Thursday, November 24, 2022

গল্পঃ নিশাচর। (Horor Short Story)

টাইপ- অনুগল্প।

মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো শিশিরের। কেমন যেনো একটা খস খস আওয়াজ হচ্ছে পাশের রুমে। শিশির উঠে বসে বিছানায়। সে ভাবে পাশের রুমে থাকা তার ভাইয়া ভাবি সম্ভবত উঠে কোনো কাজ করছেন। এমন সময় তার মনে পড়ে ভাইয়া ভাবি তো নেই। তারা সবাই তো বেড়াতে গেছেন দুইদিন পরে আসবেন। এই বাসায় তারা সম্প্রতি উঠেছে। চার তলার উপরে সিমসাম একটা ফ্লাট।

তো যাই হোক, শিশির ভাবলো উঠে দেখে আসি কিসে শব্দ করছে। শিশির হাতড়িয়ে তার মোবাইল টা খুঁজে। তার পর মোবাইল টা নিয়ে নিজের রুমের দরজা খু


লে তার ভাইয়া ভাবির রুমে যেয়ে আলো জ্বালতেই দেখে একটা বৃদ্ধ কঙ্কালসার মানুষ বসে আছে, দেখতে খুবই ভয়ানক। চোখ দুটি জ্বলছে লাল টকটকে হয়ে, লোকটি কঙ্কালসার হলেও তার গলার কাছ টায় কাটা সেখান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। শিশির কিছু ভেবে উঠার আগেই লোকটি শিশিরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। শিশির ভয়ে জ্ঞান হারানোর উপক্রম সে তাড়াতাড়ি তার নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। আর ভাবে কি হচ্ছে এসব স্বপ্ন দেখছে না তো। 

শিশির তার রুমের লাইট জ্বালাতে যায়। কিন্তু লাইট জ্বলছেনা। অথচ ফ্যান চলছে ঠিকই। শিশিরের রুমের সাথে একটা ব্যালকনি আছে। হঠাৎ সেদিকে নজর যায় শিশিরের। শিশির দেখতে পায় একটা লোমস শরীরের গরিলার মতো কেউ দাঁড়িয়ে আছে। শিশিরের দিকে লোমস শরীরের জীবটি তাকিয়ে হেসে দেয়। শিশির দেখতে পায় জীবটি আসলে ব্যালকনিতে নয় বরং সে ব্যালকনি সমান উচু। চার তলা বাসার নিচে থেকেই হয়তো দাঁড়িয়ে আছে। 

সে দিকে তাকিয়ে শিশিরের সারা শরীর যেনো গুলিয়ে যায়। ধপাস করে নিচে বসে পড়ে, হঠাৎ দেখতে পায় খাটের নিচে একটা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটার চোখ গুলাও লাল হয়ে আছে। আর তার গালের পাশে বিশাল একটা গর্ত। নিকষকালো অন্ধকারেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সব কিছু। শিশির জ্ঞান হারায়। 

পরের দিন সকালে শিশিরের জ্ঞান ফিরে আসে নিজে থেকেই। তার ভাইয়া ভাবি তখনও আসেনাই। শিশির ভাবে এখন দিনের বেলা, রাতে কি সব স্বপ্ন দেখলাম। কারন শিশির অনেক সাহসী এ কথা সত্য। শিশির হাত মুখ ধুতে যায়। ওয়াশরুমের আয়নায় নিজেকে দেখতে থাকে। তখনই শিশিরের চোখের সামনে আয়নার ভেতরে কালকের সেই মেয়েটার ছবি দেখা যায়। শিশির যেই কিনা থুথু ফেলতে যায় বেসিনে সেই আয়না থেকে মেয়েটার একটা হাত বেরিয়ে আসে। শিশিরের মুখে প্রবল জোরে একটা থাপ্পড় দেয় মেয়েটা। শিশির প্রচন্ড ভয় পেয়ে চলে আসে আর কিচেন থেকে হাত মুখ ধুয়ে নেয়।

