Wednesday, April 22, 2020

ভালোবাসার ডাকপিয়ন আর নীল শাড়ি পরা পরি

সেই দিন গুলোর মধ্যে একটি যেদিন BRTC দোতলা বাসে উঠে পছন্দসই জানালার পাশে বসার পরে নামে ঝুম বৃষ্টি। জানালার কাচ ইঞ্চি খানেক ফাকা করে ওখানে মাথা বাধিয়ে বৃষ্টির ছাট লাগাতে লাগাতে ভার্সিটির দিকে যাওয়া। সেদিন মনেই হয় যে যদি শহরটা জ্যাম বেধে স্তদ্ধ হয়ে যেতো অথবা সারাদিন বাস চলতে থাকতো। আর তার সাথে চলতো বৃষ্টি অঝোর ধারায়। 
যাই হোক এমন রোমান্টিক আবহাওয়ার মাঝেই, বেরসিক ভাবে বেজে উঠলো ফোনের ভাইব্রেটর। ফোন তুলেই দেখি আমার কাজিন নীলিমা। ও চাকরি করে হোটেল রাজমনি ঈসা খাঁ'এ রিসিপশনিষ্ট হিসেবে। আমি ওকে খুব পছন্দ ও করি, আমার থেকে বয়সে ১ বছরের বড় তার পরেও সম্পর্ক বন্ধুর মতো। 
যাই হোক ফোন ধরেই বললাম আপু তুমি, কি মনে করে ফোন দিলা, কেমন আছো। ও খুব উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো শিমু জানিস আমি একটা ছেলেকে বিয়ে করতে যাচ্ছি তুই আসতে পারবি বিকালে। আমার পুরো নাম শিমুল, আপু আমাকে আদর করে শিমু বলে। আমি কখনোই এত উচ্ছাস ওর কন্ঠে শুনিনি আগে। আমি, বললাম তুমি বলেছো যখন নিশ্চই আসবো। ও বললো আচ্ছা তুই বিকালে পেট্রোবাংলা অফিসের সামনে চলে আসিস। আমি ওখানেই থাকবো। আমি বুঝলাম যে নিশ্চই সাক্ষী দিতে হবে।
ফোন রেখে দিতেই,, আবার কল এলো। দেখি খালা ফোন দিয়েছেন, উনি হলেন নীলিমার মা। 
ফোন রিসিভ করে বললাম আন্টি আসসালামু আলাইকুম। উনি উত্তর দিয়েই বললেন, "খবর শুনেছিস, নীলিমা বিয়ে করতে যাচ্ছে একটা গাধাকে। গাধাটার নাকি যমুনা ফিউচার পার্কে একটা শো রুম আছে। জামা কাপড়ের। আর কোনো কিছুই নেই। চাকরি বাকরি করেনা, ওগুলোর ইচ্ছাও নেই, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি থেকে রসায়নে মাস্টার্স কমপ্লিট, অথচ কিছুই করেনা, এই লিখাপড়া দিয়ে কি হবে যদি চাকরিই না করে। আর ওর বাবাটাও একটা ভবঘুরে। তুই ই বল এমন ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দেয়া যায়, বেকার চালচুল নেই৷ অকম্মার ঢেকি"
আমি বললাম "জি খালা, আমি তো শুনেছি, আমার এতে কিছুই করার নেই।"
উনি বললেন, "তোকে কিছু করতেই হবে, ওই অকম্মা ছেলেটাকে একটা উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে, ওর ঠিকানা বের কর, আর আমার মেয়েটার সামনে তো কিছুই করা যাবেনা, আক্কাসকে নিয়ে যা, আর নীলিমার সাথে কথা বল, ছেলেটার ঠিকানা নীলিমার কাছ থেকে তুই ভুল ভাল বলে বের করবি, আক্কাসকে দিয়ে ওকে কি ভাবে ধরে জেলের ভাত খাওয়াতে হয় আমি জানি।"
আমি বুঝলাম যে আজ আর ভার্সিটি যাওয়া হবেনা। বাস কেবল নদ্দা থেকে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত গিয়েছিলো। ওখানেই নেমে গেলাম। নেমে খালার বাসা মগবাজারে যেয়ে আক্কাসকে সাথে নিলাম। আমার খালু বেচে নেই। খালু ইমতিয়াজ উদ্দিন সাহেব ছিলেন বড় ব্যাবসায়ী, ঢাকার সবাই তাকে প্রায় চিনে। খালার বাসার সব কাজ কর্ম আর খালার সাথে খালুর সেই সব ব্যাবসা এই আক্কাস দেখাশোনা করে। তবে আক্কাসকে শুধুমাত্র কাজের লোক বলা ভুল। ওর বেতন ১০ হাজার টাকা। ও মূলত সকল কাজের কাজী, বন্দুক, গাড়ি সব চালাতে পারে। ঢাকা শহরে সকল যায়গায় ওর হাত আছে। খালাকে ও বড় বোন বলে মেনে নিয়েছে।
যাই হোক আমি আক্কাসকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। নীলিমাকে ফোন দিয়ে বললাম আপু তুই তো আমাকে বিশ্বাস করিস তাইনা। 
ও বললো, "পাগল নাকি তুই, নিশ্চই কাকে বিয়ে করবো ওকে দেখার জন্য আমার আম্মু তোকে নিয়োগ করেছে?"
আমি বললাম, "হ্যা, তাই, এখন বল আমি আগে থেকেই ব্যবস্থা করি"
নীলিমা ঠিকানা বললো আমাকে। আমি টুকে নিলাম মোবাইল নোটে।
আক্কাস বললো "মামা চলেন যাই। কোথায় আছে হতচ্ছাড়া টা। এই দেখেন পকেটে কি নিয়ে আসছি, এটা ওর পকেটে সিস্টেম করে ঢুকিয়ে দিবো। দিয়ে থানায় কল দিয়ে পুলিশে দিবো।"
আমি জিনিসটা দেখে ওকে ফেরত দিলাম, বললাম এটা কি, ও বললো, আরে মামা এখনো চিনেন না, এ হলো ইয়াবা।
আমি বললাম আচ্ছা শোনো, তুমি মাঝে মাঝে রুপনগরে যাও, কেনো। 
ও একটু হতভম্ব হয়ে বললো, "আপনি কেমনে যানেন। মামা আপাকে বলিয়েন না, উনি রাগ করবেন, প্লিজ।" একেবারে অনুনয়ে গলে পড়লো।
আমি সবজান্তার হাসি হাসলাম। আমি মুলতঃ তিন্নি নামক একটা মেয়েকে পড়াতে যাই, রুপনগর বাজারের পাশে। তিন্নির বাবা এই এলাকার এক নম্বর মস্তান, যত প্রকার চাদাবাজি হোক সবই তিনি করেন। তবে আমার এখানে প্রচুর সম্মান, উনি তার মেয়ের টিচার হিসেবে আমাকে দেখলে যেখানেই হোক না কেনো উঠে দাড়িয়ে সালাম দেন। একদিন তিন্নি আমাকে বললো, "ভাইয়া দেখেন, ঐ লোকটি আমার বড় আপু তানিশার সাথে প্রায়দিন গল্প করে, আব্বুকে বলেছি, আব্বু ঐ লোকটাকে এমন শিক্ষা দেবে যে কয়েক জনম মনে থাকবে।"
আমি দেখি সেই লোকটি আক্কাস। 
আমি আক্কাসকে বললাম, ওর নাম তো তানিশা তাইনা, আক্কাস আমার হাত ধরে বললো মামা, প্লিজ পায়ে পড়ি, এ কথা আপনার খালা যেনো না জানে। 
আমি বললাম, ঐ মেয়েকি তোমাকে পছন্দ করে, তোমাদের সমস্যা কোথায়?"
আক্কাস বললো ওর বাবাই তো সমস্যা, উনি আমাকে দেখতেই পারেন না। অনেক বার ভেবেছি তোমার খালা তো আমার বড় বোনই হয় সম্পর্কে, উনার অনেক নাম ডাক আছে, আপার ছোট ভাই এ কথা বললে হয়তো রাজি হবে তানিশার বাবা। আমি আগের সব রংবাজি ছেড়ে দিয়েছি, আজকেই আপনার সাথে বের হলাম আপার কথায়। 

