কা দিচ্ছিলো আর বলছিলো, ভাইয়া ওঠেন, আপনার খালা ডাকছে নিচে। 
আমি উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে নিচে এসে দাড়ালাম, তিন্নি আমার পেছন পেছন এসে পাশে দাড়ালো, আমি এগিয়ে যেয়ে খালার পাশের একমাত্র ফাকা যায়গাটায় বসে পড়লাম। ওদের বিয়ের ডেট ঠিক হয়ে গেলো।

এক সপ্তাহ পরে আক্কাসের বৌ হিসেবে তানিশা এই বাড়ি চলে এলো।
খালা তাকে বরণ করে নিলেন, আজ খুব কান্না করছেন খালা। তানিশা জিজ্ঞাসা করলো আমি আপনার ভাই বৌ, আপনার ছোট। আপনার কাছ থেকে ভালোবাসা চাই, কোনো অধিকার চাইনা। 
খালা বললেন, এমন বলোনা, আমার মেয়েটার কথা খুব মনে পড়ছে। 
তানিশা বললো, শিমুলকে বলেন ও কিছু করতে পারবে।
খালা বললেন কিভাবে বলি ওকে, আমি সাজিদকে জেলে পর্যন্ত পাঠিয়েছি। দেখি তাও শিমুলকে বলি।

খালা আমাকে ডেকে ১০০০০ টাকা হাতে দিয়ে বললেন, শিমুল নীলিমাকে খুব মনে পড়ছে। একটু ব্যাবস্থা কর। যাওয়ার সময় ওদের জন্য মিষ্টি নিয়ে যাস।
আমি আর কি করবো, নীলিমাকে নিয়ে আসলাম, সাজিদও এলো। ওরা এসেই খালাকে কদমবুসি করলো। খালা বললেন, "কি করে তোদেরকে ছেড়ে আমি থাকবো।" আক্কাস আর তানিশাও পাশে দাড়িয়ে আছে, ওদের চোখে ও পানি।
আমি বললাম, খালা আমরা স্যরি। খালা বললেন, কিসের জন্য।
আমি সব খুলে বললাম। খালা আমাকে বললেন থাক আর বলতে হবেনা, তুমি অনেক পেকে গেছো। তোমার ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
আমি বললাম, এখন সব দোষই তো আমার, ওকে ঠিক আছে। 
নীলিমা আপু, আমাকে বললেন, শিমু তুই কাল তোর দুলাভাইয়ের দোকানে আসিস কালকে। তোকে এক সেট জামা কাপড় দিবো।
আমি বললাম, না তোমাদের জামা কাপড় নিয়ে আমি কি করবো। আমার আছে। 
আপু বললো, তুই না আসলে আর কখনোই আমাকে আপু বলে ডাকবিনা। 
আমি বললাম, "জো হুকুম মহারানী" বলে হেসে বেরিয়ে এলাম।

পরিশিষ্টঃ
আমার, বাসায় এসে ঢুকতে ঢুকতে ১১ টা বেজে গেলো। খালা অবশ্য থেকে আসতে বলেছিলো কিন্তু আমার নিজের বিছানা ছাড়া ভালো ঘুম হয়না। ১১ টা ৩০ এর দিকে আবার কল বেজে উঠলো, একটা অচেনা নাম্বার, রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশের কন্ঠস্বরটি বললো, শিমুল তুমি কি আমাকে তোমার হাত দিয়ে ধরবে। আমি তোমার মুঠোর মধ্যে নিজের হাত দিতে চাই। তোমার বুকে মাথা রেখে তোমার মুখের উপর চুল গুলি ছড়িয়ে দিতে চাই। তোমার কোলে বসে তোমার বুকের ভেতরে ঢুকে যেতে চাই। আমাকে জড়িয়ে ধরে রাতের বেলা ঘুম পাড়িয়ে দেবে তুমি। অভিমান করবো তুমি আমার গাল টিপে দেবে। আমি মুখ ঘুরিয়ে নিবো, তুমি আমাকেই ঘুরিয়ে কোলে টেনে নেবে। আমার তপ্ত ঠোটে তুমি ঠোট রাখবে। আমি হারিয়ে যেতে চাই তোমার ভেতরে। কম্পমান আমার এই দেহটাকে তুমি শরীর দিয়ে আকড়ে ধরে রাখবে আর মন বেধে রেখো মনে। 

আমি বললাম, তুমি সত্যিই থাকবে তো।
ওপাশ থেকে বললো, "তুমি আমার চোখে তাকিয়ে দেখো এসে"
আমি বললাম, "আসবো দেখতে তোমার চোখ, তোমাকে আমি এখন থেকেই আমার মন পরি বানিয়ে নিলাম"
ও বললো কাল এসোনা বোটানিক্যাল গার্ডেনে, ন্যাশনাল জু এর পাশে। আমি থাকবো অপেক্ষায় তোমার। বলো কোন রং এর শাড়ি পরে আসবো।
আমি বললাম, নীল শাড়ি।
পরের দিন, হালকা আকাশী রং এর শার্ট আর জিনসের একটা প্যান্ট গায়ে চাপিয়ে, একটা পাঠাও বাইক নিয়ে চলে গেলাম বোটানিকাল গার্ডেনে। গেটের মুখ থেকে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ কিনে নিলাম। ভেতরে ঢুকেই দেখি, আমার নিশী রাতের পরিটি বসে আছে একা এদিকেই চেয়ে। আমি কাছে যেতেই বললো কেমন আছেন আপনি। 
আমি বললাম, এখন আবার আপনি হলাম ক্যামনে। ওর হাতটি ধরে মুঠোর মাঝে নিলাম, ও উঠে দাড়ালো। আমরা হাটা শুরু করলাম।
ও বললো, ফুল গুলি কাকে দিবে তুমি।
আমি বললাম ফুল তো আমি হাতে নিয়েই ঘুরি, বলে ওর পেছনে গিয়ে গুচ্ছটা খুলে, চুলের খোপায় গুজে দিলাম একটা গোলাপ, ও আমাকে হ্যাচকা টান দিয়ে সামনে এনে ঠোটে একটা চুমু দিয়ে অস্ফুটে বললো, ভালোবাসি তোমাকে। 

[পাঠক পাঠিকারা নিশ্চই বুঝে গেছেন, শিমুলের নিশী রাতের পরিটি কে। লেখক তাদের জন্য শুভ কামনা করছেন, ভালো থাকুক তারা]

Writer: Md. Abidur Rahman, MBA form Institute of Business Administration (IBA), Dhaka University.   

No comments:

Post a Comment