আজ নিয়নের বিয়ে, সকলের মনেই আনন্দ শুধু নিয়ন যেনো কেমন। বিয়ে বেশি দুর কারো সাথেই না তারই খালাতো বোন ফারিয়ার সাথে। পারিবারিক ভাবে বিয়ে হচ্ছে, নিয়নের মত ছিলোনা বিয়েতে কিন্তু পরিবারের সকলের ইচ্ছায় বিয়ে হচ্ছে। নিয়ন বাধা দিতেও পারবেনা।
যাই হোক, শেষ পর্যন্ত নিয়নের সাথে ফারিয়ার বিয়ে হয়ে যায়। ফারিয়াকে অপরুপ লাগছে দেখতে। নিয়ন দেখছে কিন্তু মনের ভেতরের জিদ টা মাথা চাড়া দিচ্ছে। আর জিদ হবেই বা না কেনো। নিয়ন অত্যন্ত মেধাবী একটা ছেলে সে জাপান থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে এসে দেশে অত্যাধুনিক একটা কোম্পানিতে সিনিয়র অফিসার হিসেবে জব করে। অথচ তাকে কিনা বিয়ে করতে হচ্ছে গ্রামের এক সাধারণ মেয়েকে, তার মা বাবা যে কি বুঝে এটাই নিয়ন বুঝেনা। মেয়েটির হাতে মেহেদির লাল রং দুই হাত লাল টুকটুক করছে, কেমন নিয়নের হাত ধরে বসে আছে, নিয়নের খুবই অস্বস্তি বোধ করছে কিন্তু কিছুই বলার নেই এখন, কারন ফারিয়া তার বিয়ে করা বউ।
বিয়ের পর্ব শেষ হলে কান্নাকাটি করতে করতে বউ বরের হাত ধরেই পাশের বাড়ি মানে বরের বাড়ি হেটে এসে উঠলো। নিয়নের রুমটিও সাজানো হয়েছে কাগজ কেটে কেটে, এক তলা ছাদের ঘর। ফারিয়া খাটের উপর বসে আছে ঘোমটা দিয়ে, নিয়ন এসে পাশে বসে কিন্তু ঘোমটা ও তুলেনা, মেয়েকে দেখেও না। রাত ১২ টা বেজে গেলে ফারিয়া বলে, ঘুমাবা না তুমি, আমার ঘুম পাচ্ছে। এ কথা শুনে নিয়নের মেজাজে যেনো আঘাত করলো জমানো রাগ। চড়া স্বরে বললো, তোমার ইচ্ছা হলে ঘুমাও আর নয় জেগে থাকো আমার ইচ্ছা হলে আমি ঘুমাবো। ফারিয়া কেপে উঠে অজানা ভয়ে। সে, আগে থেকেই নিয়নকে চিনতো কিন্তু কিছুই করার নেই। সে নিয়নের দিকে পিঠ ফিরিয়ে শুয়ে থাকে, একসময় ঘুমিয়ে যায় কিন্তু কেউ খেয়াল করলে দেখতো যে ফারিয়ার চোখের কোনা থেকে গড়িয়ে পড়া অশ্রু শুকিয়ে লেগে গিয়েছে মুখে।
ছুটি শেষ হলে নিয়ন ঢাকা চলে যাবে একা, কিন্তু নিয়নের বাবা বড়ই ভালো মানুষ তিনি বললেন বিয়ে দিয়েছি তো তোকে যাতে একা কষ্ট করতে না হয়। ঢাকা যা, এক সাথে থাক, বৌ মা সাথে থাকলে কষ্ট কম হবে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাই ফারিয়াকে নিয়ে যায় নিয়ন। গাড়িতে পাশাপাশি ছিট বাসের, ফারিয়া ঘুমিয়ে নিয়নের ঘাড়ে মাথা দেয়, নিয়ন যেনো ফারিয়ার কিছুই সহ্য করতে পারেনা, ইচ্ছা করলে এতটুকু অধিকার ফারিয়াকে দিতে পারতো। কিন্তু না, নিয়ন ফারিয়াকে বলে সোজা হয়ে বসো। ফারিয়া নিয়নের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুই বলেনা।
মগবাজার দেলু রোডের একটা নিরব বাসা। তিনতলার উপরে, এটিই নিয়নদের। নিয়ন এর সাথে ফারিয়ার জীবনটা একরকম যান্ত্রিক। সে যে নিয়নের বিয়ে করা বৌ এটা শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্কেই প্রমাণ পায় আর কোনো ভাবেই না।
সেদিন নিয়ন অফিস থেকে এসে গোসলে যায়। নিয়নের নাম্বারে একটা ফোন আসে,,
ফারিয়া ফোন ধরে বলে, "হেলো",
ওপাশ থেকে একটা মেয়ে কন্ঠস্বর বলে উঠে, "আন্টি নিয়ন কই"
ফারিয়া থতমত খেয়ে বলে, "ও তো গোসলে গেছে"
রিপ্লে আসে, "ও আসলে বলিয়েন উষা ফোন দিয়েছিলো"