আমি বললাম, আচ্ছা চলো তাইলে একটা মিশনে যাই। খালার কাছে ফোন দিয়ে বললাম খালা কাজের জন্য ৫০ হাজার টাকা লাগবে লোক ম্যানেজ করতে। 
খালা বললো আচ্ছা, আক্কাসকে তুলে নিতে বল কার্ড দিয়ে, ওর কাছে কার্ড রাখা আছে আমার।
আমি আক্কাসকে বললাম আক্কাস মামা, ৬০০০০ টাকা তুলে নাও তো দেখি। 
আক্কাস আর কিছুই বলছেনা, তুলে নিয়ে আমার হাতে টাকা টা দিলো। আমি একটা উবার ভাড়া করে যমুনা ফিউচার পার্কে এলাম, নীলিমার বয়ফ্রেন্ড এর শো-রুমে, ওকে পরিচয় দিলাম এভাবে যে আমরা ওকে দেখতে আসছি, আমি নীলিমার সবচেয়ে কাছের ছোটো ভাই। 
দেখলাম একটা নিখাদ ভদ্র ছেলে। নাম সাজিদ, ওর বাবা মি. আশফাক আমিন, তিনি কোনো কাজ করেন না, শুধুমাত্র দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ান, ভদ্রলোকের প্রচুর টাকা। আমি আগেই জানতাম  সাজিদও শিক্ষিত, কিন্তু ব্যাবসা করছে কেনো জিজ্ঞাসা করতেই বললো, ভাইয়া টাকার তো সমস্যা নেই।৷ আমার ব্যবসা ভালো লাগে কেনো চাকরি করবো। আমি দেখলাম আসলেই অনেক বড় শো-রুম অন্তত কয়েক কোটি টাকার মালামাল, কর্মচারী ২০/২২ জন। আক্কাস শুধু খুতখুত করছে, কখন কাজ শেষ করবে, আমি ওকে ইশারায় মানা করলাম।
আমি বিভিন্ন ভাবে কথা বলে এটা শিউর হলাম যে সে নীলিমাকে আসলেই অনেক পছন্দ করে।
 তার পর আমি খুব দামী একটা শাড়ি নিলাম ১৭ হাজার টাকা দিয়ে, আক্কাসের জন্য এক টা দামি প্যান্ট আর শার্ট কিনলাম৷ তার পরে বেরিয়ে এলাম।
আক্কাস বললো মামা কাজ তো হলোনা।
আমি বললাম দেখো কি হয়, বলে বেরিয়ে এসে, একটা উবার নিয়ে রুপনগরে এলাম তিন্নি দের বাড়ি। আক্কাসের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে, তানিশা আমাদের দেখে আর সামনে আসছেনা। আমি তিন্নিকে বললাম তোমার বাবাকে ফোন দাও। 
ওর বাবা আসলো উনি এসে মাথা নিচু করে বসে থাকা আক্কাসকে দেখে রেগে গেলেন, বললেন এ এখানে কেনো। 
আমি বললাম, আংকেল ওর কথা বাদ দিন, পরে বলছি। আগে আপনি বলেন, ইমতিয়াজ সাহেব কে চিনতেন, রেবা গ্রুপের মালিক। 
তানিশার বাবা বললো, জি স্যার, উনাকে কে না চিনে। এতো বড় বিখ্যাত একটা মানুষ,  আহা হঠাৎ করেই মারা গিয়েছিলেন।
আমি বললাম, উনার এক মাত্র শ্যালক এর সাথে আপনার মেয়ে তানিশার বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছি। 
উনি বললেন সে তো খুব খুশির খবর, তা পাত্রের ছবি দেখান।
আমি বললাম,, এই হলো আমাদের পাত্র, আক্কাসকে দেখিয়ে বললাম। 
উনি চুপ চাপ কিছু বললেন না, তার পর উঠে দাড়ালেন, দেখি আক্কাস একদম ঘেমে লাল হয়ে গেছে। উনি উঠে দাড়িয়ে বললেন তানিশা এদিকে আয়তো।
তানিশা কাপতে কাপতে এসে বললো, বাবা বলো। ওর মাও এসে দাড়ালো পাশে।
আক্কাস কে দেখিয়ে বললেন, একে পছন্দ হয় তোর। 
তানিশা কিছু না বলে ওর মাকে জড়িয়ে ধরলো। 
আংকেল বললেন, মা, তানিশা তুই আমাকে কিছু না বলে লুকিয়ে ওর সাথে দেখা করিস, আমি এতে খুব কষ্ট পেয়েছি৷ তবে তোর স্যার প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন আমি সানন্দে গ্রহণ করলাম। 
আক্কাস কে বললাম, মামা তোমার কোনো আপত্তি আছে। 
আক্কাস কিছুই বলছেনা, ও হতভম্ব হয়ে গেছে।
আমি তানিশার জন্য আনা শাড়িটা তানিশার হাতে দিলাম দিয়ে বললাম এটা তোমার জন্য বিয়ের আগেই আমার পক্ষ থেকে উপহার। ওর চোখ দিয়েও পানি ঝরছে। আমি ওকে বললাম, আমাদের সাথে একটু যেতে পারবা। ও বললো হ্যা পারবো। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখি তানিশার পাশা পাশি তিন্নিও রেডি হয়ে এসে আমার হাত ধরে বললো ভাইয়া আমাকেও নিয়ে চলেন না সাথে। আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম আচ্ছা চলো।