এখন শিশির আকাশ পাতাল ভাবতে শুরু করে। সে ভাবে এই ঘরে অশরীরী আত্মা আছে, কিন্তু কিভাবে আছে। কেনো আছে। কারন শিশির জানে যে এই সকল আত্মারা হয় কোনো প্রয়োজনে অথবা কোনো সুযোগ পেলেই থাকে। হয় তাদের প্রয়োজন পূর্ণ করে দিলে অথবা তাদের থাকার সুযোগ নষ্ট করে দিলে তারা থাকতে পারেনা। 

শিশির দিনের বেলাতে প্রতিটা রুম খুঁজতে থাকে। শেষ পর্যন্ত কিছুই পায়না। তখন সে অন্যান্য ফ্লাটে সবাইকে জিজ্ঞাসা করে, কিন্তু সবাই বলে তোমার দেখার ভুল। আর সকলের কাছে জিজ্ঞাসা করে শিশির বুঝে যায় তাদের ফ্লাটের ভাড়া মাত্র হাফ অন্যান্য ফ্লাট থেকে।। শিশির বুঝে যায় যে শুধুমাত্র এই ফ্লাটেই সমস্যা আর এ জন্যই ভাড়া কম। কারন কেউ ই এই ফ্লাটে এসে থাকতে পারেনা। 

শিশির বাড়ির দারোয়ানের কাছে তাদের ফ্লাট নিয়ে জিজ্ঞাসা করে। 

দারোয়ান বলে, "তেমন কিছুই জানিনা। শুধু আজ থেকে ১১ বছর আগে ঐ ফ্লাট থেকে এক ভাড়াটিয়া পরিবার সবাই উধাও হয়ে যায়। তাদের লাশও পাওয়া যায়না যে নিশ্চিত হবে তারা নিহত। অথবা তারা কোথাও গেছে কিনা সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী সেটাও পাওয়া যায়না। অবশ্য আমাদের মালিক অনেক টাকা পয়সা খরচ করে ব্যাপারটা নিয়ে আর অগ্রসর হতে দেননি পুলিশ কে, কারন তাতে অন্যান্য ফ্লাটের সদস্য হারাতে হতো হয়তোবা।"

শিশিরের মনে খটকা লাগে। সে তার এক PBI এ চাকরি করা বন্ধুকে সব খুলে বলে। তার বন্ধু খুবই এক্সাইটেড ছিলো। ঐ দিনই সে শিশিরদের বাসায় চলে আসে। আর শিশিরের বাসার সব যায়গায় তন্নতন্ন করে খুঁজে। কিন্তু কিছুই পায়না। এমন সময় তাদের নজরে পড়ে আলমারির রাখার যায়গাটা। কারন যেখানে আলমারির রাখা সেই দেওয়াল টা অনেক উচু। দেখেই মনে হচ্ছে খুবই ODD, অথচ কোনো কারন ছাড়া এরকম দেয়াল উঁচু রাখার কোনো প্রয়োজন ছিলোনা। তখন শিশিরের ঐ বন্ধু তার ডিপার্টমেন্ট এ জানায়। পিবিআই তাদের টিম নিয়ে এসে হাজির। তারা দেওয়ালের ঐ অংশ ভেঙে সবাই তাজ্জব হয়ে যায়৷ কারন সেখানে তিনটি কঙ্কাল। একজন সিনিয়র অফিসার দেখেই বললেই এখানে একটি বৃদ্ধ, একটি যুবতি মেয়ে আর একটি যুবক ছেলের কঙ্কাল। 

বাড়ির মালিক ও সব শুনে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো। কিন্তু পিবিআই কর্মকর্তা গন তাকে গ্রেফতার করে নিলেন। 

পরে জিজ্ঞাসাবাদে বাড়ির মালিক সবকিছুই স্বীকার করে নিলেন যে এই খুনে তার হাত ছিলো। 

তবে সেদিনের পর থেকে শিশিরের সাথে বা আর কারো সাথে ঐ ফ্লাটে কোনো অস্বাভাবিক কিছুই ঘটেনাই

No comments:

Post a Comment