"ওকে" বলে ফোন রাখতে রাখতে ফারিয়া শুনে ওপাশ থেকে কথা বলে চলছে, আন্টি কি ঢাকায় আসলো নাকি কুত্তাটা কারো সাথে রিলেশন করছে।
ফারিয়ার বুকে একটা শেল বাধার মতো লাগে, সে নিয়নের বিয়ে করা বউ, অথচ তার কথা কি কেউ যানেনা, আর নাই বা জানলো সে আজ অবধি স্ত্রী হিসেবে ভালোবাসার অধিকার পায়নি নিয়নের কাছ থেকে অথচ এমন কে আছে যে কুত্তা বলার অধিকার পেয়ে যায়।
গোসল শেষ করে বেরিয়ে আসতেই ফারিয়া বললো, "শুনছো, উষা নামে কেউ একজন ফোন করেছিলো, ও তোমাকে বকাও দিয়েছে।"
নিয়ন ফারিয়ার মুখে কষিয়ে এক থাপ্পড় মারলো, তোমাকে না বলেছি আমার ব্যাপারে নাক গলাবানা। মেয়েদের এতো বাড়াবাড়ি আমার পছন্দ না।
অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও নিয়ন আজ আর ভাত খেলোনা। না খেয়েই বেরিয়ে গেলো। আর খাবেই বা কেনো। তার আজ দেখা করার কথা ওয়েস্টিন হোটেলে উষার সাথে। উষা হলো তার অফিস কলিগ বয়স নিয়নের সেইম। নিয়ন মাঝে মাঝে ভাবে কেনো যে তার ফারিয়ার সাথে বিয়ে হলো, একটা গ্রাম্য মেয়ে মাত্র ইন্টার পাশ। যদিও ফারিয়া সুন্দরী অনেক কিন্তু কোনোদিন কি পারবে উষার মতো সাজগোজ করতে। আধুনিক সমাজে ফারিয়ার মতো মেয়ে চলেনা, উষার মতো একটা বউ হলে কতই না সুন্দর হতো।
উষা ওয়েস্টিনে আসে, একটা জিনস প্যান্ট আর খয়েরি লাল সাথে কালো চেকের একটা শার্ট পরে, শ্যাম্পু করা চুলগুলো উড়ছে, নিয়নের দেখেই চোখ ঘুরে যায়। উষা আসতেই নিয়ন সাথে করে নিয়ে আসা রজনীগন্ধার তোড়টা তাকে দেয়, উষা একটা হাসি দিয়ে বলে আন্টি কবে এসেছে নিয়ন। নিয়ন মনে মনে প্রশান্তি লাভ করে যে ফারিয়া তার বউ এটা উষা বুঝতে পারেনাই। উষার সাজগোজে মনে হচ্ছে হলিউড অভিনেত্রী, নিয়ন তার কথা বলার মুড, ঢঙ সব কিছুতেই মুগ্ধ। সেদিন উষা আর নিয়ন ওয়েস্টিনে ২৫০০ টাকা বিল করে, নিয়ন হাসিমুখে বিল পরিশোধ করে।
এদিকে নিয়ন না খেয়ে চলে যাওয়ার পর ফারিয়ার দুচোখ ফেটে নামে অশ্রুজল। নিয়নের সামনে কান্না করা তার নিষেধ, সে কিছুটা ধার্মিক প্রকৃতির মেয়ে, ইন্টার পর্যন্ত সে তেমন কারো সাথেই মিশেনাই আর প্রেম তো অনেক দুর। আর বিয়ের পর এমন এক জন তার বর যে কিনা তাকে কোনোভাবেই ভালোবাসেনা। শুধুমাত্র কাগজ পত্রে লিখা বউ তাই খাবার দাবার আর পোশাক পরিচ্ছদ দেয় বলেই মনে হয়। শপিং কেমন করে সে সৌভাগ্য ফারিয়ার হয়নি, কারন ফারিয়ার মতো একটা গ্রাম্য মেয়ে তার বউ এটা লোকে জেনে ফেলবে, সেই ভয়ে নিয়ন নিজেই তার ইচ্ছা মত জামা কাপড় কিনে আনে। ফারিয়ার সেগুলো যে পছন্দ হয়না তা নয়, কিন্তু তারও ইচ্ছা হয় নিয়নের সাথে একটু যেয়ে একটা লাল শাড়ি কিনে আনবে, আবার নিয়নকে পছন্দ করে একটা পাঞ্জাবী কিনে দেবে। তার পর দুজনে সেই শাড়ি আর পাঞ্জাবী পরে ব্যালকনিতে বসে বসে গল্প করবে। কিন্তু না সপ্ন সপ্নই থেকে যায়। নিয়ন তো অস্পৃশ্য, ফারিয়া তাকে কিভাবে কাছে পাবে।
সেদিন রাতে ফারিয়ার বমি হয়, নিয়ন খুব বকাবকি করে তোমাকে বলেছিলাম পিল খেতে খাওনি কেনো, যদি কিছু হয়ে যায় তোমার খবর আছে। ফারিয়া ইচ্ছা করেই খায়নি কারন তার তো আর ভালোবাসা নেই, যদি একটা বেবি হয় তবে তাকে নিয়ে অন্তত সময় গুলো কেটে যাবে এটাই ফারিয়ার ইচ্ছা।