আমি আর সময় নিলাম না। বেরিয়ে এলাম, আংকেল বললো, স্যার যান। কালকেই আমরা যাবো আপনার খালার সাথে দেখা করতে।
আমি বাইরে এসে, তিনজনকে নিয়ে একটা উবারে উঠে কাওরান বাজার চলে এলাম, আসতে আসতে ৩ টা বেজে গেলো। ইতিমধ্যে নীলিমা একবার ফোন দিয়েছিলো আমার কাছে, আমি বললাম সব ঠিক আছে আসো৷ 
ওরা ৪ টার দিকে পেট্রোবাংলা অফিসের সামনে এলো। আমি, আক্কাস আর তানিশা ইতিমধ্যে চা নাস্তা করেছি। আক্কাস আমার হাত ধরে বলেছিলো মামা আপনি আমাদের জন্য যা করলেন, আসেন আমরা অন্তত খাওয়া দাওয়া করি।
আমি বললাম না, খাওয়া দাওয়া করবোনা এখন একবারে বিকালে করবো, একটা অনুষ্ঠান আছে তার পরে। আর তোমার জন্য যা করলাম তা এমনি এমনি করিনি। দেখি তুমি এর জন্য আমাকে কি দিতে পারো। 
নীলিমা আর সাজিদ আমাদের কে নিয়ে কাছাকাছি এক কাজি অফিসে নিয়ে গেলো। সাজিদ বললো ওর কিছু বন্ধু আছে যারা সাক্ষী দিবে, আর নীলিমা বললো শিমু তুই সাক্ষী দিবিনা, আমি বললাম নিশ্চই দিবো। তানিশা বললো ভাইয়া, আমি আর তিন্নি ও সাক্ষী হবো। তবে আমি একা একজন ছেলে, তানিশা আর তিন্নি দুজন যেহেতু মেয়ে তাই আরো একজন ছেলে লাগবে। আমি বললাম তাহলে সাজিদ ভাইয়ের বন্ধুরা আসুক। দেরি হয় হোক।
পাশের থেকে আক্কাস আমার হাত ধরে বললো, মামা আমি সাক্ষী দিবো৷ 
আমি বললাম সেকি আক্কাস তোমার না অন্য কাজ ছিলো। আক্কাস বললো,, থাক সে কাজ, আমি ওটা ফেলে দেবো বাইরে। 
বিয়ে হয়ে গেলো নীলিমা আর সাজিদের, সন্ধা হয়ে গেলো, সাজিদ আর নীলিমা প্রচুর টাকা নিয়ে এসেছিলো খরচ বাবদ। দেনমোহর ধরা হয়েছিলো মাত্র ২ লাখ টাকা। সাজিদ ১লাখ ৫০ হাজার টাকা দিলো নগদ, আমি নীলিমাকে বললাম আপু তুই কত এনেছিস বিয়ের খরচ বাবদ ও বললো ৬০ হাজার। 
আমি বললাম দাও আমাকে। 
ও কোনো কথা না বলে দিয়ে দিলো। আমি সাজিদের টাকার সাথে এই টাকার ৫০ হাজার যোগ করে ২ লাখ বানিয়ে নীলিমাকে দিয়ে বললাম এটা তোমার দেনমোহর পরিশোধ। 
আর বাকি টাকা আর সকালে তুলা খালার টাকা থেকে বিয়ের খরচ মিটিয়ে বাইরে বেরিয়ে সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করে নিলাম। আমি সাজিদকে বললাম, ভাইয়া তোমার বাবা কোথায়, তিনি কি রাজি হতেন না?
সাজিদ বললো উনি রাজি, এইযে উনি অলরেডি দুটা ভিসা পাঠিয়ে দিয়েছেন আমেরিকা যাওয়ার জন্য। নীলিমাকে নিয়ে। ওখানেই যাবো প্রথম হানিমুনে। 
আমি বললাম তাহলে, আজ তোমরা যার যার বাসায় যাও, নীলিমা আপু তোমার তো আজকে সাজিদ ভাইয়ের বাসা, হাসতে হাসতে বললাম। আর আক্কাস মামা তুমি তানিশা আর তিন্নিকে পৌছে দিয়ে আসো। আমি খালার সাথে দেখা করে আসি। কিছু তো বুঝাতে হবে। তিন্নি যাওয়ার সময় আবার আমার পাশে এসে আমার হাত ধরে বললো ভাইয়া, সাবধানে থাকবেন। আমি হাত ছাড়িয়ে বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি খালার বাসায় আসলেই খালা বললো আক্কাস কই, ওকে থানায় ভরা হয়েছে তো। 
আমি হতাশ সুরে বললাম, জি খালা কাজ তো হয়ে গেছে কিন্তু ওরা তো আরো ১ সপ্তাহ আগেই বিয়ে করেছে। তুমি ভুল ইনফরমেশন দিয়েছো।
আমার কথা শুনেই খালা হাত পা ছড়িয়ে কান্না শুরু করলেন, "এই জন্যই মেয়েটা আমার পাল্টে গেছে, আমার কি হবে, শেষ পর্যন্ত ঐ হতচ্ছাড়াটা আমার জামাই। আমি কখনোই মেনে নিবো না। "
হাফ ঘন্টা পরে আমি চলে যাচ্ছিলাম, খালা বললেন শিমুল, এক কাজ কর, আমি ওকে মেনে তো নিবোনা, কিন্তু বিয়ে যখন হয়ে গেছে, ওই ছেলেটাকে থানা থেকে বের করে আন, আমার মেয়েটা একা একা রয়েছে। আর হ্যা একটা কথা,  আমার বাড়ি, নীলিমা আর ওই বদমাশটার জন্য অফ এটাও বলে দিস। ছাড়ানোর জন্য যা লাগে আক্কাসকে তুলে নিতে বলিস।

