অনুগল্প- ভাবনা
সবকিছুই ঠিক ঠাক চলছিলো। রাত ২ টা, শুধু ঘড়ির কাটাটা টিক টিক করে বেসুরো ভাবে বেজে রাতের নিস্তদ্ধতার ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিলো। নিশি তাই উঠে যায় বিছানা ছেড়ে। আর একটা টেবিল নিয়ে তার উপরে উঠে ঘড়ির কাটাটা খুলে ফেলে। এবার নিশি শান্তিতে ঘুমানোর ট্রাই করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর নিশির কানের মাঝে ঝিম ঝিম করতে লাগলো। এমন সব চিন্তা তার মাথায় ভর করতে লাগলো যা সে আগে কখনোই ভাবেনাই।
![]() |
ভাবনা প্রাচীর |
নিশির কাছে সব কিছুই একটু নতুন নতুন লাগছিলো। শেষ পর্যন্ত সে উপলদ্ধি করতে পারলো যে এই পৃথিবীতে তার কোনো কাজ নেই তাই এত সব ভাবনা তার মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। আজ তার নিজের কাছেই নিজের বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পাচ্ছেনা সে। তাই আজ নতুন করে ঘড়ির কাটার শব্দ ও তার কাছে বেসুরো লাগছিলো। জগতের সব কিছুই আজ তার কাছে অসহ্য লাগছিলো।
নিশি বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে যায়। সেখানে যেয়ে সে আরো অবাক হয়। কারন দেয়ালের মাকড়শাটা নিশিকে দেখে হাসছিলো। নিশি ভয়ে ভয়ে বলে, তুমি আমাকে দেখে হাসো কেনো। মাকড়শা টা বলে, "দেখো নিশি আমার ও কোনো কাজ নেই, সারা দিন তোমার ওয়াশরুমে বসে থেকে মশা ধরে ধরে খাই। অথচ তুমি শুধু বসেই থাকো। তুমি যদি আমাকে নিয়ে ও ভাবতে তাহলে আমাকে মশা খেয়ে থাকতে হতোনা। তোমার ঝাটার বাড়িতে আমার স্থান হতো মৃত্যুকুপে। অথচ তুমি এতই অলস যে ওয়াশরুমে বসে থাকো আর আমি মশা খেতে খেতে তোমায় দেখে হাসি।"
নিশির চিন্তাগুলো ঝট করে খুলে যায়, নিশি সাথে সাথে হেসে বলে শোন মাকড়শা, তুই যেমন জাল পেতে মশা ধরে খেয়ে বেঁচে থাকিস। আমি এখন থেকে মানুষ ধরে ধরে খেয়ে বেঁচে থাকবো।
একথা শুনা মাত্রই মাকড়শা সাথে সাথে হাসি বন্ধ করে বাথরুমের দেয়াল বেয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো। নিশি বললো কই যাও তুমি? এবার মাকড়শা বলে আমি এখানে আর থাকতে পারবোনা। কারন আমি তো তোমাকে দেখেই আমার বিনোদন নিতাম এখন থেকে আর বিনোদন নিতে পারবোনা। তাই আমার কাছেও সব কিছু অসহ্য হতে থাকবে।
নিশি এবার হাসতে থাকে। এখন আর কোনো কিছুই অসহ্য লাগছেনা। নিশি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে ঘড়ির কাটাটা আবার লাগিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে। এখন সব কিছুই ভালো লাগছে তার কাছে।
Writer: Md. Abidur Rahman, B.S.S (Economics- Govt. MM College), MBA (IBA- DU)
No comments:
Post a Comment