পরদিন নিয়ন অফিসে গেলে, ফারিয়া বাসার নিচে নেমে যায়। বাসার সামনেই ডাক্তার ফারজানা আক্তারের বাসা কাম মিনি ক্লিনিক। তিনি আবার নারী ও শিশু বিষয়ক চিকিৎসক ছিলেন ঢাকা মেডিক্যালের। এখন অবসরে, তিনি একটা মা ও শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র খুলেছেন। ওখান থেকে ফারিয়া প্রেগনেন্সি চেক করিয়ে আনে। ডাক্তার ফারজানা আক্তার ফারিয়ার পেটে বেবি আছে এটা নিশ্চিত করে খুব খুশি হলেন। ফারিয়ার চোখে অশ্রুজল দেখে কাছে টেনে নিলেন, বললেন বোন আমি সারাদিন শত শত বাচ্চা আর মা'দের সেবা করি, কিন্তু আমার যে মা হওয়ার সৌভাগ্য হয়নাই আর কখনোই হবেনা।
ফারিয়া ফিরে আসে, আসার সময় বাসার নিচে মুসলিম সুইটস এর দোকান। ফারিয়া এক কেজি মিষ্টি কিনে নেয়। নিয়ন বাবা হতে চলছে আর ফারিয়া মা হতে চলছে এর চেয়ে আর ভালোলাগার কি আছে তার কাছে।
নিয়ন অফিস থেকে আসবার সময় হয়ে আসতেই ফারিয়া কাপড় পাল্টে একটা শাড়ি পরে নেয়, এই শাড়িটা বিয়ের পর পর নিয়ন দিয়েছিলো। তার পর লাল টুকটুক একটা লিপস্টিক ঠোটে দেয় কানের দুল পরে, চেন পরে গলায়, পায় আলতা দেয়। এগুলো সবই বিয়ের সময়কার। কারন সাজগোজের কিছুই নিয়ন কিনে দেয়না তার কথা হলো গ্রামের মেয়ে তুমি সাজগোজের বোঝো কি। কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে দুই হাত দিয়ে দরজা আগলে ধরে ফারিয়া, নিয়ন বলে কি হইছে, ফারিয়া ঘরে ঢুকে যায় এক হাতে প্রেগিনেন্সি টেস্টের রিপোর্ট এনে নিয়ন কে দেয় আরেক হাতে মিষ্টি দেয়। কিন্তু না বিধি বাম, টেস্টের রিপোর্ট দেখে নিয়ন রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে যায়, বলে আমি মানা করেছিলাম, আমার উপরে অধিকার আনার প্রচেষ্টা,, তুমি যতই চেষ্টা করো নিয়ন কখনোই তোমাকে অধিকার দেবেনা।
ফারিয়া বলে, আমি তো তোমার বউ, আর আমার পেটে তোমারই বেবি।
নিয়ন বলে কখনোই আমি সেটা হতে দেবোনা, কালকেই চলো ডাক্তারের কাছে যাই বাচ্চা ফেলে দিতে হবে।
ফারিয়া বলে, "আমাকে কোনো অধিকার তুমি না দাও সমস্যা নেই, ভালো না বাসলেও সমস্যা নেই। আমার বাচ্চা হলে আমি গ্রামে চলে যাবো, তোমার পথ আটকাবোনা তুমি যাকে ইচ্ছা তাকে নিয়ে থেকো। কিন্তু এই বাচ্চা নষ্ট করতে দিবোনা। এ আমার সন্তান।"
নিয়নের মুখে হাসি ফুটে, ফারিয়া স্ব-ইচ্ছায় চলে গেলেই তো সে বেচে যায়, তাই বলে, "হ্যা যেদিন চলে যাও, সেদিন এক কেজি মিষ্টি কিনে দিয়ে যেয়ো।"
ফারিয়ার চোখে অকারণেই জল আসে সবসময় কারন, যার কাছে হৃদয়ের ভালোবাসার মূল্য নেই, চোখের জল তার কাছে কোনোই মূল্য রাখেনা।
------------------------------
ওদিকে নিয়নের প্রমোশন হয়, আয় রোজগার বেড়েছে অনেক। নিয়ন একটা গাড়ি কেনে যদিও সেকেন্ড হ্যান্ড কিন্তু নতুনের মতোই। ফারিয়া গাড়ি দেখে খুব খুশি হয়,, মাঝে মাঝে গাড়িটার গায়ে হাত বুলায়, এত চকচকে একটা ট্যাক্সি। বন্ধ গাড়িতে উঠে বসে থাকে মাঝে মাঝে, নিয়ন ওকে কখনোই গাড়িতে বাইরে নিয়ে যায়না, কারন তার বন্ধুরা দেখে ফেলতে পারে। ফারিয়া গাড়িটার সামনে দাড়ায় আর নিজের ফুলে উঠা পেটে হাত দিয়ে টোকা দিয়ে বলে বাবু দেখো এইটা তোমার বাবার গাড়ি। এই গাড়িতে উঠে আমরা তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো। যদিও ফারিয়া এটা শিউর যে নিয়ন তাদেরকে তুলবেনা, তার পরেও ফারিয়া এভাবেই নিজের বাচ্চার সাথে কথা বলে পেটে হাত বুলিয়ে তার ধারণা তাহলে বাচ্চা সু-ধারণা নিয়ে পৃথিবীতে আসবে।