আমি বললাম খালা, এই মেয়েটি কেমন লাগে তোমার কাছে (তানিশার ছবি দেখিয়ে বললাম), খালা বললেন তোর জন্য। আমি বললাম না খালা আক্কাস মামুর জন্য৷ বেচারি তো তোমার সেবাই করে সারাদিন। খালা ভালো করে দেখে বললেন এমন সুন্দর একটা মেয়ে আক্কাসকে বিয়ে করবে, ও তো হিসেবে আমাদের কাজ কর্ম দেখা শোনা করে।
আমি বললাম তুমি আক্কাসকে যে ভাই বলো, এটা হলেই তো হয়ে যায়৷ তোমার কথায় রাজি সবাই হবে। খালুর নাম ডাক অনেক ছিলো, তোমারও কম নয়। খালা বললেন এমন সুন্দর মেয়েটা আসতে চাইলে, আক্কাসকে আমি আমার কাজিন হিসেবেই ভাই বানিয়ে দিবো, আর আমি সত্যিই তো আক্কাসকে আমার ভাইয়ের মতোই জানি। আমার মেয়ে তো চলেই গেলো, এই মেয়েটাকে বাড়ি রাখবো। 
আমি খালাকে বললাম, ঠিক আছে, খালা তাহলে কালকে ওদের আসার ব্যবস্থা করতেছি। 
আমি আক্কাস, আর তানিশাকে ফোন দিলাম। ওদেরকে বুঝায়ে বললাম যে কাল তোমরা এসে যেনো নীলিমার বিয়ের খবর কাউকে দিয়োনা, তাইলে খালা খুব রাগ করবে, আর ষড়যন্ত্রকারী ভাবতেও পারে রাগের বশত। ওরা বললো শুধু আমরাই জানি। তানিশা বললো তিন্নিকেও নিষেধ করে দিচ্ছি।
পরদিন তানিশারাও এলো, সাথে ওর বাবা, মা, তিন্নি। খালা একদম বড় বোনের মতো আক্কাসের ব্যাপারে দায়িত্ব নিয়ে কথা পাকাপাকি করতে লাগলেন।
আমার কিছু ভালো লাগছিলো না। আমি, একটা রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পরে দেখি তিন্নি আমার রুমের দরজায় এসে বলছে ভাইয়া আসবো। 
হ্যা আসো৷ দেখলাম নীল শাড়ি পরে আসায় ওকে খুব সুন্দর লাগছে। এসে বললো, ভাইয়া কেমন লাগছে আমাকে?'
আমি বললাম বিউটিফুল মেয়ে। 
ও বললো, আপনি একবার বলেছিলেন শাড়ি পরা মেয়ে আমার ভালো লাগে।
আমি বললাম, ও আচ্ছা তাই বুঝি৷ তুমি কি কিছু বলবা এখন?
তিন্নি বললো না ভাইয়া, এমনিতেই এলাম।
আমি বললাম এক কাজ করো খুব ঘুম আসছে আমার, পরে কথা বলবো। 
বলে পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষণের মাঝে ঘুমিয়েও পড়লাম, কিন্তু যতক্ষণ জেগে ছিলাম, ওর যাওয়ার আভাস আমি পাইনি।
কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম বুঝিনি, তবে ঘুম ভাংলো তিন্নির ডাকে, ও আমার হাতে ধাক্কা দিচ্ছিলো আর বলছিলো, ভাইয়া ওঠেন, আপনার খালা ডাকছে নিচে। 
আমি উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে নিচে এসে দাড়ালাম, তিন্নি আমার পেছন পেছন এসে পাশে দাড়ালো, আমি এগিয়ে যেয়ে খালার পাশের একমাত্র ফাকা যায়গাটায় বসে পড়লাম। ওদের বিয়ের ডেট ঠিক হয়ে গেলো।

এক সপ্তাহ পরে আক্কাসের বৌ হিসেবে তানিশা এই বাড়ি চলে এলো।
খালা তাকে বরণ করে নিলেন, আজ খুব কান্না করছেন খালা। তানিশা জিজ্ঞাসা করলো আমি আপনার ভাই বৌ, আপনার ছোট। আপনার কাছ থেকে ভালোবাসা চাই, কোনো অধিকার চাইনা। 
খালা বললেন, এমন বলোনা, আমার মেয়েটার কথা খুব মনে পড়ছে। 
তানিশা বললো, শিমুলকে বলেন ও কিছু করতে পারবে।
খালা বললেন কিভাবে বলি ওকে, আমি সাজিদকে জেলে পর্যন্ত পাঠিয়েছি। দেখি তাও শিমুলকে বলি।

খালা আমাকে ডেকে ১০০০০ টাকা হাতে দিয়ে বললেন, শিমুল নীলিমাকে খুব মনে পড়ছে। একটু ব্যাবস্থা কর। যাওয়ার সময় ওদের জন্য মিষ্টি নিয়ে যাস।
আমি আর কি করবো, নীলিমাকে নিয়ে আসলাম, সাজিদও এলো। ওরা এসেই খালাকে কদমবুসি করলো। খালা বললেন, "কি করে তোদেরকে ছেড়ে আমি থাকবো।" আক্কাস আর তানিশাও পাশে দাড়িয়ে আছে, ওদের চোখে ও পানি।
আমি বললাম, খালা আমরা স্যরি। খালা বললেন, কিসের জন্য।
আমি সব খুলে বললাম। খালা আমাকে বললেন থাক আর বলতে হবেনা, তুমি অনেক পেকে গেছো। তোমার ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
আমি বললাম, এখন সব দোষই তো আমার, ওকে ঠিক আছে। 
নীলিমা আপু, আমাকে বললেন, শিমু তুই কাল তোর দুলাভাইয়ের দোকানে আসিস কালকে। তোকে এক সেট জামা কাপড় দিবো।
আমি বললাম, না তোমাদের জামা কাপড় নিয়ে আমি কি করবো। আমার আছে। 
আপু বললো, তুই না আসলে আর কখনোই আমাকে আপু বলে ডাকবিনা। 
আমি বললাম, "জো হুকুম মহারানী" বলে হেসে বেরিয়ে এলাম।