এ গাড়িতে ফারিয়ার উঠার সৌভাগ্য না হলেও, এখন নিয়নের নিয়মিত ডিউটি হলো অফিসে যাওয়ার সময় উষাকে নিয়ে যাওয়া আর ফেরার সময় উষাকে তার বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসা। উষা সেদিন নিয়নকে একটা নোটবুক কিনে দিয়েছে সাথে এক তোড়া গোলাপফুল। নোটবুকের প্রথম পেজেই সুন্দর করে লিখে দিয়েছে, "Neon, I Love You. You are my life_ Usha" নিয়ন এটা দেখে চরম পুলকিত। উষাকে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে যাবে বলে পরিকল্পনা করতে থাকে নিয়ন।
ওদিকে, ফারিয়ার অবস্থা খুবই খারাপ বাচ্চা হওয়ার সময় হয়ে আসছে। নিয়নের মা গ্রাম থেকে একটা ছোটো মেয়েকে পাঠিয়েছে সবসময় ফারিয়ার সাথে থাকার জন্য। ফারিয়ার মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় নিয়নের মাকে সব বলতে, কারন তিনি খুবই আন্তরিক। কিন্তু নিয়ন ভয় দেখায় যে যদি ফারিয়া কিছু বলে তবে খুবই খারাপ হবে ব্যাপারটা। সেদিন খুব অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় ডা. ফারজানা আক্তারের মা ও শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে যায়, সাথে গ্রাম থেকে আসা মেয়েটি বলে আপা ভাইয়াকে কি আসতে বলবো।
ফারিয়া ফোন দেয়, নিয়ন সব শুনে বলে, "আমার অফিসে কাজ আছে, তুমি ওখানে ভর্তি হও। আমি আসতে পারবোনা এখন। অফিসের কাজে জরুরী কক্সবাজার যাচ্ছি।"
ডা. ফারজানা আক্তার ফারিয়াকে জিজ্ঞাসা করেন, "বোন তোমার হাজব্যান্ড কোথায়, তোমাকে সিজার করা লাগবে।"
ফারিয়া বলে, "আপা, টাকা পয়সা আমার সাথে আছে, উনি আসতে পারবেন না অফিসের কাজে কক্সবাজারে যাচ্ছেন। আপনি যা করার করেন, আমার বেবিটা যেনো ভালো থাকে।"
সে অনুযায়ী কাজ হয়,সিজার করা হয় ফারিয়ার, মেয়ে বেবি হয় তার। এর মাঝেই বুদ্ধিমান মহিলা ড. ফারজানা আক্তার তিনি সব বুঝে যান। তিনিও কষ্ট পান। ওদিকে বেবিটা এত সুন্দর হয়েছে যে তার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছেনা ফারিয়া। সে নার্সকে বলে তার আর তার বেবির একটা ছবি তুলে দিতে। নার্স ছবি তুলে দিলে সেটা নিয়নকে সে মেসেঞ্জারে পাঠায়, আর বলে তুমি মেয়ের বাবা হয়েছো।
ড. ফারজানা আক্তার অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ। ফারিয়া আর তার বেবিকে রিলিজ দেওয়ার সময় বলেন, "আজ তোমাদের রিলিজ দিবো, কিন্তু তোমার হাজব্যান্ড আসবেনা।"
ফারিয়া অশ্রু আটকাতে পারেনা, সে ফারজানা ম্যাম কে জড়িয়ে ধরে আর বলে, "আমার সে সৌভাগ্য নেই ম্যাম। এই বাচ্চা হয়েছে, এখন আমাকে চলে যেতে হবে ওর বাবাকে ছেড়ে। তিনি আমাকে পছন্দ করেন না। আমাকে বউ হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করেন।" লাল গোলাপের ভালোবাসা
ডা. ফারজানা ফারিয়ার পিঠে হাত রেখে বলেন, "আমি নিঃসন্তান, তুমি আমার বোনের মতো, তুমি না করবানা, তুমি আমার বাসায় চলো। "
ফারিয়া বলে, "ম্যাম আপনাকে আমি বড় আপার মতই দেখি কিন্তু ওর বাবা আসুক, দেখি উনি কি বলেন।"
ড. ফারজানা বলেন, "ঠিক আছে, ও যদি কথা না শুনে তুমি আমাকে বলিও আমার হাজব্যান্ড উকিল, বুঝাবো তাকে।"
★
ওদিকে নিয়নের কি আর সময় আছে ফারিয়ার খবর নেয়ার। সে এখন আছে দুনিয়ার স্বর্গে। প্রজাপতির মতো উড়ছে উষাকে নিয়ে। কক্সবাজারে এসে উষাকে নিয়ে একটা হোটেলে উঠেছে যদিও তারা, দুই রুম নিয়েছে, কারন কাবিন নামা ছাড়া এসব হোটেলে এক সাথে থাকতে দেবেনা, আর থাকতে দিলে সবাই মনে করে পতিতা মেয়ে।। তাই নিয়নের পছন্দ নয় ভালোবাসার মেয়েকে পতিতা হতে দিতে।
রাতের বেলা হোটেলের লজে বসে উষা নিয়নকে বলে, "কি যুগে বাস করি, যেখানে মুখে এত আধুনিকতা আউড়ায় আবার কাবিন নামা না হলে একরুমে থাকলে পতিতা বলে,, এদের কাছে ভালোবাসার মূল্য নেই।"
নিয়ন বলে, "ঠিকই বলেছো, বাংলাদেশের মানুষ আধুনিকতাই বুঝেনা।"
পরদিন ওরা ফিরে আসে, নিয়ন ডিসিশন নিয়ে ফেলেছে এবার বাসায় গিয়ে একটা হেস্ত নেস্ত করে ফারিয়াকে চলে যেতে বাধ্য করবে। ঐ বৌ আর বাচ্চা ওর দরকার নেই, ওরা চলে গেলেই সে বেচে যায়। তার পরেই সে উষাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে, বিয়ে করে ঘরে তুলবে।
বাসায় ফিরলে ফারিয়া খুব খুশি হয়, বাচ্চাটার মুখে তাকালে মনে হয় আরশে থাকা রব্বুল আল-আমিন সকল স্নেহ মায়া ভরে দিয়েছেন। কিন্তু অহংকার আর জিদের চাদর যে আরো কঠিন এটা না সরা পর্যন্ত কেউ স্নেহ মায়া কিভাবে বোধ করবে। তাই নিয়নের মন নরম হলোনা। সে বললো, অনেক সুন্দর হইছে তোমার বাচ্চা, কিন্তু তুমি অনেক আগে একটা কথা বলেছিলে মনে আছে.........
[ফারিয়া,,, মনে মনে ভাবে এবার বোধ হয় বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বলবে সে কথা মনে রাখার দরকার নেই]
....... কিন্তু না, ফারিয়ার ধারণা ভুল ছিলো, নিয়ন বলে, তোমার কাবিন নামায় লিখা সকল টাকাই দিয়ে দিবো। নিয়ম কানুন যা যা আছে মেনেই ডিভোর্স দিবো৷ টাকার কোনো সমস্যা নেই আমার।
ফারিয়া বিছানায় লুটিয়ে পড়ে, টাকা দিয়ে কি করবে সে। তার সকল সপ্নই যে ভুল ছিলো তাহলে। সেদিন গভীর রাতে, সে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পরে উঠে, অযু করে, বেবিটার মুখে ঠোটে চুমু খায়, তার কলিজার টুকরা বাবুটা ঘুমাচ্ছে গাল হা করে।
তার পরে, নামাজের পাটিতে বসে, দু-রাকাত নামাজ পড়ে, আল্লাহর কাছে অশ্রুভেজা নয়নে মুনাজাত করে, যে মুনাজাতের কথা কারো কানে পৌঁছায় না। সে আল্লাহকে বলে, "আল্লাহ, এ আমার সন্তান, আল্লাহ কেউ নেই আমার কথা শুনার, আর আমি কাউকে বলবোও না,"............ আরো অনেক কিছুই বলার ছিলো সে কিছুই বলতে পারেনা,,, দুই হাত উপরে তুলেই রাখে কিন্তু ঠোটের ভেতর দিয়ে কোনো কথাই তার বের হয়না,,, শুধু বিয়ের পরের তিনটি বছরের কষ্টগুলো একে একে তার মনে পড়ে আর দুই চোখে নেমে আসে অশ্রুর বন্যা। তার এই মনে আসায় ছিলোনা কোনো বিচারের দাবী, ছিলো শুধুমাত্র একটু ভালোবাসা পাওয়ার আকুতি। যদিও সে হাত তুলে কিছুই বলতে পারেনাই কিন্তু আল্লাহ তো মানুষের অন্তরের খোজ রাখেন। ফারিয়ার অশ্রুভেজা এই প্রার্থণা যাতে ছিলোনা কোনো অবৈধ ভালোবাসার চাওয়া, ছিলো শুধু মাত্রই না পাওয়া ভালোবাসার চাওয়া যা সে অধিকার থাকলেও কখনোই পাইনি।