পরিশিষ্টঃ
আমার, বাসায় এসে ঢুকতে ঢুকতে ১১ টা বেজে গেলো। খালা অবশ্য থেকে আসতে বলেছিলো কিন্তু আমার নিজের বিছানা ছাড়া ভালো ঘুম হয়না। ১১ টা ৩০ এর দিকে আবার কল বেজে উঠলো, একটা অচেনা নাম্বার, রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশের কন্ঠস্বরটি বললো, শিমুল তুমি কি আমাকে তোমার হাত দিয়ে ধরবে। আমি তোমার মুঠোর মধ্যে নিজের হাত দিতে চাই। তোমার বুকে মাথা রেখে তোমার মুখের উপর চুল গুলি ছড়িয়ে দিতে চাই। তোমার কোলে বসে তোমার বুকের ভেতরে ঢুকে যেতে চাই। আমাকে জড়িয়ে ধরে রাতের বেলা ঘুম পাড়িয়ে দেবে তুমি। অভিমান করবো তুমি আমার গাল টিপে দেবে। আমি মুখ ঘুরিয়ে নিবো, তুমি আমাকেই ঘুরিয়ে কোলে টেনে নেবে। আমার তপ্ত ঠোটে তুমি ঠোট রাখবে। আমি হারিয়ে যেতে চাই তোমার ভেতরে। কম্পমান আমার এই দেহটাকে তুমি শরীর দিয়ে আকড়ে ধরে রাখবে আর মন বেধে রেখো মনে। 

আমি বললাম, তুমি সত্যিই থাকবে তো।
ওপাশ থেকে বললো, "তুমি আমার চোখে তাকিয়ে দেখো এসে"
আমি বললাম, "আসবো দেখতে তোমার চোখ, তোমাকে আমি এখন থেকেই আমার মন পরি বানিয়ে নিলাম"
ও বললো কাল এসোনা বোটানিক্যাল গার্ডেনে, ন্যাশনাল জু এর পাশে। আমি থাকবো অপেক্ষায় তোমার। বলো কোন রং এর শাড়ি পরে আসবো।
আমি বললাম, নীল শাড়ি।
পরের দিন, হালকা আকাশী রং এর শার্ট আর জিনসের একটা প্যান্ট গায়ে চাপিয়ে, একটা পাঠাও বাইক নিয়ে চলে গেলাম বোটানিকাল গার্ডেনে। গেটের মুখ থেকে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ কিনে নিলাম। ভেতরে ঢুকেই দেখি, আমার নিশী রাতের পরিটি বসে আছে একা এদিকেই চেয়ে। আমি কাছে যেতেই বললো কেমন আছেন আপনি। 
আমি বললাম, এখন আবার আপনি হলাম ক্যামনে। ওর হাতটি ধরে মুঠোর মাঝে নিলাম, ও উঠে দাড়ালো। আমরা হাটা শুরু করলাম।
ও বললো, ফুল গুলি কাকে দিবে তুমি।
আমি বললাম ফুল তো আমি হাতে নিয়েই ঘুরি, বলে ওর পেছনে গিয়ে গুচ্ছটা খুলে, চুলের খোপায় গুজে দিলাম একটা গোলাপ, ও আমাকে হ্যাচকা টান দিয়ে সামনে এনে ঠোটে একটা চুমু দিয়ে অস্ফুটে বললো, ভালোবাসি তোমাকে। 

[পাঠক পাঠিকারা নিশ্চই বুঝে গেছেন, শিমুলের নিশী রাতের পরিটি কে। লেখক তাদের জন্য শুভ কামনা করছেন, ভালো থাকুক তারা]

Writer: Md. Abidur Rahman, MBA form Institute of Business Administration (IBA), Dhaka University.   

Tuesday, April 14, 2020

ধূমকেতু একটি মহাজাগতিক বিস্ময়

ধূমকেতু- Comet
ধুমকেতু (ইংরেজি: Comet) যা ধুলো, বরফ ও গ্যাসের তৈরি এক ধরনের মহাজাগতিক বস্তু। ধূমকেতু একটি ক্ষুদ্র বরফাবৃত সৌরজাগতিক বস্তু যা সূর্যের খুব নিকট দিয়ে পরিভ্রমণ করে।

একটি ধূমকেতুর পর্যায়কাল কয়েক বছর থেকে শুরু করে কয়েকশ’ হাজার বছর পর্যন্ত হতে পারে। ধারণা করা হয় স্বল্পকালীন ধূমকেতুর উৎপত্তি কুইপার বেল্টথেকে যার অবস্থান নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে এবং দীর্ঘকালীন ধূমকেতুর উৎপত্তি ওরট মেঘ থেকে, যা সৌরজগতের বাইরে একটি বরফময় বস্তুর গোলাকার মেঘ। আমাদের সৌরজগতের বড় গ্রহগুলোর ( বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন) অথবা সৌরজগতের খুব কাছ দিয়ে পরিক্রমণকারী নক্ষত্রেরকারণে ওরট মেঘে যে মাধ্যাকর্ষণ বল ক্রিয়া করে তাতে বস্তুগুলো সূর্যের দিকে ছুটে আসে এবং তখনি কমার উৎপত্তি হলে আমরা ধূমকেতু দেখি।

পর্যায়কাল অনুসারে ধুমকেতুকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা স্বল্পকালীন ধুমকেতু এবং দীর্ঘকালীন ধুমকেতু। 
স্বল্পকালীন ধূমকেতু হল যাদের পর্যায়কাল ২০০ বছরের কম। সাধারণত এগুলো গ্রহগুলোর মত একটি উপবৃত্তাকার তলে ঘোরে। এসব ধূমকেতুর অপসূর দূরত্ব হয় বৃহস্পতির কক্ষপথের বাইরে। যেমন হ্যালীর পর্যায়কাল ৭৬ বছর এবং এর অপসূর নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে।
দীর্ঘকালীন ধূমকেতুর পর্যায়কাল ২০০ বছর থেকে কয়েক লক্ষ বছর হতে পারে এবং এদের কক্ষপথের উৎকেন্দ্রিকতা অনেক বেশি। এসব ধূমকেতু কোনও বড় গ্রহের কাছাকাছি এলে সৌরজগত থেকে বিক্ষিপ্ত হতে পারে এবং তখন এদের পর্যায়কাল থাকে না ।

হ্যালির ধুমকেতু- Hally's Comet 
ধারণা করা হয় স্বল্পকালীন ধূমকেতুর জন্ম বামন গ্রহগুলো বা সেন্টর থেকে এবং কুইপার বেল্ট ও নেপচুনের কক্ষপথের বাইরের এলাকায় যে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বস্তুর চাকতির মত এলাকা আছে সেখান থেকে, প্রায় ৩০ থেকে ৫০ জ্যোতির্বিদ্যার একক দূরত্বে; দীর্ঘকালীন ধূমকেতুর জন্ম ওরট মেঘ থেকে যা সৌরজগতের সবচে দূরের এলাকা এবং এখানে বরফপিণ্ডের মত অনেক বস্তু গোলাকার কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান বলে মনে করা হয়।

সুর্যের কাছে চলে গেলে কোনো ধুমকেতু ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে যায়। সাধারণত, ধুমকেতুর অস্তিত্ব এবং আচরণ সব কিছুই বিস্ময়কর। প্রাচীন ইতিহাসবিদ ইফোরাস প্রথম খ্রি. পূর্ব ৪র্থ শতকে বলেন একটি ধূমকেতু দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছিল। সেপ্টেম্বর (1882 II) ধূমকেতুর নিউক্লিয়াস সূর্যের খুব কাছে গিয়ে চারটি স্বতন্ত্র নিউক্লিয়াসে ভাগ হয় যা ২৫০০ থেকে ২৯০০ সালের মধ্যে আবার ফিরে আসবে। এছাড়া ১৯৯৫ সালে Comet 73P/Schwassmann-Wachmann 3 ধূমকেতু ভেঙ্গে যেতে শুরু করে। এগুলোকে ক্রেজ সানগ্রেজার পরিবারের ধূমকেতু বলা হয়।

তাছাড়া বিস্ময়কর প্রাণী ডাইনোসোর বিলুপ্তির সাথেও এই ধুমকেতুর যোগসাযোগ আছে।  লুইস ও ওয়াল্টার আলভারেজের মতে ৬.৫ কোটি বছর আগে কোনও ধূমকেতু বা বৃহৎ কোন উল্কাপাতের ফলে ডাইনোসরসহ অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। অনেকের ধারণা পৃথিবীর জন্মের পর যথেষ্ট পরিমাণ পানি ধূমকেতু থেকে এসেছিল। সম্প্রতি ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর ধূমকেতু ISON অনুসূর দূরত্বে এসে হারিয়ে যায়। ধারণা করে হচ্ছে এটি সূর্যের সম্মুখে এসে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।
Deep Impact মহাকাশযান থেকে তোলা 
Tempel 1 ধূমকেতুর নিউক্লিয়াসের ছবি। 
যেটির নিউক্লিয়াসটি চওড়ায় ৬ কিমি
হ্যালির ধূমকেতু কাইপার বেল্ট থেকে আসলেও বেশীর ভাগ ধূমকেতুর উৎস হচ্ছে ওর্ট মেঘ। অনুমান করা হয় মূল সৌর জগতের বাইরে, প্রায় ৫০,০০০ জ্যোতির্বিদ্যার একক দূরত্বে অবস্থিত, এই অঞ্চলে হচ্ছে প্রায় এক ট্রিলিয়ন বা দশ লক্ষ কোটি ধূমকেতুর বসবাস। কোন কোন সময়ে সৌর জগতের কাছাকাছি কোন নক্ষত্র আসলে সেটার মাধ্যাকর্ষণজনিত অভিঘাতে এই ধূমকেতুগুলি সূর্যের দিকে রওনা হয়। সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছাতে সেগুলির কয়েক মিলিয়ন বা কয়েক দশক লক্ষ বছর লেগে যায়। এই ধূমকেতুগুলির কক্ষপথ অধিবৃত্ত (প্যারাবলিক) বা পরাবৃত্ত (হাইপারবলিক) আকারের হয়ে থাকে। ওর্ট মেঘ থেকে আগত বেশীরভাগ ধূমকেতুই পুনরায় ফিরে আসে না।
কিছু ধূমকেতুর পর্যায়কাল বড় গ্রহগুলোর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন 11P/Tempel-Swift-LINEAR ধূমকেতু ১৮৬৯ সালে আবিষ্কৃত হলেও ১৯০৮ সালের পর আর দেখা যায় নি কারণ হল বৃহস্পতি। পরে ২০০১ সালে LINEAR দ্বারা পুনরায় আবিষ্কৃত হয়।
বেশিরভাগ ধুমকেতুর নিউক্লিয়াস (ধুমকেতুর কেন্দ্র) ৬মাইল বা ১০ কি.মি. এর কম হয়ে থাকে। কোনো ধুমকেতুর বিস্তৃতি নির্ভর করে সেটি সূর্য থেকে কত দূরে অবস্থান করছে। যখন কোনো ধুমকেতু সূর্যের কাছাকাছি যায় তখন তার নিউক্লিয়াসে অবস্থিত বরফ বাষ্পীভূত হয়ে শুরু করে। আর নিউক্লিয়াসের বরফ বাষ্পীভূত হওয়ার কারণে Coma’র বিস্তৃতি বেড়ে গিয়ে হয়ে যায় ৫০,০০০ মাইল বা প্রায় ৮০,০০০কি.মি. এর ফলে ধুমকেতুর লেজ গুলোর বিস্তৃতি বেড়ে গিয়ে প্রায় ৬০০,০০০ মাইল বা প্রায় ১মিলিয়ন কি.মি. হয়ে যেতে পারে।
লিখেছেনঃ Md. Abidur Rahman, Institute of Business Administration, Dhaka University.