ফজরের নামাজ পড়ে বাচ্চাকে দুধ খাইয়ে বাচ্চা কোলে নিয়ে শুয়ে থাকে ফারিয়া, আর নিয়নকে বলে তুমি কাগজপত্র ঠিক করো সমস্যা নেই। নিয়ন খুশিমনে অফিসে যায়, উষাকে হাই বলে, কিন্তু আজকে উষা যেনো একটু কেমন কেমন হয়ে গেছে। উষা বলে নিয়ন তোমাকে আমার কিছু বলার আছে অফিসের পরে একযায়গা বসবো। নিয়ন ভাবে আজ মনে হয় উষা তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে। আর সে এটাও ভেবে নেয় যে উষা বিয়ের প্রস্তাবনা না করলেও নিয়ন নিজেই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে।
অফিসের সময়টা যেনো মোটে কাটতেই চায়না। তার পরে, অফিস শেষ হতেই নিয়ন উষাকে নিয়ে আসে হাতিরঝিলে। এক পাশে বসে, উষা বলে নিয়ন তোমাকে অনেকদিন ধরেই আমার একটা কথা বলার ছিলো, কিন্তু বলতে পারিনি কারন তোমাকে অনেক ভালোলাগতো তাই। তবে বলতেই যখন হবে তখন বলেই দেই, আমার তোমার সাথে রিলেশন রাখা আর পসিবল না। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আমার বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে।
নিয়ন,,, চমকে উঠে আর বলে সমস্যা নেই, আমি আর তুমি এক সাথে বিয়ে করবো পালিয়ে। আমার ইনকাম তো কম নয় একেবারে।
উষা বলে, " না, তোমার সাথে পালালে তো আমাকে অনেক সুযোগ হাতছাড়া করতে হবে। কারন বাবার বন্ধু একজন শিল্পপতি তার ছেলের যে টাকা পয়সা আছে তাতে তোমার মতো ইনকামের দুই চারটা কাজের লোক ও তার থাকতে পারে বলে সম্ভাবনা আছে।
নিয়ন বলে, "তুমি এতো লোভি তো জানতাম না.......
উষা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, " কথা শেষ, দেখে নাও ঐ যে উনি আসছেন, উনার সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।"
নিয়ন, প্রবল রাগে টলতে টলতে উঠে এলো, গাড়ি চালাতে ভালো লাগছেনা তার আর, ইচ্ছা করছে আত্নহত্যা করতে। সে ভেবে নিলো সেটাই করবে। ভাবলো আজ, গাড়ি নিয়ে ট্রাকের নিচে চলে গেলে কেমন হয়, আবার ভাবছে রেল লাইনে যাই। অনেক ভেবে চিন্তে সে রেললাইনেই আত্নহত্যা করবে বলে ভাবলো।।
মগবাজার ক্রসিং এর পাশে গাড়ি রেখে সে লাইন ধরে হাটতে লাগলো ইচ্ছা যে, ট্রেন আসলেই সে লাইনে শুয়ে পড়বে।
এদিকে এক ফকির মহিলা খুব জ্বালাতন করছে তাকে, ক্ষুধা লাগছে ক্ষুধা লাগছে বলে চিল্লাচ্ছে, কোলে একটা ছোট্ট মেয়ে সম্ভবত ওর সন্তান। যাই হোক আজ আত্নহত্যা করতে হবে, তাই এই শুভদিনে ও আর ফকির মহিলাটিকে ফিরালোনা,, বললো আসো, বলে ক্রসিং এর ধারেই একটা ছোট্ট হোটেলে বসিয়ে হোটেল বয়কে বললো ভালো করে মুরগীর মাংস আর রুই মাছ দিয়ে ভাত দাও এদের। ওরা খাচ্ছে আর নিয়ন দেখছে, আর ভাবছে যে উষাকে নিয়ে এক বিকাল বসে ওয়েস্টিনে কেএফসি চিকেন দিয়ে ফ্রাইড রাইস খেয়ে বিল আসে হাজার টাকা। আরো কিছু খেলে এক বিকালেই শেষ হয়ে যায় ২/৩ হাজার টাকা। আর এই হোটেলে বিল আসলো মাত্র ১৯০ টাকা। আর তাতে এই ফকির মহিলা কত সন্তুষ্ট। এর মাঝে একটা ট্রেন চলে গেলো কিন্তু নিয়নের আত্নহত্যার কথা মনে থাকলোনা। ফকির মহিলা খাওয়া দাওয়া শেষ করে দোয়া করলো জোরে জোরে নিয়ন পাশে থেকে সব শুনতে পেলো। ফকির মহিলা দোয়া করছে,, "আল্লাহ যে আমাকে আর আমার বাচ্চাকে খাওয়ালো, তুমি তাকে ফুলের মতো ফুটফুটে একটা মেয়ে বাচ্চা দিয়ো...........।"