'মেঘা' একটি কলঙ্কিত নববঁধুর নাম

দিনটা ছিলো ঝড়ের, পাপ গ্রহের পাপ ঘন হয়ে এসেছিলো। তাই পৃথিবী জুড়ে ঘনিয়ে এসেছিলো নিকষ কালো মেঘ। তারই সাথে এসেছিলো দমকা হাওয়া, মুহুর্মুহু গর্জনে চারিদিক প্রকম্পিত হচ্ছিলো। সব যেনো থমকে গিয়েছিলো অজানা আতংকে, বৃক্ষ দেবী অনেক চেষ্টা করেও রুখতে পারছিলোনা বাতাসের তান্ডব। কি শুরু হলো, একি মহাপ্রলয়ের ঘনঘটা?

সমগ্র প্রকৃতি যখন তাল মিলাচ্ছিলো ঝড়ের সাথে, ফুঁসে উঠেছিলো মহাসমুদ্রের নোনা দিগন্ত বিস্তৃত জল। এরি মধ্যে কেপে কেপে উঠছিলো আরো একটি অন্তর৷ সুন্দরবনের পাশ ঘেষে বসবাস করা জেলে পরিবারের নববঁধূ মেঘা। তার মা বাবা ও কেউ নেই।  মা বাবার কথা তার মনে পড়েনা, শুধু মনে পড়ে তার আবছায়া ভাবে সেদিন কোনো এক মানুষ তার মায়ের সাথে কিছুক্ষণ বিছানায় ছিলো পরে তাকে গলায় গামছা দিয়ে ঝুল খাওয়ার জন্য টিনে বেধে দিয়েছিলো। তখন কিছুই বুঝিনি সাড়ে চার বা পাঁচ বছরের মেঘা, তবে খুব কেঁদেছিলো তখন সে। তখন থেকেই গ্রামের যার তার হাতে খেয়ে মানুষ এই মেঘা। গ্রামের সবাই বলে তোর মা বড় অপয়া ছিলোরে মেঘা, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করেছিলো।

পাড়ার বখাটে গুলো খুব জ্বালাতন করা ধরেছে মেঘাকে,  যেদিন থেকে যৌবণের ফুল তার শরীরে ফোটা ধরেছে সেদিন থেকেই। সবচেয়ে বেশি সমস্যা ছিলো গ্রামের মেম্বারের ছেলে মধু। জেলে পরিবার গুলোর দাবী ছিলো এই এলাকার সবাই জেলে, বাইরের ধনী মানুষ আমাদের সমস্যা বুঝবেনা তাই মেম্বার হবে আমাদের থেকে। কে শুনে কার কথা, টাকার দৌলতে আজকে এলাকার মেম্বার প্রভাবশালী এক ব্যাবসায়ী,  তার চাউলের আড়ত আছে সাতক্ষীরা শহরে, ঢাকা সহ অন্যান্য জেলায় যায় তার মাছের ট্রাক। গ্রামের অভাবী জেলেদের অভাব মেটানোর জন্য তিনি মেম্বারের মহান দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এতে অবশ্য কোনো জেলের ভাগ্যের পরিবর্তনই হয়নাই বরং তার ব্যবসায় আগে ভাড়ার ট্রাক ছিলো এখন নিজস্ব ট্রাক ১০ টি।

এখন মেঘার বয়স ১৪ বছর, সেদিন এক চৈত্রের বিকালে নদী থেকে গোসল করে আসার সময় মধুর সাথে দেখা। মধু তাকে বলে মেঘা তুই তো খুব বড় হয়ে উঠেছিস,  তুই আমার বাড়ি আসবি আজকে রাতে। সে খুব ভয় পেয়ে আব্বাসউদ্দীন এর বাড়ি যায়৷ এই আব্বাসউদ্দীন এর বাড়িই মেঘার আবাসস্থল, মা মারা যাওয়ার পর থেকে। কারন তার মায়ের বাড়ির ঝুপড়ি পাকা ইটের করে, মেম্বার দিয়েছেন চাউলের দোকান, এলাকার মানুষের যাতে করে চাউল আনতে আর শহরে যেতে না হয়।

সেদিন ফিরেই, আব্বাসউদ্দীন কে সব খুলে বলে, শুনেই তিনি বলেন মা তুমি আমার মেয়ের মতোই, আমরা জেলে পরিবার কিছুই নেই, আমার বৌ ও নেই। তুমি আমার ছেলে জামালুদ্দিন কে বিয়ে করবা মা।  মেঘা তখন ভেবেছিলো,  ছোটো বেলা থেকেই জামালুদ্দিন তার জন্য পুতির মালা নিয়ে আসতো, ওমন ছোট্ট মন তাতেই খুশি হয়ে যেতো। একবার তার পায়ে বটি লেগে কেটে গেলে সে কি কান্না জামালুদ্দিন  তখন কত ভালোবেসে পট্টি দিয়ে দিয়েছিলো তার পায়, নিজের কোলে মেঘার পা দুটিকে নিয়ে বসে ছিলো, তখন মেঘার বয়স  ১১ পেরিয়ে ১২ ছুঁইছুঁই। মেঘার দুচোখে কান্না এসে গিয়েছিলো।

সে বললো চাচা তুমি আমাকে ছোট বেলা থেকে মানুষ করেছো এখন তুমি যা বলো আমি রাজি আছি। আব্বাসউদ্দীন সেদিনই হুজুর ডেকে বিয়ে দিয়ে দিলেন দুজনকে। ওদিকে মেম্বার খবর পেয়ে পুলিশ নিয়ে হাজির হলেন বিশেষত মধু খুব উত্তেজিত ছিলো কেনো বাল্যবিবাহ দেয়া হলো, সে যাই হোক, শেষমেশ আব্বাসউদ্দীন কে নিয়ে গেলো জেলে। ৬ মাস পরে নাকি ছাড়বে।

দুদিন হয়ে গেছে বিয়ের, জামালুদ্দিন আজকে গেলো নদীতে, পশুর নদী যেমনি উত্তাল তেমনি ভয়াবহ, তার উপরে ঝড় যেভাবে উঠেছে, জেলে পরিবারে বেড়ে উঠা মেয়ে মেঘা ভালোই বুঝে এতে নদীর অবস্থা কি হবে। এদিকে তার চিন্তা অপরদিকে একা বাড়ি টিনের চাল চটার বেড়ার ঘরে বসে ভয়ে কুকড়ে যাচ্ছিলো, হাত দুখানি দেখছিলো মেন্দির লাল রঙ কিছুটা ফিকে হয়ে গেছে। এমন সময় দরজার শিকলে টান, মেঘা আনন্দে উদ্বেল হয়ে ভাবলো মনে হয় তার বর ফিরে এসেছে। কিন্তু দরজা খুলেই সে দেখে মধু দাড়িয়ে আছে। মেঘা ভয় পেয়ে দরজা লাগিয়ে দিতে যায়, কিন্তু ততক্ষণে সে ঢুকে গিয়েছে। শ্লেষ মাখা সুরে মধু বলে কি খবর মেঘা, হাতে মেন্দির লাল রং মাখালেই কি হয়, এতে তোকে মানায়না, তোকে মানাবে গয়না সাজালে৷ তুই আমার বাড়ি আসবি তোকে রাজরানী করে রাখবো। মেঘা বলে লাগবেনা মধু ভাই গয়না, তুমি যাও। মধু বলে আরে বলে কি মেয়ে ঝড়ের রাতে কাউকে বের করে দেয় নাকি। তোর মাও আমাকে বের করে দিতে চেয়েছিলো আজ থেকে ১০ বছর আগে, সে পারেনি আর তুমি কিভাবে পারবে।

সব পরিস্কার হয়ে যায় মেঘার কাছে।  কি করে পারবে সে অমন বড় একটা পুরুষের সাথে আর এসময় তার সাথে আছে খোদ শয়তান। মেঘার ব্লাউজ ছিন্ন হয়ে যায়, শাড়ি লুটিয়ে পড়ে মেঝেতে তার প্রথম দিককার চিৎকার চাপা পড়ে যায় ঝড়ের তান্ডবে। তার ইজ্জৎ আজ লুন্ঠিত হয় মধু নামক এক নরপশুর দ্বারা। রক্তাক্ত হয়ে যায় জামালুদ্দিন দের বিছানার চাদর। মেঘার চিৎকার বন্ধ হয়ে গেছে তার ই ব্লাউজ মুখে ঢুকানোর জন্য। ঘন্টাখানিক একজনের কামপিপাসা মিটাতে যেয়ে মেঘা অজ্ঞান হয়ে যায় যন্ত্রনা, আর মানসিক চাপে। তার পরে সব ঝড় থেমে যায় ঘরের ভেতরের। হাতের মেন্দির লাল রঙ ফিকে হলেও, যেনো নতুন করে দেয়া মেন্দির লালে লাল হয়ে গেছে মেঘার সারা দেহ।

তারপর,  মধু খুটে নেয় মেঘার লুন্ঠিত শাড়ি, প্রায় জ্ঞানহারা মেঘার গলায় ফাঁস লাগিয়ে দেয় মধু, শরিরে তার অসুরের শক্তি। তার উপরে মেঘার সব শুষে নিয়ে মধু এখন প্রকৃত পুরুষ হয়ে গেছে। মেঘার জ্ঞান একটু একটু ফিরে আসে তখন সে নির্মিলিত চোখে দেখতে পায় তার মাকে, যে টিনের সাথে ঝুলে রয়েছে। হাসি ফুটে উঠে মেঘার মুখে। সে শুধু অস্ফুটে বলে আল্লাহ তুমি সব কিছুর সাক্ষী। তার পর সব শেষ মেঘার মাথাটি একদিকে ঝুলে পড়লো তারই অবগুন্ঠন শাড়ির সাথে। সব নিশ্চিত করে মধু বেরিয়ে এলো বীরের বেশে।

আনন্দের সাথে বাড়ি ফিরে এলো মধু, মধুর বাবা বললেন এই ঝড়ে কোথা থেকে এলি, এমন সময় কেউ আসে, ঝড় থামলে আসবি বাবা। মধুর মা বললো আয় তাড়াতাড়ি উঠে আয় কল থেকে পা ধুয়ে, কাপড় পাল্টা নয় ঠান্ডা লেগে যাবে।  এবার তোকে একটা বিয়ে দিয়ে দিবো বয়স তো অনেক হলো। মধু এসব শুনতে শুনতে কলতলা গেলো হাত পা ধুতে। এমন সময় ঝড়ের তান্ডব আরো বেড়ে গেলো। কলের পাড়ে দাড়িয়ে থাকা শতবর্ষি আমগাছের সবচেয়ে বড় ডালটি ভেংগে পড়লো মধুর উপরে, শুধুমাত্র একবার ও মা বলে উঠলো তার পরেই সব চুপ।

ঝড় থেমে গেছে সন্ধা জেঁকে বসেছে চারিদিকে। মধুর মা-বাবা হাত পা ছুড়ে আল্লাহকে দোষারোপ করতে লাগলো ছেলের লাশ সামনে নিয়ে, আমাদের একমাত্র ছেলেকে ছিনিয়ে নিলে ওমন ছেলে কার ভাগ্যে জোটে, আল্লাহ তুমি এইটা কেমনে করতে পারলে। পাড়া প্রতিবেশিরা শান্তনা দিতে দিতে বললো আহা মধু কতো ভালো ছিলো।

ওদিকে ঝড়ের পরেও জামালুদ্দিন আর কোনোদিন ফিরে আসেনাই, নদী তার উদার বক্ষে তাকেও টেনে নিয়েছে হয়তো এজন্যই যাতে ঘরে ফিরে তাকে দেখতে না হয় প্রীয়তমা বৌ টাকে।

গ্রামে তখন চলছে মধুর জানাজা, আর মেঘার জন্য ধিক্কার। কুলহারা মেয়ে নববঁধু মেঘা অপয়া হয়ে মারা গেলো! আত্নহত্যা করেছে! ছি ছি কি কলঙ্ক গ্রামে, তাই তার দাফন কাফন হবেনা। শেষমেশ এলাকার মনু পাগলা আর তার একমাত্র ভাতিজা কাশেম মিয়া সাদা কাপড়ে পেচিয়ে মেঘার লাশ নিয়ে গেলো ঝড়ের পরের শান্ত পশুর নদীতে। নদীবক্ষের উদারতায় হারিয়ে গেলো মেঘার ধর্ষিত দেহ। এখানেই হারিয়ে গেছে মেঘার প্রীয় জামালুদ্দিন।
Writer: Md. Abidur Rahman,
Institute of Business Administration- DU)