নিয়নের মনে কেমন যেনো একটা বাড়ি লাগলো, তার তো একটা মেয়ে হয়েছে, তার বউ কে কখনোই একটুও ভালোবাসেনি সে, কেমনে পারলো সে। কোথা থেকে রাজ্যের ভালোবাসা এসে নিয়নের মনকে আচ্ছন্ন করে ফেললো, সে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এসে, ফারিয়াকে বললো চলো বের হতে হবে।
ফারিয়া ভাবলো, মনে হয় ডিভোর্স দিতে যাচ্ছে। সে অশ্রুসজল নয়নে শাড়ি পরে বের হলো কোলে বাচ্চা নিয়ে। আজ নিয়ন এসে ড্রাইভারের পাশের ছিটের দরজা খুলে ফারিয়াকে বললো উঠে বসো।
ফারিয়া, কান্নাভেজা কন্ঠে বললো, "গাড়ির কি দরকার ছিলো, রিকশায় বা সিএনজিতে নিয়ে গেলেই পারতে।"
নিয়ন কিছুই বলেনা, গাড়িতে বসিয়ে এসি চালিয়ে দেয় ফারিয়ার শরীরে খুব ভালো লাগছে, গাড়ির ঠান্ডা আবহাওয়ায় আরাম পেয়ে বাচ্চাটাও ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু ফারিয়ার মনে বইছে ঝড়।
কিন্তু গাড়ি চলতেছে তো চলতেছেই। ফারিয়ার সম্বিত ফিরে রাস্তার মাইলস্টোন এ লিখা দেখে, নারায়নগঞ্জ। চট্টগ্রামের পথে যাচ্ছে গাড়ি। ফারিয়া ভয় পেয়ে যায়, যে লোকটা তাকে কখনো গাড়িতে করেই নেয়না সে আজ তাকে নিয়ে কই যাচ্ছে। আর সেকি বিশ্বাসের যোগ্য। নাকি বাচ্চা সহ তার কোনো সর্বনাশ হতে যাচ্ছে।
সে নিজের বিপদ নিয়ে ভাবেনা, কিন্তু বাচ্চার কিছু হোক তা কখনোই চায়না। ফারিয়া কান্নাভেজা কন্ঠে বললো, "নিয়ন কোনোদিন কোনো অনুরোধ আমি করিনাই, শুধুমাত্র একটা কথা রাখবে তুমি।"
নিয়ন বলে, "হ্যা বলো"
ফারিয়া বলে, "আমাকে যা খুশি করো, কিন্তু আমার বাচ্চাটার কিছু হোক আমি চাইনা। আমাকে নামিয়ে দাও আমি দুচোখ যেদিকে যায় চলে যাবো কোনোদিন তোমার সামনে আসবোনা।"
নিয়ন আর সহ্য করতে পারেনা, আসলেই তো কি দিয়েছে সে ফারিয়াকে। কিছুই দেইনি। সামান্য তম ভালোবাসাও দেইনি এতদিন। অশ্রু আসে দু-চোখ জুড়ে, গাড়ি এক্সিডেন্ট হতে পারে ভেবে এক পাশে গাড়ি দ্রুত পার্ক করে, তার পর নেমে আসে, নেমে ফারিয়ার পাশের দরজা খুলে বলে, "ফারিয়া নেমে আসো তুমি।" ভয়ার্ত চোখে কিন্তু এক অজানা আশা নিয়ে ফারিয়া নেমে আসে, তার চোখে রাজ্যের ভয় আর নিসীম আকুতি, বাচ্চাটাকে বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেছে। ফারিয়া কিছু বলতে যায়,,,, কিন্তু আর পারেনা, নিয়ন বাচ্চা সহ ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে। ফারিয়া বুঝতে পারেনা কি হইছে কারন সে কোনোদিন তো আর ভালোবাসা পায়নি তাই কিভাবে বুঝবে যে তার কোনো কিছু বলার আছে কিনা আর। ফারিয়া মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে, আর নিয়ন তার মুখ টেনে ধরে ঠোটে, মুখে গালে চুমু খায়। বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিয়ে বাচ্চাটার গালে, মুখে, হাতে, পায়ের পাতায় চুমু খায়।
নিয়ন ফারিয়াকে বলে, "তুমি কোথায় যাবা ফারিয়া, তুমি যে আমার বউ, আমার ভালোবাসা, এতোদিন তোমাকে চিনতে পারিনি, আগে তো বুঝিনি আমার মনে এতো ভালোবাসা লুকিয়ে আছে তোমার জন্য, কেনো খুঁজে পাইনি। "
ফারিয়াও নিয়নকে জড়িয়ে ধরলো কিন্তু দুই মানব মানবীর বুকের মাঝে একটা ফাকা যায়গা থেকে গেলো, যেখানে স্বজতনে আগলে ধরা আছে আরেকটি উপহার- ফারিয়া আর নিয়নের বেবি।
ফারিয়া বললো, "আমি তো এই দিনের আশায় ছিলাম, যে একদিন তুমি আমাকে ভালোবাসবে।"
তার পর ফারিয়াকে আবার গাড়িতে বসিয়ে দেয়, বাচ্চাটাকে ফারিয়ার কোলে বসিয়ে দিয়ে বলে আজ আমরা হানিমুনে যাচ্ছি যাবানা তুমি।
ফারিয়ার চোখ থেকে মুছে গিয়েছে ভয়, সেখানে আর নেই কোনো দুশ্চিন্তা বরং ফুটে উঠেছে এক পরম নির্ভরতা। গাড়িতে উঠতেই বাচ্চাটা আবার ঘুমিয়ে পড়েছে, ওকে বুকের উপর শুইয়ে রেখে ফারিয়া আবার দুই হাত তুলেছে মহান রব্বের কাছে, আজও ফারিয়া কিছু বলতে পারলোনা, কারন সে কিছু বলতেই পারেনা৷ তবে আজও জল তো বিসর্জন করলো তার দুই চোখ। সেই জলে ছিলো কৃতজ্ঞতার প্রকাশ।
রাস্তার পাশে একটা বড় হাইওয়ে হোটেল দেখে গাড়ি পার্ক করলো নিয়ন। ফারিয়াকে নিয়ে হোটেলে উঠে এলো। ফারিয়াকে বললো কি খাবা তুমি ফারিয়া বললো তোমার যা ইচ্ছা তাই খাওয়াও। ওরা একটা ভি আই পি কেবিনে উঠে বসলো হোটেলের। এই রুমে ভি আই পি গেস্ট দের প্রাইভেসি দেওয়া হয় অনেক খাওয়ার সময় তাই খরচও বেশি। খাবার এলে ফারিয়া হাত ধুতে গেলো। নিয়ন ও হাত ধুলো, তার পরে ফারিয়াকে বললো তুমি খাবারে হাত দেবেনা। ফারিয়া জিজ্ঞাসুনেত্রে চাইলো নিয়নের দিকে, নিয়ন ভাত মেখে, সুন্দর করে ফারিয়াকে বললো হা করো তো, ফারিয়ার চোখে আবারো নামলো অশ্রু জল। আসলে এত দিনের অভুক্ত সে খাবারের জন্য নয় অবহেলায় থেকে থেকে ভালোবাসাহীন জীবনে সে এত ভালোবাসা পাবে ভাবেইনি কখনো। তাই অল্পতেই এত তুষ্টি। নিয়ন নিজ হাতে ফারিয়ার চোখের জল মুছে দিলো। বেবিটা চুকচুক করে দুধ খাচ্ছে চোখ বুজে যেনো কত নির্ভয় সে ফারিয়ার বুকে। আর ফারিয়াও নিয়নের তুলে দেওয়া ভাত হা করে নিচ্ছে আর তার চোখের ভাষায় এটাও ফুটে উঠছে যে নিয়নের কাছে সে কত নির্ভরশীলতার সাথে নিজেকে অর্পন করেছে।
নিয়নের মনে আজ আর কোনো অতৃপ্তি নেই। সে আজ পরিপূর্ণ খাওয়ানো শেষ করে ফারিয়াকে নিয়ে এসে আবার গাড়িতে বসে, গাড়ি ছুটে চলে কক্সবাজারের দিকে।। এখন ফারিয়ার মনেও ঝড় নেই, সে ভালোবাসার নির্ভরতা খুঁজে পেয়েছে। বেবিটাও আর ঘুমায় নাই, ফারিয়ার চুল নিয়ে খেলছে আপনমনে। নিয়ন বাম হাত দিয়ে বাচ্চাটার মাথার ছোট্ট পাতলা পাটের আশের মতো বাচ্চা চুল টেনে দেয়, বাচ্চাটা হেসে উঠে শব্দ করে। ফারিয়া বেবির হা করে থাকা গালে নিজের নাক মিশিয়ে দিয়ে নিয়নের হাত সরিয়ে দেয় হাত দিয়ে বলে সামনে দেখো গাড়ি চালাও। নিয়ন হেসে হাত সরিয়ে নিয়ে রাস্তায় মনোযোগ দেয়। আজ আর তার মনে কোনো অশান্তি নেই, শুধুই প্রশান্তি, এ যে মহান আল্লাহরই মহিমা, তারই দান ভালোবাসা আর সন্তান দুটাই পেয়ে খুশি দুটি মানব মানবীর মন।
লেখক দোয়া করেন সকল মানব মানবীর মন অশান্ত মহান রব্ব যেনো তাদের অন্তরকে এভাবেই শান্ত করে দেন। Read More
Writter: Md. Abidur Rahman, MBA, from IBA-DU.
check my facebook business page: https://zee.gl/tjxTARWv